সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ৭৪৫ কোটি ডলার চায়

অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সরবরাহ এবং উৎপাদনে বড় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের রাজস্ব আয় কমেছে। বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা লেগেছে। খাদ্য ঘাটতি বেড়েছে।

প্রবাস আয়, রপ্তানি আয়ে কোনো সুখবর নেই। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলারসংকট বাড়ছে। ফলে গত কয়েক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) ধারাবাহিকভাবে কমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাচ্ছে।

সর্বশেষ গত অক্টোবরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) চেয়ারম্যান জিন লিকুনকে চিঠি লিখে বাজেট সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ডলার চেয়েছেন।

 

বাজেট সহায়তার সুবিধা হলো, সরকার যেকোনো খাতে এই অর্থ খরচ করতে পারে। কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এই অর্থ খরচ করতে হয় না। সরকারি হিসাবে নগদ ডলার ঢোকে। তবে বাজেট সহায়তা দেওয়ার সময় বিভিন্ন খাতে সংস্কারসহ উন্নয়ন সহযোগীরা নানা শর্ত দেয়।

যোগাযোগ করা হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। সামনে আরো অনেক ঋণ চুক্তি হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারসংকটসহ সব ধরনের সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি। ’

অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে যা আছে

এআইআইবি প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সরবরাহ এবং উৎপাদনে বড় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের রাজস্ব আয় কমেছে। বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা লেগেছে। খাদ্য ঘাটতি বেড়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি পরিস্থিতি চিঠিতে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, করোনাভাইরাসের পর চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি, খাদ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস, সার, ভোজ্য তেল, মূলধনী পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ অত্যাবশ্যক বিভিন্ন আমদানি পণ্যের দাম অস্থিতিশীল। ফলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। যদিও আমাদের রপ্তানি খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে, কিন্তু আমদানি পণ্যের বাড়তি চাহিদার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ফলে লেনদেনের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। ভারসাম্যহীন বিওপি এবং আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে।

এসব বিষয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী প্রকল্পের বাইরে বাজেট সহায়তা, রাজস্ব উদ্বৃত্ত তৈরি, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ কোটি ডলার সহায়তা চান।

সহযোগীদের কাছে সহায়তা

সংকট মোকাবেলায় সরকার গত পাঁচ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মতো বড় উন্নয়ন সহযোগীর কাছে বাজেট সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বাজেট সহায়তা বাবদ ৭৪৫ কোটি ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

গত ২৪ জুলাই ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বাজেট সহায়তা ও অবকাঠামো খাতের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি পাঠায় সরকার। ঋণ নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা ছাড়ার আগে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে গেছে। ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারিতে।

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেতে গত জুন মাসে চিঠি দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। চলতি মাসের ১২ তারিখ ঢাকা সফর করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। সফরকালে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এর আগে গত মে মাসে এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এডিবি সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। এখন চলছে দর-কষাকষি। আগামী মার্চ মাসে এডিবির বোর্ডসভায় এ ঋণ অনুমোদন হতে পারে।

জাইকার কাছেও ৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে সরকার। গত জুলাই মাসে জাইকার প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকা ঢাকা সফর করেন। সফরকালে তিনি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তখন অর্থমন্ত্রী জাইকার কাছে বাজেট সহায়তা চান।

Exit mobile version