বরগুনা: নাম ও ধর্ম গোপন করে আমতলীর এক মুসলিম তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে ধর্ষণের পর শাখা সিঁদুর পড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি প্রধান অভিযুক্ত ঐ তরুণীকে ধর্ষণের পর তার ছবি ও ভিডিও করে রাখতো। ভুক্তভোগী ঐ তরুণী আজ রোববার বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনজন হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে।
ট্রাইবুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম লাইলাতুল ফেরদৌস মামলাটি গ্রহণ করে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনার আসামিরা হল, তালতলী পঁচাকোরালিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কড়ইতলা হাড়িপাড়া গ্রামের উত্তম পাইকের ছেলে দিপু পাইক (২৩), তার বন্ধু গৌতম পাইক ও বিমল হাওলাদার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু।
জানা যায়, আমতলী উপজেলার এক মুসলিম তরুণী দিপু পাইকের সঙ্গে মুঠোফোনে পরিচয় হয়। এ সময় দিপু পাইক নিজেকে অনিক হিসেবে পরিচয় দেয়। নিজেকে মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রেম চলার পর অনিক ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
এতে তরুণী পারিবারিকভাবে বিয়ে করার জন্য প্রেমিক অনিককে প্রস্তাব দেয়। অনিক তরুণীর প্রস্তাব নাকচ করে নিজেরা গোপনে বিয়ে করার উল্টো প্রস্তাব দেয়। তরুণীর কথিত অনিকের প্রস্তাবে রাজি না হওয়া অনিক তরুণীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল অনুমান ৯ টার সময় ওই তরুণী আমতলীর কড়াইবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে কাচা রাস্তা গেলে ওই তিন যুবক একটি অটো (মাহেন্দ্র) গাড়িতে জোরপূর্বক অপহরণ করে প্রথমে বরিশাল নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকার হেমায়েতপুর নিয়ে যায়।
আসামি দিপু পাইক তার বন্ধুদের সহায়তায় ১ ফেব্রুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাধিকবার জোর করে ধর্ষণ করে ওই মুসলিম তরুণীকে। এসময়ে তরুণী স্বর্ণের কানের দুল রেখে দেয় আসামিরা।
এ ব্যাপারে তরুণী বলেন, দিপু পাইক প্রথমদিকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বিরক্ত করত। আমি নিষেধ করলেও দিপু বার বার ম্যাসেজ দিত। পরবর্তীতে আমি আস্তে আস্তে দিপুর প্রতি দুর্বল হয়ে যাই। দিপু পাইক নাম গোপন করে অনিক এবং মুসলিম বলে প্রকাশ করে। দিপু আমাকে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা প্রলোভন দেখাতে থাকতো। আমি পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা বলায় দিপু রাজি হয়নি। দিপু চাইছিল আমরা গোপনে বিয়ে করি। আমি এ প্রস্তাবে রাজি হইনি। এতে দিপু ক্ষিপ্ত হয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে জোরপূর্বক আমাকে অপহরণ করে ৬ দিন ধর্ষণ করে। আমি পরে জানতে পারি দিপু পাইক হিন্দু। তার অনিক নাম নয়। একজন হিন্দু ছেলে মুসলমান নাম ধারণ করে আমাকে ধর্ষণ করেছে।
তরুণী আরও বলেন, দিপুর দুই বন্ধুর সহায়তায় জোরপূর্বক খুনের ভয় দেখিয়ে আমার মাথায় সিঁদুর ও হাতে শাখা পরিয়ে দেয়। দিপু যতবার ধর্ষণ করেছে ততোবার ভিডিও ও স্থীরচিত্র করে রেখেছে। আমি সুযোগ পেয়ে আমার চাচাতো বোনকে জানাই। পরে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করে। দিপুর ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমি এখন পর্যন্ত আদালতের আদেশ পাইনি। আদেশ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করব।