প্রেস বিজ্ঞপ্তি
দীর্ঘ প্রায় ২০ (বিশ) বছর ধরে পলাতক থাকা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামী ও দুর্র্ধর্ষ খুনি মোঃ মনজুর আলম (৫৬) কে চট্টগ্রামের নতুন ব্রীজ এলাকা হতে আটক করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম
১। বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। গত ২০০৩ইং সালের দিকে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের এলাকা থেকে উৎপাদিত মাছ নৌকায় করে চাক্তাই নতুন সেতুর মৎস্য ঘাট বাজারে নিয়ে আসতেন এবং বিভিন্ন ধরনের মাছ পাইকারি দরে বিক্রয় করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগী ভিকটিম আব্দুল জব্বার ও তার চাচাতো ভাই শওকত ও জয়নাল গত ০৫ ডিসেম্বর ২০০৩খ্রি. তারিখে কুতুবদিয়ার ধুরুংছ এলাকার মাছের ঘের থেকে বিভিন্ন জাতের ৫২ টন শুঁটকি কিনে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চাক্তাই নতুন সেতু মৎস্য ঘাট বাজারে পাঠায় এবং সন্ধ্যায় তারা চাক্তাই নতুন সেতু মৎস্য ঘাটে এসে মাছ বিক্রি করেন। মাছের গুদামের মালিক ওই দিন টাকা না দিলে পরের দিন টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
৩। ভুক্তভোগী ভিকটিম আব্দুল জব্বার এবং তার অপরাপর আত্মীয়রা পরের দিন টাকা নিয়ে কুতুবদিয়ায় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে কর্ণফুলী নদীতে একটি নৌকা দেখতে পায় এবং ঐ নৌকা থেকে দুস্কৃতিকারী/ডাকাত দলের সদস্য কর্তৃক তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয়। উল্লেখ্য, উক্ত নৌকায় দুস্কৃতিকারী/ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আসামী মঞ্জুর আলম, তার বাবা ও ভাইসহ অন্যান্যরা সশরীরে উপস্থিত ছিল। ভিকটিম আব্দুল জব্বার তাদের নৌকাটি পতেঙ্গা কয়লার গর্তের দিকে নিয়ে অবস্থান করলে উক্ত নৌকার দুস্কৃতিকারী/ডাকাত দলের সদস্য এসে তাদেরকে ধরে ফেলে ও নৌকা থেকে নাবিককে নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে উক্ত দুস্কৃতিকারী/ডাকাত দলের সদস্যরা ভিকটিম জব্বারসহ অন্যদের অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ধৃত আসামী মঞ্জুর আলম, তার বাবা ও ভাইসহ ভিকটিম আব্দুল জব্বারকে হত্যা করে এবং অন্যদের রক্তাক্ত জখম করে নদীতে ফেলে দেয়। পরদিন স্থানীয় লোকজন নদী হতে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করে।
৪। পরবর্তীতে এ ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ভাই আব্দুর রহিম বাদী হয়ে আসামী মনজুর আলম এবং আরও ৩/৪ জনকে আসামী করে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ০৮(১২)০৩, জিআর ৯৩৩/০৩ তারিখ ০৮ ডিসেম¦র ২০০৩ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩০২/৩৭৯/১০৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল আসামী মনজুর আলম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালীন সময়ে আসামী মনজুর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকে। আসামী দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে আসামীর অনুপস্থিতিতে গত ২৯ জুলাই ২০১৭ ইং তারিখে ব্যবসায়ী আবদুল জব্বারকে হত্যার দায়ে আসামী মনজুর আলমকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।
৫। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে, বর্ণিত আসামী চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজ এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল অদ্য ০৩ মে ২০২৩খি. তারিখ বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ মনজুর আলম(৫৬), পিতা- মৃত নূর আহমেদ, সাং- পুতুলনগরপাড়া, থানা- কুতুবদিয়া, জেলা- কক্সবাজারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাবাসাবাদে আরও জানা যায় যে, আসামী মনজুর আলম ১৯৯১ সাল হতে বর্ণিত হত্যাকান্ডের পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে গার্মেন্টস এ চাকুরী করত। ২০০৬ সালে বর্ণিত হত্যাকান্ডের বিচার চলাকালীন সময়ে আসামী মনজুর জামিন নিয়ে বের হয়ে পুনরায় হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে যায়। সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে তার পূর্বের পেশায় না গিয়ে ছদ্মবেশে ফিশারীঘাট এলাকায় ভ্যানগাড়ি দিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করে।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।