এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর পোশাক রপ্তানি কমবে ১৪ শতাংশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। এর ফলে, ২০৩১ সাল নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি কমতে পারে ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বার্ষিক কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের টেকসই আরএমজি বৃদ্ধি জন্য সাপ্লাই চেইন গতিশীলতা’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

গবেষণাটি বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন ২০২৪ সালের বার্ষিক বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্টে (এবিসিডি) উপস্থাপন করেন। এ গবেষণায় আগামী দিনে তৈরি পোশাক শিল্পের যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হতে হবে তা তুলে ধরা হয়।

 

বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সবচেয়ে বড় উদ্বেগের একটি হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ডিউটি-ফ্রি, কোটাহীন সুবিধা হারানো। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ আর বড় বড় উন্নত দেশগুলোর বাজারে ডিউটি-ফ্রি সুবিধা পাবেনা।

বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজারে যেখানে পোশাক, কাপড় এবং আধা প্রস্তুত পণ্যের উপর ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এই সুবিধাগুলোর অবসান এবং এলডিসির জন্য বরাদ্দ বিশেষ নিয়মাবলী হারানোর কারণে আরএমজি খাতের রপ্তানি আয় প্রায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা ২০৩১ সাল নাগাদ হতে পারে।

গবেষণাটিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলো শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশের জিডিপিতে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। আরএমজি খাতের রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয় যা বর্তমানে ৮৪ শতাংশ।

 

এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে গবেষণাটি পরামর্শ দিয়েছে, আরএমজি কোম্পানিগুলোকে খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। প্রধান খরচ কমানোর ক্ষেত্রগুলো হলো কাঁচামাল ব্যবস্থাপনা (১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমানো সম্ভব), মজুরি (৯ দশমিক ১৪ শতাংশ কমানো সম্ভব) এবং পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার খরচ (৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমানো সম্ভব)। এই খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করা বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমাতে গবেষণায় বলা হয়েছে, ২১ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেশীয় বাজার থেকে সস্তা এবং ভালো মানের কাঁচামাল সংগ্রহে মনোনিবেশ করেছে। এ ছাড়াও, তারা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ট্রেড ফেয়ার এবং সরাসরি অর্ডারের মাধ্যমে তাদের বাজারে প্রবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করছে।

গবেষণাটি উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়েও বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে। বিশেষত, শিপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাস্তার অবকাঠামো সমস্যা, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে অদক্ষতা এবং বন্দরের কার্যক্রমে দেরি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশেষত, এশিয়ার সবচেয়ে অকার্যকর কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্দর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

গবেষণাটি উল্লেখ করেছে, সরবরাহ চেইন অদক্ষতার সমাধান করতে দ্রুত নীতি পরিবর্তন প্রয়োজন। আরএমজি খাতের সব অংশীজন সরকার, উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে যাতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী উন্নত বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। সরকারের উচিত অবকাঠামো উন্নয়ন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

গবেষণাটির ফলাফল বাংলাদেশের আরএমজি খাতের টেকসই এবং প্রতিযোগিতামূলক বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী এবং টেকসই সরবরাহ চেইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরেছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন মনজুর হোসেন, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক, তার সহযোগী ছিলেন গবেষণা ফেলো তাহরীন তাহরিমা চৌধুরী এবং গবেষণা সহায়ক মো. নাদিম উদ্দিন।

Exit mobile version