রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: অসময়ের ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের শত শত পরিবার। তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সদর উপজেলার হরিণ চওড়া ও আদিতমারীর গরিবুল্লাটারী গ্রাম। ভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও রক্ষায় ধীরগতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। জানা যায়, খনন না করায় তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে সামান্য পানিতে তিস্তার পানি উপচে দুই কূলের লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করছে। ফলে পানিতে ভেসে যায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও পানিতে ডুবে নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকার ফসল। বন্যার পানি কমলে ভাঙনের তীব্রতা বাড়েছে। প্রতিমুহূর্তে ভাঙনের শিকার হচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রতি বছর নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে তিস্তা নদী। বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। একই সঙ্গে অসংখ্য বালুচর হচ্ছে। ফলে অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে তিস্তাপাড়ে। তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা অবস্থিত। ফলে বন্যা আর ভাঙনের শিকার হচ্ছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার মানুষ। একেকটি পরিবার ১০/১২ বার করে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বার বার সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ী। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই অন্যোর বাড়ী বা বাঁধ আর রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ আশ্রয়ের সেই জায়গাটুকু না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। ১৮ অক্টোবর শুক্রবার এলাকাবাসী বলেন, গত তিনদিনের ব্যবধানে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি ¯প্যার বাঁধের ভাটিতে গরিবুল্লাটারী গ্রামের ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্রামবাসী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবার স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরবাড়ি সরাতে পারলেও নতুন করে বাড়ি করার মতো জমির অভাবে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙন ঠেকাতে ৫০০ জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। অন্তত পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ দ্রুত ফেলতে না পারলে পুরো গ্রামটি বিলীন হওয়ার শঙ্কা করছে স্থানীয়রা। দিনমজুর নবির হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে নদী ছিল খানিকটা দূরে। দেখতে দেখতে বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। আমার বসতভিটা দিয়ে এখন নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তিনদিন আগে ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছি। বাড়ি করার মতো জমি কেউ দিচ্ছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি। আমরা পুনর্বাসনের সহায়তা পাইনি। সহায়তাসহ তিস্তায় স্থায়ী বাঁধ চাই। একই গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, আগে গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরুর বিশাল সংসার ছিল আমাদের। গত পাঁচদিন আগে বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। জমি না পাওয়ায় ঘর রাস্তার পাশে ফেলে রেখে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি। এর আগে আরও ১৯ বার আমাদের বাড়িঘর সরাতে হয়েছে। তিনি বলেন, চড়া সুদে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। সেই টাকায় চার শতাংশ জমি নিয়ে সেই বাড়ি করতেছি। এখানে না খেয়ে মরলেও কেউ খবর নিতে আসে না। গরিবের খবর কেউ রাখে না বাহে। নাজনীন বেগম বলেন, চোখের সামনে বসতভিটা নদীতে ভেঙে গেছে। তিনদিন হলো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি সন্তানদের নিয়ে। অনেকের কাছে বাড়ি করার মতো একটু জমি চেয়েছি, পাইনি। কেউ জমি দিতে চায় না। টাকা ছাড়া ঘর রাখার মতো জমিও মেলে না এখানে। দিনমজুর স্বামী কাজ পেলে পেটে ভাত যায়। নয় তো না খেয়ে থাকতে হয়। কবে কোথায় হবে মাথা গোঁজা ঠাঁই কিছুই জানি না। অন্যের বাড়িতেও তো বেশি দিন থাকার সুযোগ নেই। সদর উপজেলার হরিণ চওড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, পরিশ্রম করে আয় করা অর্থে সারা বছর যা সঞ্চয় করি। তা প্রতিবছর বন্যা আর ভাঙনে নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর বাড়ি সরাতে হচ্ছে। প্রতি বছর বন্যায় ডুবে ফসল নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে। এজন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। এটা বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে এবং প্রতি বছর বন্যা ও ভাঙনে যে ক্ষতি হয় আর ত্রাণের জন্য যে খরচ হয়, সব বেঁচে যাবে এবং দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। একইভাবে ভাঙনের শিকার উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত পরিবারের। শুধু মহিষখোচা ইউনিয়ন বা গরিবুল্লাটারী নয়। লালমনিরহাট জেলার তিস্তাপাড়ে মানুষ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আদিতমারী উপজেলার গরিবুল্লাটারী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের হরিণ চওড়া গ্রামে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ৩শত বান টিন ও নগদ নয় লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনডিসি এস এম শাফায়াত আখতার নুর। মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, প্রতিদিন ভাঙনের শিকার পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। ভাঙন রোধে আমরা পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ চেয়েছিলাম। পেয়েছি মাত্র ৫০০টি। যা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রায় প্রতি সপ্তাহে পাঠানো হচ্ছে। এখনও ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে কোনো বরাদ্দ আসেনি। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গরিবুল্লাটারী এলাকায় প্রায় ১৪০০ মিটারে ভাঙন। যা শুষ্ক মৌসুম ছাড়া ঠেকানো সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকা রক্ষায় ব্লোক দিয়ে বাঁধ করা হবে। আপাতত রক্ষা করতে ৫০০ জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। যতটুকু সম্ভব রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ভাঙন রোধে আপাতত ৫০০ জিও ব্যাগ ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে। যা দিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকাও পাঠানো হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য কিছু বরাদ্দ এসেছে। সেখান থেকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ভাঙন রোধে আসলে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে তেমন কোনো লাভ হয় না। মূলত ভাঙন রোধে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বা স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই। আমরা সে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তবুও স¤পদ রক্ষায় আপাতত জিও ব্যাগে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শ্রেণীকক্ষে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদের দাবিতে ইবির প্রধান ফটকে তালা
আবিদ হাসান ইমতিয়াজ, ইবি।। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের বরাদ্দকৃত শ্রেণীকক্ষ নিয়ে ফের উত্তাল ক্যাম্পাস। ভবনটি...