শীতের শুরুতে জমজমাট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। যেদিকে থাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পাঁচ শতাধিক হোটেলের প্রায় ৭৫ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। শহরে যানজট আর জনদূর্ভোগ বেড়েছে। এতেই বোঝাযায় আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। সাগরের গর্জন খুব একটা নেই।
শান্ত সাগর। তবে ছন্দময় ঢেউ পর্যটকদের মন ওতাল পাতাল করে দিচ্ছে। গত দুই-সপ্তাহ ধরে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বইছে। সহনীয় পর্যায়ে পড়তে শুরু করেছে শীত। সৈকত তীরের ঝুপড়ি দোকানগুলো উচ্ছেদ হওয়ায় পর্যটক দাঁড়ানোর জায়গা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভরপুর পর্যটক। পর্যটকেরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। নানা বয়সীরা পর্যটকেরা বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন। কেউ আবার টায়ার টিউবে গা ভাসানো ও নোনা জলে গোসলে নেমেছেন। প্রিয়জনেরা এসব দৃশ্য মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করছেন। অনেককেই হিমছড়ি ও দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসাইলিংয়েও সমুদ্র দর্শন করতে দেখা গেছে।
শহরের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে পর্যটকেরা ইনানী, পাটোয়ারটেক পাথুরে সৈকত ও টেকনাফের দিকে ছুটছে। এ ছাড়া সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালী, রামুর বৌদ্ধ পল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ও নিভৃতে নিসর্গে ছুটে যাচ্ছেন।
টুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মী ও লাইফ গার্ড সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক সজাগ আছেন খাগড়াছড়ি থেকে আসা মোঃ ইসমাইল বলেন,পাহাড়ের গা ঘেষে আমাদের বেড়ে উঠা। তাই পাহাড় আর তেমন ভালো লাগেনা। সাগরের বিশালতা দেখে আমি অভিভূত। টাঙ্গাইলের শফিপুরের ব্যবসায়ী আরমান চৌধুরী সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন কক্সবাজারে।
আরেক ব্যবসায়ী নুরুল আজিম বাড়ি ফেনী তারা বলেন, ‘মনে করেছিলাম সৈকতে ভিড় কম হবে। কিন্তু কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তারপরও বাচ্চারা বেশ আনন্দ করছে। সৈকত ছাড়াও এখানকার পাহাড় প্রকৃতিও দেখার মতো।’
বিচ কর্মীরা বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৫০-৬০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। শহরের পাশাপাশি পর্যটকেরা ইনানী, হিমছড়ি ও পাটোয়ারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে।’
কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে ৫০০ হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্টে অন্তত দুই লাখ পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুবিধা রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। কিন্তু কয়েক দিন আগে বৈরী আবহাওয়া ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় পর্যটক কম ছিল। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন উপলক্ষে আশানুরূপ পর্যটক এসেছে।’
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতেই পর্যটকের চাপ একটু বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় নিয়ে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, দিন যতই যাচ্ছে পর্যটকের আনাগোনা ততই বৃদ্ধি পাবে।জেলার ২৫ টি স্পটে ট্যুরিষ্ট পুলিশ দিনরাত পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকদের নেই কোন দুঃচিন্তা।
বিচ ম্যানেজম্যন্ট কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়া ও র্যাব পুলিশ এবং বিভিন্ন সংস্থার লোকজন কাজ করছে।