ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন আমলে নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় আসার পর অনুগত আমলাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নানা উদ্যেগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকারের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি হয়। জনপ্রশাসনের মৌলিক কাঠামোয় প্রকৃতপক্ষে সিনিয়র সচিবের কোনো পদ নেই।
মূলত অনুগত আমলাদের দল তৈরি ও তাদের পুরস্কৃত করতেই এ পদ সৃষ্টি করেন শেখ হাসিনার জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। জনপ্রশাসনের মৌলিক কাঠামোয় না থাকা এই সিনিয়র সচিব ও গ্রেড-১ পদটি বিলুপ্তির সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংষ্কার কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এইচ টি ইমাম আওয়ামী মনোভাবাপন্ন কয়েকজন আমলাকে নিয়ে আমলাতন্ত্রের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়ভিত্তিক একটি ডাটাবেজ তৈরি করেন। এরপর মেধাক্রমে শীর্ষে থাকা কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েন। আর পদোন্নতি পান মেধাক্রমের অপেক্ষাকৃত নিচের কর্মকর্তারা। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি করা হয় ও অনুগতদের ওই পদে পদায়ন করা হয়। অনুগত আমলাদের পুরস্কৃত করতে এইচ টি ইমামের আগ্রহ ও পরামর্শেই এসব পদ সৃজন করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এসব আমলার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ আরো নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তাদের। আর সিনিয়র সচিবদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের পরে এবং সচিবের ওপরে।
জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তাদের করা সুপারিশগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল গত মাসে, কিন্তু আমরা আমাদের কাজের কারণে পারিনি। কারণ, আমরা মাঠে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে কথা বলেছি, অনলাইনে আমরা মতামত নিয়েছি। এগুলোর ভিত্তিতে মঙ্গলবার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে স্বাক্ষর করবো। আগামীকাল (বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাবো এবং তার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করবো। একই সঙ্গে কাল আইন কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।’
প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি সুপারিশ থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন এর বাইরে আমি কিছু জানাতে পারবো না।’
এ সময় পাশে থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সবাই জানবেন। জমা দেওয়ার পরে সবাই জানুক এতে ভুল বোঝাবুঝির অসুবিধা থাকে না।’
এরপর কমিশন প্রধানসহ সদস্যরা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে বের হওয়ার সময় মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে সুপারিশ করেছি সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অসম্ভব কিছু হলে তো সেগুলো সুপারিশ করতাম না। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না সেটা তো এখন সরকার বুঝবে।
গত ৩ অক্টোবর ৮ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে কমিশনের সদস্য সংখ্যা আরও তিনজন বাড়ানো হয়। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করে তুলতে এ কমিশন গঠন করা হয়।
৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এরপর তিন দফা বাড়িয়ে কমিশনের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আগেই প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে কমিশন।
কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক যুগ্ম-সচিব রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ফিরোজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহীনা সোবহান, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেদী হাসান।