রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: মায়ের মুখের ভাষা বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহাসিক প্রতীক শহীদ মিনার। যে মিনার বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী। অথচ রংপুর বিভাগের ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো সেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর আর স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় শিক্ষার্থীরা সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম অজানা শহীদদের আত্নত্যাগের ইতিহাস জানতে পারছে না। শুধু তাই নয় বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানও করতে পারছে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৯ হাজার ৫৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে শহীদ মিনার। আর ৪ হাজার ৬১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তবে বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। যৌথভাবে সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায়। স্থানীয়রা বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদ ও সংগ্রামীদের স্মরণ করেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। এতে দুর্ভোগসহ নানা সমস্যা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি করছে সর্বস্তরের মানুষ। রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৮৩৫টিতে, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৯২টির মধ্যে ৩৫৪টিতে, পঞ্চগড়ে ৬৬৩টির মধ্যে মাত্র ১২৩টিতে, দিনাজপুরে ১ হাজার ৮৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৪টিতে, নীলফামারীতে ১ হাজার ৮৫টির মধ্যে ৮৩২টিতে, লালমনিরহাটে ৬৬৮টির মধ্যে ৪৪৭টিতে, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৪০টির মধ্যে ২১৬টি রয়েছে এবং গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৬৫টির মধ্যে ২৫৪টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে। আবার কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দূরে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ না করা প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষকগণ বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে। রংপুরের ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বলেন, সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। শহীদ মিনার আমাদের ইতিহাস ও অর্জনের অন্যতম স্তম্ভ¢। বর্তমানে বিভাগের অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এতে করে জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না। ফলে তারা ইতিহাস চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশ কিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকিগুলোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দিনাজপুর জেলা পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল পরিবেশক মালিক গ্রুপের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
জিন্নাত হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে দিনাজপুর জেলা পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল পরিবেশক মালিক গ্রুপের উদ্যোগে...