মাদারগঞ্জের পিআইও ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে সরকারী নির্দেশনা না মানার অভিযোগ

মাসুদুর রহমান – জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে সরকারী নির্দেশনা না মানার অভিযোগ পাওয়া গেছে । তার কর্মকান্ড নিয়ে শনিবার (১৫ অক্টোবর ) পর্যন্ত উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে । কোন অনুষ্ঠানেই জাতীয় স্লোগান ‘ জয়বাংলা ‘ উচ্চারণ করেন না বলেও তথ্য রয়েছে ।  এ নিয়ে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে ।
জানা যায়, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদে একটি রিট করেন । দীর্ঘদিন আইনী লড়াইয়ের পর ২০২০  সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে বলে রায় দেন  হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।  ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সচিবালয়ে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতির অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ২০২২ সালের ২ মার্চ মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্ম সচিব শফিউল আলম এর স্বাক্ষরিত ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় সেøাগান হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাধ্যতামূলকভাবে এই স্লোগান ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে । প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- সাংবিধানিক পদাধিকারী, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারী সব জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন। মাদ্রাসাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভা-সেমিনার, অ্যাসেম্বলি বা যেকোনো ধরনের সমাবেশ হলে সেখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে। যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, অ্যাসেম্বলি হয় সরকারি-বেসরকারি যারা থাকবেন জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করবেন। হাইকোর্ট , সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মানছেন না মাদারগঞ্জের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইব্রাহিম খলিল । গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি জয়বাংলা স্লোগান না বলে বক্তব্য শেষ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ওবায়দুর রহমান বেলাল। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায় রিছিল,সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম খালেক,পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন,মাদারগঞ্জ বিআরবিডি চেয়ারম্যান অরুন কুমার সাহাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।
সম্মলিত সামাজিক আন্দোলনের জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন,জয় বাংলা স্লোগান একটি চেতনার বিষয়। যেহেতু হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাই একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অভিযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার জয়বাংলা বলা উচিত ছিল।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতারা জানান , ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীজমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে এই স্লোগান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যে গতি ও শক্তি সঞ্চার করে তার তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। ছোট্ট দুটি শব্দের একটি স্লোগান কীভাবে পুরো একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, একটি জাতিকে স্বাধিকারের পথে উদ্বুদ্ধ করে, নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে, দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোটি জনতাকে অভিন্ন চেতনার আলোকে উজ্জীবিত করে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তারই জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। জয় বাংলা আজ কোনো দলের একক স্লোগান নয়, বরং এ স্লোগান আপামর মুক্তিকামী বাঙালির। জয় বাংলা বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্লোগান। জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয় বাংলা স্বাধীনতার স্লেগান। জয় বাংলা বাঙালির ‘মুক্তির’ স্লোগান। জয় বাংলা এ দেশের মানুষের ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা আমাদের অস্তিত্বের স্লোগান। সর্বোপরি আমাদের জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোন অনুষ্ঠানের শেষে জয় বাংলা স্লোগান দেয়না । বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি । সেই সাথে তার পারিবারিক খোজ খবর নেওয়ার দাবী জানাই ।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন , বিষয়টি নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই ।  তবে জেলার ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বক্তব্যের শেষে জয়বাংলা স্লোগান দেওয়া বাধ্যতামূলক। এটি নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। কেউ যদি বক্তব্যের শেষে না দিয়ে থাকেন তাহলে আমরা তদন্ত স্বাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
Exit mobile version