ইসলামী ব্যাংকগুলোকে লুটপাটের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল বিভিন্ন লুটেরা গোষ্ঠি। এতে দুর্বল হয়ে পড়ে শীর্ষে থাকা ইসলামী ব্যাংকগুলো।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের অনিয়ম শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেপে রাখা হলেও সরকার পতনের পর এসব অনিয়মের প্রকৃত চিত্র বেড়িয়ে আসতে থাতে। আস্থার সংকট তৈরি হয় পুরো ব্যাংক খাতে। লুটেরাদের লুটপাটের খেসারত দিতে হচ্ছে সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংককে।
ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্তা কমেছে। বিশেষ করে সঞ্চয়কারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাওয়ায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত ক্রমাগত কমছে। এক মাসের ব্যবধানে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। আমানত কমলেও বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ও রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা, যেখানে তার আগে মাসে ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের অক্টোবর শেষে শরীয়াহ ভিক্তিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ের (পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, প্রচলিত ব্যাংকের ইসলা ইসলামী ব্যাংকিং শাখা, ইসলামী উইন্ডো) মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭কোটি টাকা। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৪ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাসে আমানত কমেছে ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
তবে আমানত বেড়েছে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা, ইসলামী উইন্ডোগুলোতে। এক মাসে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে আমানত বেড়েছে ৬৩২ কোটি টাকা। আর ইসলামী উইন্ডোগুলোতে বেড়েছে ৬৫৮ কোটি। এই দুই খাতে আমানত বাড়ার কারণে মোট ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আমনতের পতন কিছুটা কমেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট এস আলম গ্রুপ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন ৬ ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া শতভাগ মার্জিন ছাড়া নতুন করে এলসি (ঋণপত্র) না খোলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
তবে গত ৫ ডিসেম্বর এই ছয় ব্যাংকের এলসি খোলায় শতভাগ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ছয়টি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মোট বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে আলোচিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৫৮ কোটি, প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে ৪৪৭ কোটি ও উইন্ডোজগুলোতে বেড়েছে ৩৮১ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সংকটাবস্থায়ও আমরা নতুন আমানত সংগ্রহ করছি। ইসলামী ব্যাংকগুলোতে একটা প্যানিক তৈরি হয়েছিল। যার কারণে অনেক গ্রাহক একসাথে টাকা তুলতে এসেছিল।
এখন এক দিনে যদি সব মানুষ টাকা তুলতে আসে তবে তো কোনো ব্যাংকই তা দিতে পারবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের যে তারল্য সহায়তা দিয়েছে তা যদি সময়মতো পাওয়া যেত তবে এই সংকট তৈরি হত না। আমরা যদি গ্রাহকের চাওয়ার সাথে সাথে টাকা দিতে পারতাম তবে তারা আবারও ব্যাংকেই টাকা রাখত। এখন আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।
এদিকে কয়েকটি ব্যাংকের এলসি বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পরে ইসলামী ব্যাংকিংরে মাধ্যমে বেড়েছে আমদানি পরিশোধের পরিমাণ। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমদানি পরিশোধ ছিল ১৩ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। তার যা তার আগের মসের থেকে ৭১৪ কোটি টাকা বেশি। তবে আমদানি পরিশোধ বাড়লেও কমেছে রপ্তানি। গত অক্টোবরে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। যা তার আগের মাসের থেকে ৬৯০ কোটি টাকা কম।
অপরদিকে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোত বড় উল্লম্ফন প্রবাসী আয়ে। শত সংকটের পরও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমেই রেমিট্যান্স পাঠাতে আস্থা রেখেছেন প্রবাসীরা । তথ্য বলছে গত বছরের অক্টোবর শেষে ইসলামী ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরের থেকে ৫৩৬ কোটি টাকা বেশি।