Site icon দৈনিক দেশের সংবাদ deshersangbad.com

শুরু হলো মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসব।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উপলক্ষে জহির রায়হান ফিল্ম ইন্সটিটিউট ও সরকারি গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট যৌথ ভাবে আজ আয়োজন করেছে মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসব। দিনব্যাপী উৎসবে প্রদর্শীত হয়েছে বাংলাদেশে নির্মিত বাংলা, চাকমা, মারমা ও গারো ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র। প্রদর্শীত হয়েছে বিভায়ন চাকমার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাঁধা। মারমা ভাষায় নির্মিত ডা. মং উষা থোয়াই প্রযোজিত ও প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ গিরিকন্যা’। শরিফুল ইসলাম পলাশ পরিচালিত গারো ভাষায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘নিকমিলমাল’ এবং সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’।
প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জহির রায়হান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের পরিচালক( একাডেমিক) শারমিনা চৌধুরী।  আলোচনা পর্বে বিশেষ সন্মাননা প্রদান করা হয় মারমা ভাষায় নির্মিত দেশের প্রথম চলচ্চিত্র গিরিকন্যা (তংস্মাসে) প্রযোজক মং উষা থোয়াইকে। উল্লেখ্য যে, এ চলচ্চিত্রটি বাংলা ভাষার বাইরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় নির্মিত এবং সেন্সর সনদপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। আলোচনা পর্বে চিকিৎসক মং উষা থোয়াই বলেন, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের এগারোটি ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর মারমা সম্প্রদায় হলো দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। দীর্ঘকাল ধরে তারা পাহাড়ে বসবাস করে আসছে কিন্তু সময়ের সাথে পাহাড়ের যে পরিবর্তন তা আমি প্রত্যক্ষ করে আসছি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখেছি তাদের দু:খ দুর্দশা। দেখেছি প্রাণ প্রকৃতি কিভাবে বিপন্ন হচ্ছে। এ বিষয়কে সামনে রেখে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম। পরবর্তীতে এটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষের সামনে হাজির করেছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আলী আকবর খান বলেন,‘ সরকারি গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট  এবং জহির রায়হান ফিল্ম ইন্সটিটিউট  যৌথ ভাবে মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয় । এ ধরণের প্রদর্শনী ছাত্রছাত্রী তথা নতুন প্রজন্মকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাই কমিশন পরিচালিত ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক জনাব মৃন্ময় চক্রবর্তী বলেন,‘ ‘জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সে সময় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়াতে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করেছিলেন। এই মহান চলচ্চিত্র নির্মাতার নামে একটি ফিল্ম ইন্সটিটিউট হয়েছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান ফিল্ম টেকনোলজি বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে থাকে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের রয়েছে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসকে স্মরণ করে আপনারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছেন তা সত্যি আনন্দের বিষয়। পৃথিবীর এমন অনেক ভাষা আছে যা টিকে থাকতে পারছে না। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ভাষার ব্যবহার হলে ভাষাগুলো টিকে থাকতে পারে বলে আমি মনে করি।
জহির রায়হান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সভাপতি নাট্যজন শংকর সাওজাল বলেন, প্রতিবছর আমরা ভাষা শহিদের স্মরণে নানা আয়োজন করে থাকি। বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের জাতীয় ভাষা বাংলা হলেও আমাদের ভ‚খন্ডে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব মাতৃভাষা। আমরা মাতুভাষার চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকেও শ্রদ্ধা জানাতে চাই। প্রতিবছর ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর ভাষার মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে ভাষাভিত্তিক যে বৈচিত্র রয়েছে তা অদূর ভবিষ্যতে ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে।
এক বিবৃতিতে জহির রায়হান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক নির্মাতা প্রদীপ ঘোষ বলেন, বাংলা ভাষার জন্য এদেশের অগ্নি সন্তানদের প্রাণ বলিদানের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আমাদের অন্যসকল ভাষার প্রতি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। এ বছর মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসবের শুরু হতে যাচ্ছে ছোট পরিসরে। আমরা চেষ্ঠা করবো প্রতিবছর এ উৎসবকে বড় পরিসরে সাজাতে। উৎসাহিত করবো পাহাড়ে ও সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করতে।

সভাপতিত্ব করেন সরকারি গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌঃ নীহার রঞ্জন দাস।

Exit mobile version