বিদ্রোহী নজরুল -বিচিত্র কুমার

 

তোমার নামেই ঝরে বিদ্রোহের ধ্বনি,

তোমার কলমে উঠে আসে বজ্রের বাণী।

তুমি যেন ঘুমন্ত জাতির বুকের হাহাকার,

যা শব্দে রূপ নিয়ে চিরমুক্তির গান গায়।

তুমি যুগের সীমা ছাড়িয়ে সময়ের স্রোতে ভাসো,

তুমি মানুষ, তবু তুমি চিরকালীন এক প্রতীক।

 

ঝড়ের ডানায় ভেসে ওঠা দুঃসাহসিক পাখি,

তোমার প্রত্যেক শব্দে বজ্রের গর্জন বাজে।

কখনো তুমি মাটির গভীর থেকে

তুলে আনো মানুষের কান্না,

কখনো তুমি আকাশের উচ্চতায়

ঘোষণা করো বীরত্বের মন্ত্র।

তুমি বিদ্রোহী, তুমি প্রেমিক,

তুমি একই সাথে শক্তি ও স্নেহের অধিকারী।

 

রুদ্র তোমার চোখে জ্বলে,

যে রুদ্র আগুন হয়ে পোড়ায়

সমাজের পচন ধরা শৃঙ্খল।

তবু সেই রুদ্রে লুকিয়ে থাকে

প্রিয়তম মায়ার স্পর্শ।

তোমার কবিতার প্রতিটি শব্দ যেন

চৈত্রের তপ্ত দুপুরের পর

জ্যৈষ্ঠের প্রথম বৃষ্টির ছোঁয়া।

তুমি রুক্ষ, তুমি কোমল,

তুমি একই সাথে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক।

 

তোমার ছন্দে গর্জে ওঠে

নদীর গভীর স্রোতের গান।

তোমার শব্দে জাগে প্রান্তিক মানুষের হাহাকার।

তুমি গেয়েছো মজুরের কষ্ট,

গেয়েছো কৃষকের স্বপ্ন।

তোমার ভাষায় ফুটে ওঠে

ক্ষুধার্ত শিশুর চোখে লুকানো ব্যথা।

তুমি কবি, যিনি মানুষের কথা বলেন,

তুমি শব্দ, যা প্রতিটি হৃদয়ে প্রজ্বলিত।

 

তুমি তো বিদ্রোহের প্রতীক,

তুমি প্রণয়েরও কবি।

যেখানে অন্যায়ের ছায়া পড়ে,

সেখানে তুমি বজ্রগম্ভীর।

যেখানে প্রেমের কোমল বাতাস,

সেখানে তুমি কোমল স্পর্শ।

তোমার হাতেই উঠে আসে

মৃত্যুকে তুচ্ছ করার অগ্নিবীণা।

তুমি একই সাথে প্রেমিক হৃদয়ের সুর,

আর যুদ্ধজয়ের শ্লোগান।

 

তোমার কবিতা কেবল শব্দ নয়,

তোমার কবিতা এক মশাল।

যা অন্ধকারের শৃঙ্খল ছিন্ন করে,

যা হতাশার দেয়াল ভেঙে দেয়।

তোমার গান কেবল সুর নয়,

তোমার গান বজ্রধ্বনি,

যা দাসত্বের দড়ি টুকরো করে।

তোমার প্রতিটি সৃষ্টিতে

আছে মুক্তির চেতনা।

 

তুমি ঈশ্বরের সৃষ্টিতে মানুষের প্রতিনিধি,

তোমার সৃষ্টিতে প্রকৃতির উচ্ছ্বাস।

তুমি গেয়েছো চিরন্তন সাম্যের গান,

তোমার কণ্ঠে উঠেছে মুক্তির সুর।

তুমি ধর্ম, তুমি জাতি,

তুমি একতা ও মানবতার স্রষ্টা।

তুমি দেখিয়েছো,

মানুষের একমাত্র পরিচয় সে মানুষ।

তুমি বলেছো, ধর্ম কোনো শিকল নয়,

ধর্ম যদি বাঁধে, তবে বিদ্রোহ অপরিহার্য।

 

তুমি গেয়েছো কৃষাণের কাহিনী,

গেয়েছো জনতার দুঃখগাথা।

তোমার ছন্দে জীবনের উচ্ছ্বাস,

তোমার গানে দুঃখের শান্তি।

তুমি ধ্বংসের মাঝে সৃষ্টির কবি,

তুমি প্রেমের মাঝে শক্তির পুরোহিত।

তুমি “অগ্নিবীণা” হাতে আগুন জ্বালাও,

তুমি “দোলনচাঁপা”র কোমলতায় ভালোবাসা ঢালো।

 

তোমার দেহ ক্লান্ত, তবু মন অনন্ত।

জীবনের প্রতিটি রক্তবিন্দুতে

তোমার সৃষ্টি চিরন্তন।

তোমার স্বপ্নে ছিলো এক নতুন দিগন্ত,

যেখানে মানুষ স্বাধীন,

যেখানে ভোগের হাহাকার নেই।

তুমি চেয়েছো এমন এক সমাজ,

যেখানে দারিদ্র্য নেই,

যেখানে অন্যায়ের স্থান নেই।

 

তুমি বলেছো,

“বল প্রিয়তমাসুন্দর, তুমি মোর কে?”

তুমি বারবার জিজ্ঞাসা করেছো,

মানুষ কেন এত শৃঙ্খলে বাঁধা?

তুমি বিদ্রোহী, তুমি প্রেমময়।

তুমি নারী-পুরুষের সমান অধিকারী।

তোমার কণ্ঠে উঠে আসে সাম্যের গান।

তোমার আলোয় মানুষ খুঁজে পায়

আপন জীবনের মান।

 

নজরুল, তুমি চিরন্তন।

তোমার নাম বিদ্রোহ,

তোমার নাম প্রেম,

তোমার নাম মানুষের মুক্তি।

তোমার নাম চিরকালীন স্বপ্ন,

তোমার নাম কাজী নজরুল ইসলাম।

 

তোমার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়,

“আমি চির বিদ্রোহী বীর,

বিশ্বের বুকে রাখি মাথা অনন্ত।”

তোমার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি স্পর্শে

মানুষ খুঁজে পায় সাহসের আলিঙ্গন।

তোমার আলোতেই পৃথিবী জানে,

স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ।

তুমি চির বিদ্রোহী,

তুমি চির প্রেমের কবি।

 

তোমার বিদ্রোহে জাগে মানুষ,

তোমার প্রেমে বাঁধে শান্তি।

তুমি শিকল ভাঙার গান,

তুমি সাম্যের প্রতীক।

তুমি কাজী নজরুল ইসলাম,

তুমি ইতিহাস, তুমি চিরন্তন সত্য।

 

দুপচাঁচিয়া,বগুড়া।

Exit mobile version