বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।।
তক্ষক কি?
তক্ষক টিকটিকির মতো দেখতে এক ধরনের সরিসৃপ জাতীয় প্রাণী যা সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলে পাওয়া যায়। তক্ষক ৩০ সে.মি বা ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। তক্ষক সাধারণত ধূসর রঙের হয়ে থাকে যার উপর লাল লাল ফোঁটা থাকে; তবে পরিবেশ অনুযায়ী তক্ষক গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। পুরুষ তক্ষকের গায়ের রঙ স্ত্রী তক্ষকের তুলনায় উজ্জল হয়ে থাকে। তক্ষকের ওজন ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ইংরেজি নাম – Tokay gecko.
তক্ষকের দাম কত?
সাধারণত ওজন ও বয়সভেদে তক্ষকের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সিন্ডিকেট হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ৩০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৭ কোটি টাকারও বেশি। সাধারণত চীনা ওষুধ তেরীতে প্রয়োগ, AIDS এবং ক্যান্সার এর প্রতিষেধক হিসেবে এর গুণাগুন আছে শুনা যায় বলে তক্ষকের মূল্য এতো বেশি।
তক্ষক কেন এতো দামী?
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তক্ষককে সৌভাগ্য ও উর্বরতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এটা ধারণা করা হয় যে ইহা ড্রাগন থেকে এসেছে।
মূলত ৪ টি কারণে তক্ষকের দাম খুব বেশি বলে ধারণা করা হয়ঃ
১) AIDS বা HIV ভাইরাস প্রতিরোধ করেঃ ধারণা করা হয় যে, তক্ষক AIDS বা HIV ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী এবং এর জিহ্বা এবং রক্ত দিয়ে HIV ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ তৈরী করা হয়। তবে মেডিকেল সাইন্সে ইহার কোনো নির্ভরযোগ্য সত্যতা বা গবেষণা নেই, ইহা লোকমুখে প্রচলিত তথ্য।
২) ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ধারণা করা হয় যে, এর শরীরে টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে।
৩) চাইনিজ ওষুধ ‘জি ঝি’ (Ge Jie) তৈরীতেঃ চীনের ঐতিহ্যবাহী ‘জি ঝি’ তৈরীতে তক্ষককে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চীনারা বিশ্বাস করে এই ওষুধ কিডনী ও ফুসফুসকে পুষ্ট করে। তবে মেডিকেল সাইন্স এ ধরনের ওষুধকে সমর্থন করে না।
৪) বণ্যপ্রাণী সংগ্রহের উদ্দেশ্যেঃ ইহা একটি সংকটাপন্ন বন্য-প্রজাতি। অনেক অবৈধ সিন্ডিকেট রয়েছে বিভিন্ন দুঃষ্প্রাপ্য বণ্যপ্রাণী কেন-বেচা করে; তাদের ফলেও এই প্রাণীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তক্ষক কেনা-বেচা কি বৈধ?
উত্তরঃ জ্বী-না। ইহা কেনা-বেচা আন্তজার্তিকভাবে অবৈধ।
বাংলাদেশে তক্ষক কেনা-বেচা বা তক্ষক অবৈধভাবে সংরক্ষণ অপরাধ। বাংলাদেশের মতো চীন-ফিলিপাইন ও অনান্য দেশেও অবৈধ। বিশেষভাবে ফিলিপাইনে এই প্রাণী সহ ধরা পড়লে ১২ বছর জেল এবং ১০ লক্ষ ফিলিপিনো পেসো জরিমানা করার আইন রয়েছে।
তক্ষককে কি পোষ মানানো সম্ভব?
উত্তরঃ তক্ষক সাধারণত আগ্রাসী মনোভাব ধারণকারী বন্যপ্রাণী। এই প্রাণী খুবই জোড়ে কামড় দিতে পারে এবং প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে অনেকেই প্রাণীটিকে পোষ মানানোর চেষ্টা করে। পরামর্শ হচ্ছে, যদি আপনি বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত ভালো জ্ঞান না রাখেন এবং আপনার ঘরে ছোটো শিশু থেকে থাকে তাহলে এ প্রাণীটি পোষ না মানানোর চেষ্টা করাই ভালো।
তক্ষক পেয়ে গেলে কি করবো?
উত্তরঃ যেহেতু ইহা একটি সংকটাপন্ন বণ্যপ্রাণী তাই ইহা কোনোক্রমে ধরতে পারলে দ্রুত বাংলাদেশ বন-বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা উচিত।
আর কোনোক্রমেই বিক্রি করা উচিত নয় এবং ইহা কেনার জন্য টাকাও বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, বাংলাদেশে এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা লোভের বশবর্তী হয়ে তক্ষক ক্রয়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছে।
যেহেতু ইহা ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ এবং আইনগত অপরাধ, এছাড়াও এর কোনো নির্ভরযোগ্য বাজার নেই তাই সকলেরই এই লোভ পরিহার করা উচিত।
উৎসঃ