রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: হামার হাতের মিষ্টি কুমড়া বিদেশিরা পাতোত নিয়্যা খাইবে। এটা তো খুশির খবর। মেলাদিন পর চরের মিষ্টি কুমড়া ফির বিদেশ যাওচে। এবার আবাদ কম হইলেও বাজারোত কুমড়ার দাম ভালো। চরের যেপাকে যাইমেন খালি কুমড়া আর কুমড়া। সাতে কোনো কোনো জাগাত বাদাম, ভুট্টা, শশা, স্কোয়াশ, শাক-সবজির আবাদও চোকোত পড়বে বাহে। এ্যলা আগের মতো চরোত তাংকুর (তামাক) আবাদ নাই। বেশি লাভ হওয়াতে কমবেশি সগায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করচে। এসব কথা বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত ছালাপাক চরের কৃষক চান মিয়া। প্রতি বছর বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিস্তা পাড়ের চান মিয়াসহ এলাকার মানুষদের লড়তে হয় নদী ভাঙনের সঙ্গে। কখনো নদীগর্ভে বিলীন হয় তাদের বসতভিটে, কখনো চাপা পড়ে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। তারপরও হাড়ভাঙা পরিশ্রমে থেমে থাকে না তাদের জীবনযুদ্ধ। এবার মিষ্টি কুমড়া ঘিরে দেখা স্বপ্ন পূরণে খুশি চরবাসী। বিস্তীর্ণ চরে তাদের চাষ করা মিষ্টি কুমড়া দেশ ছাড়িয়ে বিদেশিদের পাতে পড়বে এ আনন্দে ভাসছে চাষিরা। জানা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এর আগে ২০১৬ সালে বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশের উদ্যোগে চরে চাষ করা মিষ্টি কুমড়া পৌঁছেছিল বিদেশের ভোক্তাদের পাতে। আর চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনা ও এমফোরসি প্রকল্পের সহায়তায় রংপুর এগ্রোসহ দু’টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের ক্ষেত থেকে সরাসরি মিষ্টি কুমড়া কিনে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাঠাচ্ছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ২০ কোটি টাকার মিষ্টি কুমড়ার অর্ডার পেয়েছে। এ কারণে চাষিদের কাছ থেকে তারা সরাসরি মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করে প্যাকেটজাত করছে। তবে শুধু বিদেশেই নয়, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে চরে চাষ করা মিষ্টি কুমড়া দেশের ১৭টি জেলাতেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানান চাষিরা। তিস্তা নদী বেষ্টিত গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক ও পূর্ব ইছলির চরাঞ্চলে দেখা যায়, ধু-ধু বালুচরে বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহ। কয়েক বছর ধরে তিস্তর দুর্গম বালুচরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হচ্ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চরাঞ্চলের একসময়ের পতিত জমিগুলোতে সবুজের বিপ্লব ঘটাতে থেমে নেই সেখানকার কৃষকগণ। ছালাপাক গ্রামে প্রায় ৫শত পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৩৮০ জন। যাদের ৮৫ ভাগ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। ভূমিহীন, গৃহহীন ও নিম্ন আয়ের এসব পরিবার এখন চরজুড়ে মিষ্টি কুমড়া, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, ধান চাষ করছে। পাশাপাশি তাদের রয়েছে গবাদি পশু ও ছাগল পালন। তবে কয়েক বছর ধরে লাভ বেশি হওয়াতে মিষ্টি কুমড়ায় ঝুঁকেছে চাষিরা। চরের জমিতে সোলার পা¤প ব্যবহৃত স্যালো মেশিন দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে পানি দিচ্ছিলেন কৃষকরা। অনেকেই গর্তে ও গাছে পানি দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। ছালাপাকের চরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন আশানুরূপ হয়নি বরৈ জানান মজিবর রহমান। তিনি ৮০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছে। বীজ, সার, জমি তৈরি ও সেচ দেওয়াসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকরা তার ক্ষেত থেকে ১৯ টাকা কেজি মূল্যে ২০ বস্তা মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করে নিয়েছে। ফলন কম হলেও চাহিদা বেশি হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছে। এতে তার ৫০ হাজার টাকার বেশি লাভ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। একই গ্রামের বুলবুলি বেগম বলেন, আগে তামাক চাষ করতাম। এখন চার বছর ধরে আমরা মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছি। সংসারে অনেক আয় উন্নতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রয় করেছি। আরও তিন-চার লক্ষ টাকার মতো মিষ্টি কুমড়া বিক্রয় করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়া আগের মতো ৮ থেকে ১০ কেজির হয় না। এটা সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়। তবে চাহিদা বেশি ২-৩ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়ার। প্রথম দিকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে ১৬ থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। চরাঞ্চলের ভূমিহীন ও কৃষিনির্ভর পরিবারের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা এমজেএসকেএস, পা¤পকিং প্লাস, এমফোরসি ও বগুড়ার পল্লি উন্নয়ন একাডেমি। এমফোরসি তিস্তার চরে মিষ্টি কুমড়া চাষে উন্নত প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরী পরামর্শ ও উপকরণ সরবরাহ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল সংগ্রহ, পরিচর্যা, ফসলের মান নির্ধারণ, সংরক্ষণ, বাজার সংযোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এতে করে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের যোগসূত্রও তৈরি হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে রংপুর জেলার চরের বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে চর বাজার উন্নয়ন প্রকল্প মেকিং মার্কেট ওয়ার্কস ফর দ্য চর-এমফোরসি। প্রকল্পটির অর্থায়নে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ড সরকার। এমফোরসি প্রকল্পের উদ্যোগ ও সহায়তায় গত কয়েক বছর ধরে ভূমিহীনরা চর এলাকায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জীবনের মানও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। কৃষক সচেতন হয়ে উন্নত পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসলের ভালো ফলন, গুণগুত মান ও ভালো দাম পেতে শুরু হওয়াতে দারিদ্রতার শিকল ভেঙে স্বচ্ছলতায় প্রবেশ করেছে। এ সফলতায় অল্প আয়ের মানুষদের জীবনের গতি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভালো করে পরিষ্কার করার পর মিষ্টি কুমড়া কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সেলাই করা হচ্ছে। বিদেশে রপ্তানি হবে বলে ভালো মানের মিষ্টি কুমড়া বাছাই করে প্যাকেজ করা হয়। মিষ্টি কুমড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রংপুর এগ্রোর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান রতন বলেন, চাষিদের কাছ থেকে ১৬-১৯ টাকা কেজি দরে সরাসরি ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করা হচ্ছে। এরপর প্যাকেজজাত করে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চরাঞ্চলের মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিন কোটি টাকার মিষ্টি কুমড়া বিদেশে পাঠানো হয়েছে। দুই দেশে প্রায় ২০ কোটি টাকার মিষ্টি কুমড়া রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, দুই দেশে মিষ্টি কুমড়া রপ্তানি হলেও চরাঞ্চলের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। এতে চাষিরাও লাভবান হচ্ছে। চরাঞ্চলে টেকসই ফসল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে। তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
ফের বাড়ল দাম এক ভরি সোনার অলংকার ১ লাখ ৫৭ হাজার
দেশের বাজারে র্স্বণের দাম বাড়ানোর ঘোসণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ভরিতে এবার সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৬৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন...