বশেমুরবিপ্রবিতে  হলের সিট দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, হল প্রভোস্ট লাঞ্চনার শিকার

এসময় হল প্রভোস্টকেও লাঞ্চিত করা হয়৷

 

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
সাইফুর রহমান সৈকত,
আবাসিক হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ এসময় হল প্রভোস্টকেও লাঞ্চিত করা হয়৷
বুধবার (৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল শেখ রাসেল হল ও এর পার্শ্ববর্তী হলের সামনে কয়েক ঘন্টা ব্যাপী এই ঘটনা ঘটে।
এসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও তার গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে আবাসিক হলে সিট দখল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। ঐ সময়ে ঘটনাস্থলে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক ও শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট মোঃ ফায়েকুজ্জামান মিয়া উপস্থিত হলে তারা তাকে লাঞ্চিত করে। অভিযুক্ত ছাত্রনেতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের (বর্তমানে ইইই) ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম ও তার গ্রুপ শেখ রাসেল হলের সিট দখল করতে গেলে সাধারন শিক্ষার্থী ও হল প্রভোস্টের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে তারা শেখ রাসেল হল এবং পার্শ্ববর্তী আবাসিক হল স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস হলে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এসময় তাদের সাথে স্থানীয় বহিরাগত লোকদের উপস্থিতি দেখা যায়। পরবর্তীতে তিন হলের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হয় ঐ দখলকারীরা। পরে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, “পরিবার পরিজন থেকে আমরা অনেক দূরে থাকি। আবাসন ব্যবস্থার সংকট থাকায় প্রায়ই বিভিন্ন ছাত্র গ্যাংদের উৎপাত দেখতে হয়। তাদের দৈনন্দিন এসব কার্যক্রমে আমরা অতিষ্ঠ। আশাকরি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে।”
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪ টি ডিপার্টমেন্ট। এর মধ্যে একটি হলেই যদি একজন প্রভোস্ট তার নিজ ডিপার্টমেন্টের ৪৬ জনকে উঠায় তখন বিষয়টি দুঃখজনক হয়ে দাঁড়ায়।প্রভোস্ট কে যে কেউ প্রটোকল দিলে হলে সিট পেয়ে যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাধারন শিক্ষার্থী উনাকে ৩-৪ দিন প্রটোকল দিলেই সিট পায় অথচ একজন ছাত্রলীগের কর্মি মাসের পর মাস উনার পিছনে ঘুড়ে হলে সিট তো দুরের কথা ডাবলিং করেও থাকার সুযোগ পায়না।একজন প্রভোস্ট কিভাবে শিক্ষার্থীদের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থায় ফেলে দেয়।”
এসময় তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “প্রভোস্ট অত্যান্ত সুকৌশলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিধনের অপচেষ্টা করছে।সাধারন শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তিনি আমার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি,আমরা উনার এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দিবন।”
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট মোঃ ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য। প্রভোস্ট হিসেবে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব ।তবে রাতের ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। তারা আমাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে অপমানসূচক কথা বলে লাঞ্চিত করেছে। আশাকরি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো বর্ধিতকরণ কার্যক্রম নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে আবাসন সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও এ আবাসন সংকটের ভিতর ভিন্ন ভিন্ন ছাত্রনেতার হলে সিট দখল করে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা প্রায়সই হয়ে থাকে৷
Exit mobile version