ওয়াও এত সুন্দর পার্ক! চারপাশে এত সুন্দর পরিবেশ…. এমন সুন্দর জায়গা আছে আমাকে আগে বলেননি কেন?”
__” বলার সুযোগ আর হল কোথায়? সারাক্ষণ তো দুজনের ঝগড়া করে গেলাম….”
__” আচ্ছা জান আজকে থেকে আর ঝগড়া করবো না।”
__” সত্তি আপনি আমার সাথে ঝগড়া করবেন না?”
তারপর দুজনে বেশ কিছুক্ষণ পার্কে ঘোরাঘুরি শেষে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। অনেকদিন হলো আমার গিটারটা বাক্সবন্দী হয়ে আছে। আমার অনেক সাধের গিটার,,অনেক শখ করে গিটার কিনেছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার কারণে গিটার বাজানোর সময় পাইনা। আজকে গিটারটা বাক্স থেকে বের করে ছাদে নিয়ে গেলাম। ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে গিটারের সুর উঠালাম……..
__” আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে, তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে যদি জানতে চাও তবে ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও……….”
গানটা শেষ করতেই হঠাৎ পিছন থেকে হাত তালির শব্দ আমার কানে ভেসে উঠল সাথে কারো আওয়াজ…..
__” বাহ্ আপনি তো বেশ সুন্দর গান গাইতে পারেন।”(নাহিদা)
__” ধন্যবাদ প্রশংসা করার জন্য। আসলে গান গাও আমার পেশা না তবে গান গাইতে আমার ভালো লাগে তাই শখ করে গিটার কিনেছিলাম। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে গান গাওয়ার সময় পাইনা।”
__” এখন থেকে রোজ আমাকে গান শোনাতে হবে….”
__” আপনার গানের সুর শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি তাই….”
__” হুম,,,, আপনার গানের সুর সত্যি অনেক সুন্দর….”
__” যাক কেউ একজন আমার সুরের কদর দিল।”
__” হুম….. আচ্ছা আরেকটা গান শোনান না প্লিজ!!”
__” আচ্ছা বলেন কোন গান শুনতে চান?”
__” যে কোন একটা রোমান্টিক সং….”
__” ওকে….. কোন গানটা গাওয়া যায়……কোন গানটা পাওয়া যায়……. হ্যাঁ পাইছি….
“ওই তোর মায়াবী চোখ কাজল হয়ে যাব…. আরে উড়লে হাওয়ায় তোর আঁচল হয়ে যাব। আমার হয়ে যা তুই আমি তোর হয়ে যাব…….”
গানটা শেষ করতে না করতেই আবার হাততালি।
__” বাহ্ বাহ্…… আপনি এত সুন্দর গান কি করে করেন?”
__” আপনার তো গায়ক হওয়া উচিত।”
__” আমি গায়ক হতে চাই না যেমন আছি ভালো আছি। গায়ক হলে আমি সেলিব্রেটি হয়ে যাব তখন আমার অহংকার বেড়ে যাবে। আর আমি চাইনা অহংকারী হতে চাই যেমন আছি ভালো আছি।”
__” বাহ্ খুব ভালো যুক্তি তো…”
__” ভালো তো হবেই। আচ্ছা আমার কথা বাদ দেন আপনি আমাদের বাসায় আসার পর থেকে তো আপনার সাথে ভাল করে কথাই হলো না। এবার আপনার কথা বলেন…..”
__” তেমন কিছু না আপনার জীবন কাহিনী কয়টা প্রেম করছেন! আপনার পছন্দের মানুষ কে কে! আপনি কাউকে পছন্দ করেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি………”
__” এসব আবার বলা লাগে নাকি?”
__” যদি বলতে না চায় তাহলে দরকার নেই।এমনি বললাম আর কি ভালো লাগে বলবেন না লাগলে নাই….”
__” ছোটবেলা থেকে আমি আর দশটা মেয়ের মতো নয়। মা-বাবার খুব আদরের মেয়ে তো.. মা-বাবা খুব আদরে বড় হয়েছে। সবসময় লেখাপড়া ছাড়া অন্য কিছুতে মনোযোগী হয় নি। প্রেম ভালোবাসা একপ্রকার বলতে পারেন সব সময় এরিয়ে চলেছি….”
__” কেন কেন? প্রেম ভালোবাসা ভালো লাগেনা?”
__” ভালো লাগে কিন্তু আজকালকার যুগে ভালোবাসার যেই মূল্য! ভালবাসলে কষ্ট পেতে হয় তাই কখনো কাউকে ভালবাসিনি।”
__” আচ্ছা আপনাকে এ পর্যন্ত কয়জন প্রপোজ করেছিল?”
__” তা তো ঠিক মনে নাই,,, কারণ আমাকে অনেকেই প্রপোজ করেছে….”
__” আচ্ছা আপনাকে এত জন প্রপোজ করেছে আপনার কাউকে ভাল লাগেনি?”
__” না আমার ভালো লাগেনি।”
__” ভালো না লাগার কোন কারণ?”
__” আমি কারো দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায় নি যাতে তাকে আমার ভালো লাগবে।”
__” ও আচ্ছা…. তো সারা জীবন কি এমনই সিঙ্গেল থাকবেন এমন ইচ্ছা?”
__” দেখি যদি ভালো কাউকে পেয়ে যায় লাইফ লাইন বানাবো।”(বেশ লজ্জা পেয়ে বলল)
__” বাহ্ আপনি লজ্জাও পান?”
__” কেন লজ্জা পাওয়া যাবে না বুঝি!”
এভাবে দুজনকে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম। এরপর দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায় আমাদের মধ্যে আর কোন ঝগড়া হয় না। আমি প্রতিদিন নাহিদাকে নিয়ে কলেজে যায়। কলেজ শেষ হলে আবারও দুজনে একসাথে বাসায় আসি। একদিন কলেজ শেষে বাসায় ফিরছি আবারো নাহিদার চেঁচামেচি…….
__” আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো যাও….”
__” হুম তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো।”
__” না তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে…”
__” এটাই কথা তুমি নিয়ে এসো যাও…”
তারপর আমি রিক্সা থেকে নেমে আইসক্রিম নিয়ে আসলাম। আইস ক্রিম নিয়ে এসে নাহিদার হাতে দিলাম।
__” এই নাও তোমার আইসক্রিম।”
__” আর ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না….”
নাহিদা আইসক্রিম খাচ্ছে আমি চেয়েছি তার খাওয়া দেখছি। আমার চেয়ে থাকা দেখে নাহিদা বলল…
__”দিলে কে না খায়! (আস্তে আস্তে বললাম)
__” আচ্ছা এই নাও আইসক্রিম খাও….”
__” তোমার কম পড়ে যাবে তো।”
__” আরে অসুবিধা নাই অল্প একটু নাও…”
তারপর দুজনে একটা আইসক্রিম ভাগাভাগি করে খেলাম। আমার খুব আনন্দ লাগছে। এই সামান্য কয়দিনে নাহিদের প্রতি আমার বেশ একটা মায়া জমে গেছে। কেন জানি নাহিদাকে আমার আস্তে আস্তে ভালো লাগতো শুরু হয়ে গেছে। কেন জানি না সব সময় নাহিদার আশে পাশে থাকতে খুব ভালো লাগে।
__” নাহিদা একটা কথা বলব?”(আমি)
__” হুম বলো কি বলবে?(নাহিদা)
__” আমি তো……..”(বাকিটা আর বলতে পারলাম না)
আমি যে নাহিদাকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা আমি নিজেও জানিনা। নাহিদা কে আমার ভালোবাসার কথাটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে বাধা দেয়। হঠাৎ করে যদি তাকে ভালোবাসার কথা বলি কিন্তু সে যদি রাজি না হয়? তার সাথে আমার একটা ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে যদি বন্ধুত্ব টা নষ্ট হয়ে যায়! আমি চায়না আমাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাক।
এভাবে দেখতে দেখতে আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেল। এখন আমি নাহিদাকে ছাড়া কিছু ভাবতেও পারিনা। আমার পুরোটা জুড়ে শুধু নাহিদা। নাহিদাকে আমি অনেক ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমি কিছুতেই বলতে পারিনা। আমার খুব ভয় হয়।
__” আবির! বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি তুই কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেছিস। তোর সমস্যাটা কি! কিছু হয়েছে?”(হৃদয়)
__” কই কিছু হয়নি তো…”(আমি)
__” সত্যি কিছু হয়নি?”(হৃদয়)
__” আমার আবার কি হবে?”(আমি)
__” তুই কি ভেবেছিস আমরা কিছুই বুঝিনা?”(হৃদয়)
__” তুই কিসের কথা বলছি বলতো?”(আমি)
__” তুই ভালো করে বুঝতে পারছিস আমি কিসের কথা বলছি! তুই যে নাহিদাকে ভালোবাসি সেটা ওকে বললেই পারিস।”(হৃদয়)
__” আমি ওকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারবোনা রে….”(আমি)
__” কেন পারবি না কেন?”(হৃদয়)
__” আমার খুব ভয় হয় যদি রাজি না হয় আর আমি ওকে হারিয়ে ফেলি!”(আমি)
__” আরে ব্যাটা কিছু হবে না,,,, তুই দেখিস না আমি নাহিদারো তোর প্রতি আকর্ষণ কত। আমার মনে হয় নাহিদা ও তোকে পছন্দ করে…”(হৃদয়)
__” আরে ধুর,,, আমার মত একটা ছেলেকে নাহিদা পছন্দ করবে!”(আমি)
__” তোকে পছন্দ না করার একটা কারণ বল!”(হৃদয়)
__” তাহলে তোর সমস্যাটা কি বলে দে!”(হৃদয়)
__” নারে আমি পারবো না…”(আমি)
__” আচ্ছা তোকে বলতে হবে না আমি ওকে বলে দিচ্ছি….”(হৃদয়)
__” এই না একদম না তুই ওকে কিছু বলবি না।”(আমি)
__” আচ্ছা তুই এভাবে আর কতদিন কষ্ট পাবি?”(হৃদয়)
__” যতদিন কষ্ট সহ্য করতে পারবো।”(আমি)
__” দোস্ত! এভাবে নিজেকে আর কষ্ট দিস না।”(হৃদয়)
__” তোরা থাক আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে….”(আমি)
__” কোথায় যাবি তুই?”(হৃদয়)
__” আমার একটু বাসায় কাজ আছে তোরা থাক।”(আমি)
__” আরে নাহিদার তো ক্লাস শেষ হয়নি। ওকে নিয়ে যাবি না?”(হৃদয়)
__” নারে ভালো লাগছেনা। ও একাই যাবে……”(আমি )
__” আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস।”(হৃদয়)
তাই বলে সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। দিন দিন কেমন যেন গৃহবন্দির মত হয়ে যাচ্ছি। কারো সাথে মেলামেশা করতে ইচ্ছা করে না। কারণ যাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারছিনা। মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় সবসময় কাজ করে যদি নাহিদাকে আমি হারিয়ে ফেলি! না না আমি নাহিদাকে হারাতে দেবো না। আমি রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে আছি। নাহিদার কলেজ শেষে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে আসলো।
__” আবির! ভেতরে আসতে পারি?”
__” হুম… পারমিশন নিতে হবে নাকি?”
__” হুম…..(ভিতরে আস্তে আস্তে বলল)
__” আজকে আমাকে রেখেই বাসায় চলে আসলে যে?”
__” এমনি ভালো লাগছিলো না তাই আগেই বাসায় চলে এসেছি।”
__” আচ্ছা একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে আজকে?”
__” শরীরটা ভালো লাগছেনা আজকে।”
__” কেন কি হয়েছে তোমার?”
Post Views: 1,024
Like this:
Like Loading...
Related