অভিশাপ বড্ড সাংঘাতিক। আপনি ভাবছেন লাগছে না? জমা হচ্ছে। কাউকে ঠকালে, কষ্ট দিলে কিংবা বিশ্বাস ভাঙলে অভিশাপ লাগবে। কারো হক মেরে দিলে, অধিকার করে নিলে কিংবা স্বাধীনতা চুরি করলে রক্ষা পাবেন না। চলতে চলতে একদিন ধপাস করে পড়ে যাবেন। অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে, সমাজে লাম্পট্য ছড়িয়ে কিংবা কাউকে অপবাদে জড়িয়ে ভাবছেন বেঁচে যাবেন? দুর্বলকে চেপে রেখে, অধীনকে দাস বানিয়ে কিংবা কারো চোখের পানি নিয়ে শান্তিতে থাকা যায়? এতো সোজা নয়। বাড়তে বাড়তে যখন সীমালঙ্ঘন করবেন তখন নাকানিচুবানি খেতেই হবে। আপনাকে ছাড় দেওয়া হয় কিন্তু ছেড়ে দেওয়া হয় না।
কারো এক পয়সা অন্যায়ভাবে গ্রাস করলে, কাউকে অহেতুক অসম্মানিত করলে কিংবা কারো ন্যায্য পাওনা হরণ করলে প্রকৃতি আপনাকে সাধুর বেশে বরণ করবে না। যেকোনো দুঃখে মানুষ যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অভিশাপ দেয়- তা যদি যৌক্তিক হয় তবে আপনাকে ফল ভোগ করতেই হবে। সামনা-সামনি মানুষ আপনার ভয়ে কিছু নাই বলতে পারে কিন্তু আপনার নামে পেছনে যে বাক্য টানে তা যদি শুনতেন তবে স্বেচ্ছামৃত্যুকে নিজের জন্য সম্মানজনক মনে করতেন। পাপের শাস্তি একদিন পেতেই হবে। সব ফলাফল পরকালের জন্য নয় বরং দুনিয়াতেও বহুকিছু সয়ে যেতে হবে। দুর্দিন সামলাতে পারবেন তো? যা ফেলে যাচ্ছেন অতীতে তার অনেক কিছুই ভবিষ্যৎ আপনাকে সুদ-আসলে ফিরিয়ে দেবে। ভরিয়ে দেবে যন্ত্রণার ঝাঁপি।
জীবনে আর যত পাপ করেন তবু মানুষকে ঠকাবেন না। যেখানে মানুষের দীর্ঘশ্বাস নামে সে কাজে নিজেকে জড়াবেন না। যাতে মানুষের হক থাকে তা গ্রাস করবেন না। ক্ষমতা কয়দিনের? যারা হারিয়ে গেছে পৃথিবীর আঙিনা থেকে তারা কবরে কী নিয়ে যেতে পেরেছে? দুনিয়ার কোন সম্পদ তাদের কাছে ও কাজে এসেছে? অথচ তাদের সম্পদেও মানুষের রক্ত ছিল! তাদের খাদ্যে গরিবের রিযিক জুড়ে ছিল। অন্যায়ভাবেদখলকৃত কোনো সম্পদ কাজে আসেনি বরং বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। একটা কচ্ছপের চেয়েও কম আয়ু মানুষের। অথচ মানুষ কত গতি নিয়ে অন্যায় করে, মানুষকে ঠকায় এবং আঘাত করে। মানুষ যদি তার পরিণাম ভাবতো তবে কারো দীর্ঘশ্বাসে নিজেকে জড়াতে পারতো না। কখনোই কারো বিশ্বাস ভাঙতো না।
এই জীবনে কারো উপকার করতে না পারেন তবু কারো অভিশাপের কারণ হবেন না। কারো ক্ষতি করলে ক্ষতিগ্রস্ত না চাইতেও অভিশাপ অবতীর্ণ হবে। কেননা কোন অপরাধ সংগঠনের কারণে কেবল ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং পারিপার্শ্বিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৃথিবীতে কেবল মানুষ বসবাস করে না। প্রাণী-পরিবেশের আবাসও এই ভূমি! অন্যান্য প্রাণীও অভিশাপ দিতে জানে। মানুষের অভিশাপের আগে মালিক জন্তুদেরদীর্ঘশ্বাসশোনেন। কাজেই মাটিতে সাবধানে পা ফেলতে হবে। কারো অশান্তি সৃষ্টি করে রাতে লাইটিং করা যাবে না এবং যত্রতত্র উচ্চশব্দ ব্যবহারের তো প্রশ্নই আসে না। যারা মানুষের মত মানুষ, যারা ধর্ম বোঝে এবং মানে তারা পিঁপড়ের মত ক্ষুদ্র সৃষ্টির ক্ষতির কারণ নয়। বিবেক যা করতে বারণ করে তা মানা উচিত। শোনা উচিত শাস্ত্রের কথা।
আপনার জন্য কারো চোখের পানি ঝরলে, কারো মন খারাপ করলে কিংবা আপনার কারণে কেউ অপমানিত হলে সে দায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে এবং কৈফিয়ত দিতেই হবে। মানুষ হয়ত আপনার সাথে শক্তিতে পারে না, ভয়ে আপনাকে কেউ কিছু বলে না কিন্তু একজন আছেন যিনি অসীম শক্তির মালিক। কোনো অন্যায় করলে তিনি আপনাকে ভোগাবেন। কেউ বদদোয়া দিলে তিনি আপনাকে পোড়াবেন। যিনি প্রশান্তি কেড়ে নিতে পারেন, যিনি বরকত উঠিয়ে দিতে পারেন- তাঁর ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে কারো প্রশ্ন নাই। যা করেন, যা বলেন- ভাববেন। মানুষ আপনাকে বদদোয়া করে, আপনার অমঙ্গল কামনা করে এমন কিছু করলে মুক্তি নাই। কারো অধিকার হরণ করলে তিনি ছাড়া কেউ আপনাকে ক্ষমা করবে এমন কারো শক্তি নাই।
রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com