ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজকে সামগ্রিকভাবেই ঘৃণা করতে হবে!

 

দুর্নীতিবাজকে আইন শাস্তি দিতে পারে। দুর্নীতিবাজের ক্ষমতা থাকলে শত
অপরাধের শেষে সে পাড় পেতে পারে! আমরা সাধারণরা দুর্নীতিবাজদের জন্য কী
করতে পারি? নিশ্চয়ই ঘৃণা করতে পারি। কারো আয়ের সাথে তার সঞ্চয়-সহায় না
মিললে তাকে বয়কট করতে পারি। এককালে যে বন্ধু ছিল অথচ সুযোগ আঙুল ফুলে
কলাগাছ হয়েছে তাকে এড়িয়ে চলতে পারি। দুর্নীতিবাজদের ছায়া থেকে জীবনকে
সরিয়ে রাখতে হবে। আইন-আদালত ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে যে নীতি
গ্রহন করুক, সরকার-রাষ্ট্র দুর্নীতিবাজ যে চোখে দেখুক তারও মীমাংসা হবে।
কিন্তু যে চোখ জনতার, যে চোখ ক্ষমতার বাইরের এবং যে চোখ বঞ্চিতের
সেখান থেকে দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোরের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টি পড়ুক। সামান্য কিছু
দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরের কারণে গোটা জনগোষ্ঠীকে খেসারত দিতে হয়। নীতি-
নৈতিকতাহীন অপরাধীদেরকে সমাজ-সংসার থেকে ঘৃণা না করলে অপরাধীর শাখা-
প্রশাখা বিস্তৃত হতেই থাকবে।

বাবাও যদি অবৈধভাবে আয় করে, ভাইও যদি দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে থাকে তবে
তাদেরকেও ঘৃণা করতে হবে। যত আপনজন হোক অপরাধের দায় শেষ পর্যন্ত
আসলে কেউ নেয় না। স্বামীর অপরাধের দায় স্ত্রী নেবে না। যে পরিচিতজনের
নির্ধারিত আয় থাকার পরেও সে বাড়তি কামাই করে, অন্যায়ভাবে অর্থ হাতায়
তাকে ঘৃণা না করতে পারলে, তাকে বয়কট না করলে শিক্ষার কোন মূল্য নাই।
কাউকে ব্যক্তিত্ববান তখনই বলা যাবে যখন সে ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়
অন্যায় হিসেবে সাব্যস্ত করতে শিখবে। কেউ অবৈধভাবে গাড়ি-বাড়ি করবে, অর্থ-
বিত্তের পাহাড় গড়বে আর তাকে তোয়াজ নেওয়াজ করতে হবে, সালাম দিতে হবে
এবং সম্মান জানাতে হবে- এই রীতিতে যদি একজন সৎ মানুষও অভ্যস্থ হয় তবে
ধ্বংসের দামামা পুরোদস্তুর চলছে। ঘুষখোরকে ইশারা-ইঙ্গিতে হলেও বোঝাতে
হবে তুমি ঘৃণ্য। জগৎ-সংসার তোমাকে বরণ করলেও আমি তোমাকে পছন্দ করি

না। দুর্নীতিবাজদেরকে আচরণে বুঝিয়ে দিতে হবে তোমরা এই সমাজের
দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা। দূরে রও!

সারাজীবন অবৈধ উপার্জনের ধান্ধায় কাটিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে
অপাংক্তেয় থাকা, অবসরের সময় আইনের জালে আটক হওয়া কিংবা অধিকার
বঞ্চিত করা মানুষগুলোর অভিশাপ-দীর্ঘশ্বাসে বাঁচার মাঝে বিন্দুমাত্র কল্যাণ
নাই বরং জাগতিক যত অকল্যাণ আছে সেসব জীবনের দিকে ধেয়ে আসবে। কাউকে
ঠকানো, ঘুষ গ্রহন কিংবা অন্যান্য দুর্নীতি এমন পাপ যার প্রায়শ্চিত্ত
একজীবনে মিটবে না বরং মহাকালের জীবনও আজাব-গজবের শাস্তিতে কাটাতে
হবে। যারা অবৈধ সুযোগ গ্রহন করে তাদের সম্পদের পাহাড় থাকতে পারে কিংবা
ক্ষমতার মসনদ মজবুত হতে পারে কিন্তু সারাজীবন যে হীনমন্যতায় ভূগতে হয়
সেটার কোন বৈকল্পিক উত্তরণ নাই। চোরের মন সর্বদাই চোর চোর করে!
বৈধতার মধ্যে যে বরকত, যেমন মানসিক প্রশান্তি এবং যেভাবে মাথা উঁচু করে,
শিরদাঁড়া সোজা করে কথা বলা যায়, আচরণ করা যায় তা অবৈধভাবে জীবন ও
জীবিকার নির্বাহকরা কল্পনাও করতে পারে না। বরং দুর্নীতিবাজদের রক্ত
যেথায় যেথায় প্রবাহিত হয় তার সবদিক কে-ই দুষিত করে।

দুর্নীতি ঘোরতর পাপ। দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা না করলে, স্বজনপ্রীতি কিংবা দলীয়
আদর্শপ্রীতিতে যারা অন্ধ হয়ে আচরণ করে তাদেরকে বয়কট না করলে সেটা
জনসাধারণের অপরাধ হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন ও আদালত যদি
ন্যায়বিচার না করে তবে সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হয়। রাষ্ট্র ও সরকার
যদি দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান করে তবে সময় কলঙ্কিত হবে।
চোরকে বড় গলায় চোর বলার মধ্যেই বাহাদুরি। অবৈধ ক্ষমতার কাছে মিনমিন
করলে, ঘুষখোরের সামনে চোখ অবনত রাখলে এবং দুর্নীতিবাজকে আত্মীয়ের
পরিচয় দিলে সেটার চেয়ে নিকৃষ্টতর কাপুরুষোচিত আচরণ আর একটাও নাই।
জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে আপষ করার নামে যদি অন্যায় মেনে নিতে হয় তার
চেয়ে বনজঙ্গলে বিজন জীবন কাটানোই শ্রেষ্ঠতর হবে। অবৈধভাবে সম্পদের

পাহাড় গড়েছে এবং সম্পদ সুসন্তান হয়েছে, নিরিবিলি শান্তিতে মরণকে বরণ
করেছে এমন একটা দৃষ্টান্তও আমার সমানে নাই। পাঠকের আশেপাশে এসব
ঘটেছে?

অন্য আর দশটা ইবাদতের মত হালাল রুজিরোজগার করাও ইবাদত। বরং এটা
অন্যসব কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হারাম পয়সায় চাল-তরিতরকারি কিনে
খেলে সেসবের দ্বারা যে রক্তকণিকা ও মাংসপিণ্ড সৃষ্টি হবে সেটা মানুষকে
অমানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আত্মিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতার জন্য,
চরিত্রবান সন্তান-সন্ততির জন্য এবং মানুষের মন থেকে শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য
বৈধ পথের আয় জীবনকে সঠিক দিশা দেয়। অবৈধ সম্পদের পাহাড়ে গড়ার পরে
কিংবা ওই সময় যদি দুদক তাড়ায়, পুলিশ খোঁজে এবং আদালত সম্পদ জব্দের
নির্দেশ দেয় তবে সেটার চেয়ে অশান্তি ও অস্বস্তিকর সময় একজীবনে আর
একবারও আসে? মানুষের ঘৃণা বয়ে বেড়ানো জীবনের দুঃসহ সময়ে যদি একের পর
এক দুঃসংবাদ আসে, এককালের প্রিয়জনরা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং যাদের জন্য
এতোকিছুর আয়োজন হয়েছিল তারাও মুখ ঘুরিয়ে নেয় তবে এই জীবনের অর্থ কী?
তখন আর কারো বাঁচতে ইচ্ছা করে? এরপরেও অমানুষ অনেককিছু ভাবে! নিজেকে
রথি-মহারথি মনে করে!

বৈধ আয়ে সাদামাটা জীবনযাপনের চেয়ে সৌন্দর্যের আর কিছুই সৃষ্টি হয়নি।
দুশ্চিন্তাহীন ঘুমের চেয়ে নান্দনিক আর কিছুই নাই। কোনো অপরাধ প্রায়শ্চিত্ত
ছাড়া যায় না। কাউকে এক পয়সা ঠকালেও সেটার ক্ষতিপূরণ জীবন থেকে কেটে
নেওয়া হয়। জীবনকে দু'টো অংশে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাপের তাপ ইহলৌকিক
জীবনে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতবিক্ষত না করলেও পারলৌকিক জীবনে সবকিছুর
ক্ষতিপূরণ কড়ায়গণ্ডায় দিতেই হবে। আদায় করা হবে। কেউ যদি এক পয়সা
পরিমান দুর্নীতিতেও নিজেকে জড়ায় তবে সেটার সাথে একজন অসহায় বৃদ্ধ,
বয়স্ক-অক্ষমের স্বার্থ বঞ্চিত করা হয়। এই পাপ কারো বাপকেও ছেড়ে দেবে
সেটা যেন কেউ ভুলেও না ভাবে। রোজ সকালে কবরের দিকে তাকিয়ে শিক্ষা নেওয়া

উচিত।কত কত সম্পদের মালিক, কী বিপুল ক্ষমতাধর অথচ কেউ পাড় পায়নি; হয়
এপাড়ে নয়তো ওপাড়ে! এতো লোভ রাখা, এত ক্ষুধা থাকা ঠিক নয়। বৈধভাবে আয়
করে তা দিয়ে ডাল-ভাতের ব্যবস্থার চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কোথাও, আর
কিছুতে নাই। পাপ কোন বাপকে আজ অবধি রক্ষা করেনি! দুনিয়াতে দু'চারজনের যে
পতন দেখছি তা আলামত! কেয়ামত তো ক'দিন বাদেই।

Exit mobile version