কয়েকটি কবিতা —-বিচিত্র কুমার

কয়েকটি কবিতা

 

০১.

জীবন সাগরের ঢেউ

-বিচিত্র কুমার

 

জীবন সাগরের ঢেউ, একবার ভাঙে, আবার গড়ে—

তরঙ্গে ভাসে আশা, তলদেশে ডুবে বিষাদ।

আলো-আঁধারি মিলিয়ে গড়া দিনগুলো,

যেখানে স্বপ্নেরা আসে ধূসর মেঘের মতো।

 

জীবন কখনো মায়া, মাটির মূর্তি যেমন করুণাময়,

কখনো আবার নিরেট পাথর, কঠিন হাতে আঁকা চিহ্ন।

বাতাসের সঙ্গে বয়ে যায় জীবনের ফিসফাস,

কখনো মধুর, কখনো মেঘের গর্জনের মতো প্রবল।

 

মানুষ পথিক, নিরন্তর চলতে থাকা হাঁটার পথ,

ক্লান্তি ছুঁতে পারে না তার লক্ষ্যবিন্দু।

জীবন এক রংধনু—হাজার রঙের ছায়া,

তবুও প্রতিটি রঙের মাঝে থাকে অদেখা বেদনার ছোঁয়া।

 

০২.

সময় ও যাত্রা

-বিচিত্র কুমার

 

সময় বালির ঘড়ি, মুহূর্তে ঝরে পড়ে ধূলিকণা,

পালাতে চাইলেও আটকে রাখা যায় না তাকে।

পথিকের যাত্রা থামে না, হোক সে ক্লান্ত বা শ্রান্ত,

মৃত্তিকার টানে ফিরে আসে, তবু তার স্বপ্ন থাকে দূর গগনে।

 

জীবন এক মোমবাতি—পুড়ে ফুরিয়ে যায় ধীরে ধীরে,

তবু জ্বলে ওঠে প্রতিটি আলোর ছোঁয়ায়।

প্রতিটি মানুষ এক বৃন্ত ফুল, যা ধীরে ঝরে,

তবু তার সৌরভ রেখে যায় চিরকালের স্মৃতির ভাঁজে।

 

জীবন এক নিঃশব্দ সমুদ্র,

যেখানে বেদনার স্রোত মিশে যায় শান্তির আকাশে।

কিন্তু সেই ঢেউয়ের গভীরে, লুকিয়ে থাকে

আলো আর অন্ধকারের চিরন্তন মেলবন্ধন।

 

০৩.

আলো ও অন্ধকার

-বিচিত্র কুমার

 

জীবন আলো আর ছায়ার খেলা—

যেখানে প্রতিটি হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অশ্রু।

প্রতিটি উজ্জ্বল দিনের পর, রাত আসে অবশ্যম্ভাবী,

তবুও মানুষ আশা করে নতুন ভোরের প্রতীক্ষায়।

 

জীবন এক পুরোনো সুর,

যা কালে কালে বেজে ওঠে হৃদয়ের তারে,

কখনো মধুর, কখনো তীব্র—

তবুও থেমে থাকে না তার ধ্বনি।

 

জীবন নদীর মতো, যার স্রোতে

কখনো আনন্দের ফোয়ারা, কখনো বেদনার ঝড়।

যাত্রার শেষ কোথায় জানা নেই,

তবুও পথ চলতে হয় অবিরাম, নির্বিকারভাবে।

 

০৪.

প্রত্যাশা ও প্রত্যয়

-বিচিত্র কুমার

 

জীবন এক চাতক পাখি, আকাশের দিকে চেয়ে থাকে,

বৃষ্টি আসবে বলে, তার তৃষ্ণা মেটাবে বলে।

প্রতিটি দিনের প্রত্যাশা নতুন স্বপ্নের,

তবুও কখনো আসে না কাঙ্ক্ষিত সেই স্রোত।

 

জীবন এক যুদ্ধক্ষেত্র,

প্রতিদিনের লড়াই নিজেকে জয় করার—

অন্ধকারের মাঝেও আলো খুঁজে নেওয়া,

যেখানে আশাই একমাত্র অবলম্বন।

 

জীবন কখনো একটি পত্রহীন গাছ,

যেখানে প্রতিটি বেদনাই এক একটি ডালপালা।

তবুও সেই বৃক্ষের শিকড় মাটির গভীরে,

অপেক্ষা করে নতুন পল্লবের আগমনের।

 

০৫.

জীবন দর্শন

-বিচিত্র কুমার

 

জীবন নদীর স্রোত, কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল ঢেউয়ে ভাসে।

পথিকের পায়ে বাধা নয়, কেবলই সময়ের তাড়া, গন্তব্যের অন্বেষণ।

জীবন এক মহীরুহ, শিকড় জমিনে, ডালপালা আকাশের দিকে—

নির্বাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা মানুষ খুঁজে ফেরে সেই শিখর।

 

সময় জ্যোৎস্নার মতো—অমলিন, নিঃশব্দে হারিয়ে যায়,

কোনোদিন ফেরা হয় না তার, কেবল স্মৃতির পাতা উল্টায়।

জীবন কখনো গোধূলি, রঙিন আকাশে অস্তাচলের আলো,

কখনো বিষাদ, অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যাওয়া।

 

বটবৃক্ষের মতো শক্ত মন, তবুও হাওয়ার তালে দোল খায়—

প্রতিটি ঝড়ে, প্রতিটি ব্যর্থতায়, থেমে যায় না তার পথচলা।

জীবন কেবল পথের ধুলো নয়, তার মাঝে খুঁজে নিতে হয় মুক্তো।

—-

 

নামঃ বিচিত্র কুমার

গ্রামঃ খিহালী পশ্চিম পাড়া

পোস্টঃ আলতাফনগর

থানাঃ দুপচাঁচিয়া

জেলাঃ বগুড়া

দেশঃ বাংলাদেশ

Exit mobile version