সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যে চীনে ‘করোনা আক্রান্ত ২৫ কোটি’

বিধিনিষেধ শিথিলের পর চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে বলে খবর প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে চীনে ২৫ কোটি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার এক দিনেই ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয় ব্লুমবার্গ ও ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে।

তবে সিএনএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের (এনএইচসি) যে বৈঠকের নথির ভিত্তিতে এ দাবি করা হচ্ছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করেছে ব্লুমবার্গ ও ফিন্যানশিয়াল টাইমস। এই নথির সত্যতা সম্পর্কে সিএনএন নিশ্চিত হতে পারেনি, এ বিষয়ে চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো ভাষ্যও পাওয়া যায়নি।

ব্লুমবার্গ ও ফিন্যানশিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে চীনে ২৫ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এই প্রতিবেদনটি সঠিক হলে চীনের ১৪০ কোটি জনগণের প্রায় ১৮ শতাংশই চলতি মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে সিএনএন এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

সিএনএন জানায়, চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের (এনএইচসি) কর্মকর্তারা একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তুর কপি দাবি করা একটি নথি দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই নথিতে বলা হয়, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে চীনে করোনায় আক্রান্তদের সম্ভাব্য সংখ্যা হতে পারে ২৫ কোটি, যাদের মধ্যে কেবল ২০ ডিসেম্বর শনাক্ত হন ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যে চীনে ‘করোনা আক্রান্ত ২৫ কোটি’

অবশ্য সরকারিভাবে ২০ ডিসেম্বর চীনে ৩ হাজার ৪৯ জন করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয়েছে। এনএইচসির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় চলতি মাসে মারা গেছেন আটজন।

ফিন্যানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক সুন ইয়াং রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চীনের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

তবে এনএইচসির পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নির্ধারণ এখন কঠিন জানিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কারণ চীনে করোনার পিসিআর পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি উপসর্গবিহীন করোনা রোগীদের তথ্য নেয়া বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

চীনের লোকজনকে বর্তমানে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এমনকি ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই।

এর আগে গত শুক্রবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ শানডংয়ের কিংদাও শহরে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় এক কর্মকর্তা, তবে চীনের সরকারি তথ্যে এ সংখ্যা দেখা যায়নি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের বিভিন্ন শহরে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করার পর থেকে দেশটিতে সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে যাচ্ছে, সমাধিস্থলেও বাড়ছে মৃতদেহের সংখ্যা।

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত একটি সংবাদমাধ্যমকে কিংদাও শহরে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান বো তাও জানান, শহরটিতে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের শেষে এক কোটি জনসংখ্যার শহরটিতে সংক্রমণের হার আরও ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।

এ খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হলেও শনিবার কিংদাও শহরের করোনার সংক্রমণের সংখ্যায় পরিবর্তন আনা হয়।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানায়, শনিবার দেশটিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত ৪ হাজার ১০৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ সময় করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। কিংদাও শহরে স্থানীয়ভাবে ৩১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুক্রবার দেয়া একটি পোস্টে চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংজি প্রদেশের সরকার জানায়, মার্চ নাগাদ শহরটির ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

Exit mobile version