রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: রংপুরে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষের ভরসার সবজিও এখন হয়ে গেছে বিলাসী পণ্য। সপ্তাহজুড়ে ১০০ টাকার কমে মেলেনি কোনো সবজি। ডিমের দাম ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তবে সরকারের হস্তক্ষেপে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও এবার বাজারে বাড়ছে মুরগির দাম। সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ব্রয়লার মুরগি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। আর সোনালি মুরগি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নি¤œ আয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও এখন কঠিন সময় পার করছেন। রংপুর নগরীর লালবাগসহ বিভিন্ন বাজার দেখা যায়, মাসখানেক ধরে সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মাংস, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির বাজার সীমাহীন বেড়েছে। সবজির বাজারে দেখা যায়, দুদিন আগের ৩০-৪০ টাকার করলা-পটোল ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা, ১০ টাকা আঁটির কলমি শাক ২০ টাকা ২০ টাকা কেজির পুঁইশাক ৩০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৫০ টাকা, বড় বেগুন ৮০, ছোট লম্বা বেগুন ৬০ টাকা। এ ছাড়াও ৪০ টাকার বরবটি ৬০-৭০ টাকা , ৪০ টাকার কচুমুখী ৬০ টাকা ৬০ টাকার বাঁধাকপি ৮০, মাঝারি আকারের লাউ ৬০ থেকে ১০০ টাকা ৪০ টাকার চিচিঙ্গা ৭০ চাকা ৩৫ টাকার কাঁকরোল ৭০ টাকা ৩০ টাকা কেজির মিষ্টি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। বাড়েনি শুধু পিয়াজের দাম ১০০-১২০ টাকা কেজির মধ্যে রয়েছে। রংপুর শহরে ছোট একটি চাকরি করেন আল-আমিন। বেতনের বড় একটি অংশ চলে যায় বাড়িভাড়ায়। বাড়তি হাতে যা থাকে, তা দিয়ে টেনেটুনে চলে পুরো মাস। মাছ-মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন ভরসা ছিল সবজি-ডিমের ওপর। কিন্তু এখন যে অবস্থা সবজিও তাঁর কাছে বিলাসী পণ্য মনে হচ্ছে। কীভাবে পরিবার নিয়ে চলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। নগরীর চকবাজার এলাকা টিটু সবজি কেনার সময় হতাশার সুরে বলেন, চোখে অন্ধকার দেখছি। পরিবার নিয়ে জীবনটাকে কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। পরিবারে সব খাতে ব্যয় কমিয়েছি, তারপরেও টানাটানি। সবজি ক্রয় করবো সেই অবস্থাও নেই। দাম শুনে মাথা ঘুরে যায়। এখন বাজারে আসার কথা শুনলেই মনটা বিষিয়ে ওঠে। নগরীর কেডিসি রোডে থাকেন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক জসিম। দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা অনুসারে মাসে সর্ব সাকুল্যে আয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাত হাজার টাকা গাড়ি ভাড়ায় চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে চারজনের সংসার টিমটিমিয়ে চলে। জসিম বলেন, সবজি কিনছি তাতেই ৩৫০ নাই। এরপর অন্য বাজারসদাই। ক্যামনে আমাগো জীবন চলে একটু অঙ্ক মেলান। আল-আমিন, টিটু ও জসিমের মতো বাজার পরিস্থিতি নিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত আরো ছয়জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। মাঝারি মানের চালের কেজি ৭০ টাকা। ফার্মের ডিমের হালি ৫২ টাকা, চাষের পাঙাশ ২২০-২৮০ টাকা, রুই ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া। কিন্তু আয় এক পয়সাও বাড়েনি। ধারদেনা কিংবা সঞ্চয় ভেঙেও নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো টানাপোড়েন ঘোচাতে পারছে না। এর মধ্যে ধাপে ধাপে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে কয়েকজন কলেজ ছাত্র এসেছে ম্যাচের খরচ করতে, তারা মরিচ ৫ টাকা , শুকনো মরিচ ৫ টাকার, আদা ৫ টাকার ও সবজি দাম করে হাফ কেজি করে ক্রয় করে। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা ম্যাচের খরচ করতে আসছি। ম্যাচে দৈনিক জন প্রতি খাবার ফি ৪০ টাকা করে তুলি চাল নিজের ম্যাচে থাকি ৪০ জন কিন্তু সবসময় কেউ না কেউ থাকে না রাতে ৩৫ জনের খরচ করছি বাজারে এসে সবজি ও অন্যান্য জিনিসের দাম শুনে মাথা ঘুরে যায় । কি আর করার কষ্ট করে অল্প খেয়ে থাকি আরকি। এছাড়া উপায় নাই। এ ব্যপারে লালবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা খলিল বলেন, আমরা যে সবজি ক্রয় করতাম ৩০ টাকায় এখন সেটা ক্রয় করতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। দাম তো আর আমরা বাড়াই না। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, সবজির দাম চড়া হওয়ায় এখন ক্রেতারা ক্রয় করছে কম। সবজি ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, আগের চাইতে বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে মানুষ অল্প অল্প ক্রয় করে। বাজারে সবজির সরবরাহ কম, তাই দামও বেশি। তবে এবার সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। হয়তো বন্যার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। কারমাইকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) আব্দুর রউফ বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষের মাছ-মাংস কেনার সাধ্য ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে। শাকসবজি কেনার সাধ্য থাকলেও অস্বাভাবিক দামের কারণে এখন সেগুলোর ধারেকাছে ভেড়া কঠিন। নিত্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল হওয়ায় মানুষ ভীষণ কষ্টে আছেন। এটা কেউ বুঝতে চান না। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। চাহিদা নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। চাপ প্রয়োগ করে নয়, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বাজার সহনীয় রাখতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নজরদারি প্রয়োজন। রংপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মো. জুননুন বলেন, দেশে মজুদদারি প্রতিরোধে আইন হয়েছে। এ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ কওে সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের দৌরাত্ম্য রোধ করা হলে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে।