জুমার নামাজের সময় বাসায় গাড়ি প্রবেশকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় একদল মুসল্লি ‘হামলা’ চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এসময় এই অধ্যাপক এবং তার গাড়ি চালককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, জুমার সময় বাসার গেটের সামনে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের সঙ্গে ‘তর্কাতর্কি হয়েছে’।
শুক্রবার (১ জুলাই) জুমার নামাজের সময় রাজধানীর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ৬/এ নং সড়কের বাসায় এই ‘হামলা হয়’ বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর মেয়ে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘আজকে জুমার সময় কয়েকশ মানুষ আমাদের গেটে হামলা করে। গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। আমার বাবা আর ড্রাইভারের গায়ে হাত তোলে। আমার মা ও দারোয়ানকেও গালিগালাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘একটি চক্র বাসার গেটের সামনে নিয়মিত বাজার বসায়। সবজির ভ্যান সব গেটের সামনে। আমাদের গেটে কোনোভাবেই গাড়ি ঢুকতে দেয় না। গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছিল না আজকেও। বাবা বাইকওয়ালাকে বাইক সরাতে বলেন। তারা বলেন, সরাবেন না। এরপর হঠাৎ করেই ‘নাস্তিক’ বলে গেটে হামলা শুরু করে। তারপর হিন্দু বলে চিৎকার শুরু করে। ঢিল ছোড়ে, তারপর গেট ভাঙার চেষ্টা করে। কয়েকশ’ মানুষ জড়ো হয়ে নাস্তিক বলতে থাকে। নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দিতে থাকে।’
অধ্যাপকের মেয়ে আরও বলেন, ‘তারা বলেন, এই বাসার সামনে কোনও কুকুর থাকতে পারবে না। কুকুরকে খাওয়ানো যাবে না। হুমকি দেয়, আমাদের মেয়েদের বের হতে দেবে না। কুকুরগুলোকে মেরে তাড়িয়ে দেবে। জুমার নামাজের পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ রকম চলতে থাকে। কেউ আসেনি সাহায্য করতে।’
এলাকার মুসল্লি, ভ্যানওয়ালা ও কিছু বস্তির ছেলেরা হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এর মধ্যে দেড়ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। আর বাসার সামনের স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যার ও কয়েকজন শিক্ষক আসেন। আমার বাবা একজন শিক্ষক, একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব। আজকে তাকে অসম্মানিত হতে হলো। হামলার শিকার হতে হলো।’
রতন সিদ্দিকীর মেয়ে বলেন, ‘বাসার সামনে ভ্যান দিয়ে বাজার বসালে কিছু বলতে পারবে না, এ কেমন কথা। যে মানুষ আজীবন সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে সমাজে চলে, আজকে মসজিদে বসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হামলা করা হয় কেন? তারপরও আমার বাবা হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েছে, সেই হামলাকারীদের কাছে। এর দায় কার?’
তিনি আরও বলেন, ‘সারাজীবন এই মানুষটি সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। রাজপথে থেকেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলেছেন। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলেছেন। আজকে তাকেই হামলার শিকার হতে হয়েছে।’
মেয়ে আরও বলেন, ‘দুপুরে আমার বাবা ও মা গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। তারা গেটের সামনে এসে আটকে যায়। এ সময় বাসার গেটের সামনে ধেকে মুসল্লিদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তারা সরবে না বলে গালিগালাজ করে। এমন কোনও গালি নেই তারা বাবা-মাকে দেয়নি। তারা মারমুখী হয়ে ওঠে, এরপর কোনোরকমে আমার মা ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু বাবা ও গাড়িচালককে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে মারধর করে।’
এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরার বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, ‘মূলত রতন সিদ্দিকীর বাসা মসজিদের পাশে, আজকে জুমার দিন ছিল, সবাই বাসার সামনে মোটরসাইকেল, ভ্যান রেখে নামাজ পড়ছিল। এ নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়।’
প্রসঙ্গত, ড. রতন সিদ্দিকী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নাটকে অবদান রাখায় ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন এই অধ্যাপক।