বৃহস্পতিবার সকাল ১১ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আদালতে সীমান্ত হত্যার বিচারের দাবি, কুড়িগ্রামে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর লাঠিচার্জ ও ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মামুন এর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. আবদুস সালাম আজাদ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্বেচ্ছা বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফরিদ আকবর। মোঃ রমিজ উদ্দিন রুমি’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তা রাখেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সমন্বয়ক ড. আলহাজ্ব শরিফ শাকি, আমিনুল ইসলাম বুলু, আরিফ বিল্লাহ, অধ্যাপক মোঃ শাজাহান শাজু, সুলতান জিসান উদ্দিন প্রধান, অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান মিন্টু, আশরাফুল আলম চিশতি শাহীন, মো. সাহিদুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় বক্তাগণ বলেন, সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। নিরস্ত্র শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশীদের একের পর এক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েই চলছে তারা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালাতারী আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার নং-৯৩০এইচএস এর নিকটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসএফ অবৈধ অনুপ্রবেশ করে লাঠিচার্জ করে ৫ জন বাংলাদেশিকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশী কৃষকদের উপর গুলি ও গ্রেনেডে হামলা চালায়, স্থলবন্দর অভিমুখে ভারতীয় নাগরিকদের দিয়ে বিভিন্নরকম পরিকল্পিত কর্মসূচি দিয়ে আমদানি রপ্তানিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। সনাতনী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে নানাবিধ অযৌক্তিক কর্মসূচি দিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা বিলোনিয়া সীমান্তে এসে উস্কানি মূলক আচরণ করে মোহাম্মদ ইলিয়াসকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আসামের করিমগঞ্জ সিমান্তে সনাতনী ঐক্য মঞ্চের বাঁধার কারণে সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবয়াবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের চৌকা সিমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ উত্তেজনা সৃষ্টি করে যা মাসব্যাপী চলতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর ২৪ তারিখ পঞ্চগড় সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেন কে গুলি করে তহ্যা, ৮ জানুয়ারি বুধবার নওগাঁ জেলার ধমরাইটা এর বস্তাধর সিমান্তে গোলযোগ সৃষ্টি করে ভারতীয় বিএসএফ। লালমনিরহাটের দহগ্রাম সিমান্তে নোম্যান্সল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের অযুহাতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। ১৩ তারিখে সাতক্ষীরায় ফাঁকা গুলি করে আতংক ছড়িয়ে কৃষি কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। কুমিল্লার আদর্শ সদরের জগন্নাথপুরে নোম্যান্সল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের জন্য স্থানীয়দের ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাপাইনবয়াবগঞ্জে কৃষককে গুলি করে আহত করা ও সুনামগঞ্জের বিসম্বরপুরে সাইদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা সহ অসংখ্য ঘটনার জন্মদেয় ভারতীয় বাহিনী। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে জাতিগত সংঘাত সৃষ্টির সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে।
বক্তাগণ আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে প্রায় আট শতাধিক বাংলাদেশি নিহত ও ৭৬১ জন আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে বিএসএফের হাতে ৩০ জন বাংলাদেশি সীমান্তে নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ২৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই পরিসংখ্যান থেকেই এটা স্পষ্ট যে বিএসএফ সীমান্তে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ব্যাপকহারে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে জীবনহানি ঘটাচ্ছে। বক্তাগণ ফেলানী থেকে স্বর্ণা দাসসহ সকল হত্যার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দাবি করেন।
এসময় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিকে সর্বদা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে থাকার আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, সীমান্ত এখনো সম্পূর্ণরুপে সুরক্ষিত হয়নি। তাই সীমান্ত সুরক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২৪ ঘন্টা পাহারা নিশ্চিত করতে হবে।