এস এম রাজু আহমেদ
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের কোম্পানিকে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ৪শ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করে বহাল তবিয়তেই দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। স্বাধীনতাবিরোধী নেতা সৈয়দ মঞ্জুরুল আহসানের সন্তান এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে যোগদানের পর থেকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটকারী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ডিজিএম আব্দুল বারেকের দুর্নীতি তদন্তে সত্য প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে শাস্তি না দিয়ে বরং তাকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ করে নিজেই ফেঁসে গেছেন এই কর্মকর্তা। তবে সাধারণ বীমার অভ্যন্তরে কানপাতলেই শোনা যায় ডিজিএম আব্দুল বারেককে শাস্তি দিলে এমডি শাহরিয়ার নিজেই বড় ধরনের দুর্নীতিতে ফেঁসে যাবেন। একারণে তিনি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ডিজিএম আব্দুল বারেক ও এজিএম নাজিম উদ্দিন আলমের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্তে সত্য প্রমাণিত হওয়ার পরেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে তাদেরকে রক্ষা করতে চাকুরীর বিধিমালা লঙ্ঘন করে আইডিআরের কাছে সরাসরি লিখিত সুপারিশ করেন সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। যা বীমা কর্পোরেশন শিল্পের ইতিহাসে এটা এখন বিরল ঘটনা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। দুর্নীতিবাজ ডিজিএম আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এমডি নিজেই ফেঁসে যাবেন। কারণ এমডি শাহরিয়ার আহসানের হাতের স্পর্শেই ডিজিএম আব্দুল বারেক দপ্তরের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের চাকুরীতে যোগদানের সময় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা এই এমডি সিন্ডিকেটের হাতে ঘুষ দিতে হয়েছে।
কারন আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়পত্র ছাড়াই এসব প্রার্থীদের চাকুরীতে নিয়োগ দেন এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। আর এই অনিয়মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডিজিএম আব্দুল বারেক ও জিডিএম জাকির হোসেন। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি এক জায়গায় কোনো কর্মকর্তার থাকার কথা নয়। কিন্তু পুনঃবীমার উপ মহাব্যস্থাপক জাকির হোসেন ২৫ বছর চাকরি জীবনের সাড়ে ২৪ বছর ধরে একই জায়গায় কাজ করছেন। জিডিএম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিমান বাংলাদেশের পুনর্বিমার টেন্ডার কাজটি একটি অখ্যাত কোম্পানীকে পাইয়ে দিয়েছেন এমডি শাহরিয়ার আহসান। আর এই কাজের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নিয়ে এই চক্রটি রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন ৪শ কোটি টাকা। শুধু ডিজিএম বারেক বা জিডিএম জাকির হোসেনই নয় অর্থলোপাটকারী এরুপ ২০ দুর্নীতিবাজদের ‘রক্ষাকবচ’ হয়ে কর্পোরেশন চালাচ্ছেন এই এমডি। সাধারণ বীমার ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৭ টাকা তসরুফের দায়ে ২০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান ২৮ মার্চ-২০১৭ তারিখ সাধারণ বীমার এমডি শাহরিয়ার আহসানকে চিঠি দিলেও কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ রেটের ওপর নির্ভর করে। ট্যারিফ নির্ধারিত পণ্যের কোন ঝুঁকি না থাকলে আইডিআরএ কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী বীমা ব্যবসা অবলিখন করতে হয়। এক্ষেত্রে এমডি শাহরিয়ার আহসানের নির্দেশনা মতো কোনো বীমা গ্রহীতার কমিশন দেয়া না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট অবলিখনকারী কর্মকর্তাকে হয়রানি, ঢাকার বাহিরে বদলি করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মহাব্যবস্থাপক ফজলুল হক এর জলন্ত উদাহরণ। ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে বীমার প্রিমিয়াম প্রতি ১০০ টাকায় সাড়ে ১৭ পয়সা। কিন্তু এমডি শাহরিয়ার মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে শাহজিবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রাংশ আমদানিতে বীমা প্রিমিয়ামে ১০ শতাংশ কমিয়ে দেন। এতে সরকারের ক্ষতি হলেও নিজেদের পকেট ভারী হয় পুরোদমে। এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান নিজেই এমন সব অপকর্মে লিপ্ত হওয়ায় কোন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিতে পারেন না। আর এসব তথ্য কোনভাবেই যেন সংবাদ কর্মীদের হাতে পৌঁছাতে না পারে সে কারণে তিনি বীমা কর্পোরেশনের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে সংবাদকর্মীদের যোগাযোগে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে রেখেছেন। বীমা কর্পোরেশনের গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজন কোন সংবাদকর্মীদের তাদের অনুমোদন ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না এবং এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান নিজেও কোন সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন না। তার কাছে লিখিত বক্তব্য পাওয়ার আবেদন করেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়নি।