ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘আমরা নারী’ সভাপতিকে হয়রানির প্রতিবাদে আইনি নোটিশ 


ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি:
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টানায় প্রতিবাদকারী ‘আমরা নারী’-এর নেত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আয়োজক সংগঠক ডিসি একুশে এলায়েন্সের সমন্বয়কারী ও ধ্রুপদ ইঙ্ক’র সভাপতি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঠানো নোটিশে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। উক্ত নোটিশের জবাবে সাংগঠনিক বিধিমালা লঙ্ঘনসহ তাকে হয়রানির দায়ে পাল্টা আইনি নোটিশ দিয়েছেন ‘আমরা নারী’-এর সভাপতি মোহসিনা রিমি।
জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যের আর্লিংটন শহরের কেনমোর মিডল স্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত ডিএম সালাউদ্দীন মাহমুদ তার বক্তব্য দেবার সময় তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আবার ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তিনি চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিষয়টিকে বেশি ফোকাস করতে গেলে উপস্থিত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি তাদের তোপের মুখে পড়েন ফলে অনুষ্ঠানের বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহসিনা জান্নাত রিমির প্রতিবাদের মুখে তিনি মঞ্চ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এ ঘটনার ৪ দিন পর আয়োজক সংগঠক ডিসি একুশে এলায়েন্সের সমন্বয়কারী ও ধ্রুপদ সভাপতি হিরন চৌধুরী রিমিকে  ডিসি একুশে এলায়েন্সের সুনাম ক্ষুণ্ণ এবং দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। উক্ত নোটিশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। নোটিশের জবাবে  ‘আমরা নারী’-এর সভাপতি ও মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহসিনা জান্নাত রিমি সাংগঠনিক বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে পাল্টা একটি আইনি নোটিশ জারি করেন।
আইনি নোটিশের জবাবে আইনজীবী বেনজামিন আর ইনম্যান বলেন, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে আপনার ( ডিসি একুশে এলায়েন্সের সমন্বয়কারী ও ধ্রুপদ ইঙ্ক’র সভাপতি হিরন চৌধুরী) দ্বারা জারি করা কথিত ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ সম্পর্কে লিখছি, যা আপনি সুন্দরবনের সভাপতি নুরুল আমিন এবং আমার মক্কেল আমরা নারী-এর সভাপতি মোহসিনা রিমিকে পাঠিয়েছেন। চিঠিটি ডিসি একুশে অ্যালায়েন্স (ডিসিইএ)-এর অফিসিয়াল লেটারহেডে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। আমার মক্কেল আপনার এই কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, কারণ এটি আপনার সাবেক সমন্বয়কারী হিসেবে ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে এবং ডিসিইএ পরিচালন নির্দেশিকার (Operating Guidelines) নির্ধারিত প্রক্রিয়াগত শর্তাবলী লঙ্ঘন করেছে।

১. ডিসিইএ-এর কাঠামো ও দায়িত্ব সম্পর্কে পটভূমি
ডিসিইএ একটি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম যা  ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়া (ডিএমভি) এলাকার বিভিন্ন নিবন্ধিত অলাভজনক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাংলাদেশি সংগঠনের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট লিখিত নির্দেশিকা অনুসারে পরিচালিত হয়।
প্রতি বছর সদস্যরা তাদের সদস্য ফি প্রদান করে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (IMLD) অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি হোস্ট সংগঠন নির্বাচন করে, যা ডিসিইএ-এর নিয়ম মেনে চলে। সমন্বয়কারীকে একটি ভোটাধিকার দেওয়া হয় এবং তাকে অবশ্যই ডিসিইএ-এর নিয়ম মেনে তার দায়িত্ব পালন করতে হয়।
২. মিস্টার চৌধুরী ২০২৪ সালের পর সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করার কোনো অধিকার রাখেন না। ডিসিইএ-এর অপারেটিং গাইডলাইনের ৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ধ্রুপদ, ইনক. (Dhroopad) ২০২৪ সালের জন্য হোস্ট সংগঠন নির্বাচিত হয় এবং আপনাকে (মিস্টার চৌধুরী) ঐ সংগঠনের দ্বারা সমন্বয়কারী মনোনীত করা হয়। কিন্তু, অনাকাঙ্ক্ষিত আবহাওয়ার কারণে ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এর পর আপনি সদস্যদের ভোট ছাড়াই নিজেকে সমন্বয়কারী হিসেবে ধরে রাখার ঘোষণা দেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং ডিসিইএ-এর নিয়ম পরিপন্থী।
৩. আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন
আপনি ডিসিইএ-এর নিয়ম লঙ্ঘন করে কয়েকজন ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে: অনুপযুক্ত সদস্যদের ভোটাধিকার প্রদান ও সদস্যপদ নবায়নের অনুমতি (ধারা ৯(এইচ) লঙ্ঘন)। যেসব সংগঠন সদস্যপদের যোগ্যতা অর্জন করেনি, তাদের সদস্যপদ প্রদান (ধারা ৫(বি) লঙ্ঘন), আপনার সমর্থকদের অতিরিক্ত কথা বলার সুযোগ প্রদান ও বিরোধীদের সময় সীমিত করা এবং মিটিংয়ের কার্যবিবরণী ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত মতামত বাস্তবায়ন।
৪. অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ আপনি আমার মক্কেলকে ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিতে বাধ্য করেছেন এবং ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু, আপনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি কোন নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে।
৫. রাজনৈতিক বিষয়বস্তু প্রচারের মাধ্যমে নির্দেশিকা লঙ্ঘন
ডিসিইএ সদস্যরা ২০২৪ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং কেবলমাত্র ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি একজন অনুমোদনবিহীন বক্তাকে অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয় উত্থাপন করেন, যার ফলে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়।
৬. সমন্বয়কারীর প্রতিহিংসাপরায়ণতা
আপনি স্পিকারের নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মক্কেল এবং জনসাধারণের বৈধ প্রতিবাদ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি, আপনি সভাগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং আমার মক্কেল সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য (যেমন: ‘ট্রাম্পের বান্ধবী’) করার সুযোগ দিয়েছেন, যা ডিসিইএ-এর ধারা ৯(ভি) স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
৭. সদস্য অপসারণের অনিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা
ডিসিইএ-এর ধারা ১৬(এ) অনুযায়ী, সাধারণ সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোট ব্যতীত কোনো সংগঠনকে বহিষ্কার করা যায় না। কিন্তু, ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এর আপনার ইমেইল অনুযায়ী, আপনি কোরাম ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
৮. পদত্যাগের আহ্বান ও জবাবদিহিতার দাবি
উপরোক্ত গুরুতর অনিয়মের কারণে, আমরা দাবি জানাই যে ধ্রুপদ হোস্ট সংগঠন হিসেবে এবং আপনি সমন্বয়কারী হিসেবে পদত্যাগ করুন। নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং নবনির্বাচিত সমন্বয়কারী সিদ্ধান্ত নিক যে ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ আইনানুগ কিনা। যদি আপনি আমার মক্কেলকে হয়রানি চালিয়ে যান, তবে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন।

Exit mobile version