কবি,কে,এম,তোফাজ্জেল হোসেন জুয়েল খান
আবার এলো ঈদুল ফিতর
একটি বছর পরে
খুশির আমেজ আগের মতো
নেই তো কারো ঘরে
লোনে সুদে ভরে গেছে
সোনার বাংলাদেশে
ঘড়ে ঘড়ে পাওনা দারেরা
দিনে দুপুর সকাল বিকাল
সন্ধা রাতে দিচ্ছে হানা
তবুও যারা গায়ের জোরে
করে ফুটানি তারা রাজাকার
নয়তো বাপের ধনে মোতে
এমনি মানুষের এ দেশে
কামাই রুজি কম
জীবন সচল রাখতে সবার
বাহির হচ্ছে দম
ঘড়ে স্বপ্নটাও লণ্ডভণ্ড
এবার ঈদে অনাহারে
কাটবে কারো দিন
কষ্ট ভয় সব ঘুচবে যদি
কালের স্রোতে ভেসে ভেসে
আসছে আবার ঈদ
নেই তবুও কারোর মনে
কেনাকাটার ধুম
ঈদ খুশি ঈদ আনন্দে
ঈদ ক্ষমার ঈদ প্রার্থনার
ঈদ মিলনের আজ ঘড়ে
ঘড়ে ধনী গরীব সবার মনে
আনন্দ আর মজা
হিংসা বিদ্বেষ ভুলে
নাও গুরু জনদের দোয়া
ত্যাগ আর বিলিয়ে দেও
রাগ অনুরাগ যতই থাকুক
হৃদয়ের যত পাষান
ভাইয়ের সাথে ভাই মিলবে
ভুলে মান অভিমান
দ্বীন দুঃখীনির মুখে আজ
ফুটবে সুখের হাসি
তাইতো মনে আনন্দ আজ
এলো ঈদের খুশি
এককাতারে পড়বে নামাজ
ঈদের দিনে সবাই
নামাজ শেষে কোলাকোলি
ঈদ মুসলমানের বড়ই খুশির
পবিত্র উৎসব আবাল-বৃদ্ধ বাদশা
ফকির সবার মুখেই রব
ঈদ মানে আনন্দ
ঈদ মানে খুশির ছন্দ
ঈদ এসেছে ঘরে ঘরে
ঈদ মানে কোর্মা পোলাও
ঈদ মানে সেমাই পায়েশ
ঈদ মানে রোজার শেষে
খাবার আয়েশ ঈদ মানে
খোকা খুকুর নতুন জামা
কেনা ঈদ মানে ছেলে
বুড়োর পাঞ্জাবী পাজামা
নতুন শাড়ী গহনা
কেউ ঈদের খুশিতে হাসে
কেউ বা আবার কাঁদে এমন
ঈদ আজ আনেকেই চায়না
ঈদ মানে কারো সুখের হাসি
ঈদ মানে পথ-শিশুর খাবার বাসি
ঈদে কেউ খুশি হয় সালামী নিয়ে
ঈদে কেউ খুশি হয় সালামী দিয়ে
ঈদের দিন কেউ কাটায় ঘুমিয়ে
কেউ বা বাসায় বাসায় ঘুরে
খাবার খায় চেয়ে চেয়ে
ঈদ কতো রকমে আসে
ঈদ কারো জীবনের আশীর্বাদ
ঈদ আবার কারো জন্য অভিশাপ
কেউ ঈদে সুখ খুজে
একা বসে বসে নিরালায়
কেউ আবার ঈদে সুখ খুঁজে
আপন ঠিকানায়
ঈদে ঝলমল করে
আমাদের শহর ঢাকা
ঈদে ঢাকা শহর হয় যে
ফাঁকা তবুও মানুষ বেঁচে
থাকতে চায় এই রঙ্গিন
ভুবনে ঈদ আসমানি
তাবিজ ঈদ আল্লাহ তালার
রহমতের আশিস
ঈদ বুুঝি প্রজাপতি
রঙমাখা ডানা
চন্দ্রের কাঁধে বসা
টুনটুনির ছানা
ঈদ বুঝি রাজহাঁস
মেঘ ভাসা পরি
আকাশের কাশবনে
দেয় গড়াগড়ি।
ঈদ বুঝি ধলবগা
বাঁশপাতা ফাঁকে
স্বপ্নের ফুলকলি
পালকের তাকে।
ঈদ বুঝি কামিনিরা
যামিনির তরে
জোসনার পাপড়িতে
ছড়া হইচই।
ঈদ বুঝি লালগ্রহ
কুসুমের উম
আসমান ফুঁড়ে নামা
খুশি ঝুমঝুম।
ঈদ মানে জন্মস্থানের টানে ছুটে চলা ঈদ মানে টাকার বিনিময়ে সুখ হাসি দূঃখ কেনা ঈদ মানে মায়ের আদর স্নেহ আর নারীর আলিঙ্গন তাই দূর দূরান্তে ছুটে চলা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ মানুষের মত ছিল না। তাই অন্য সবার মতো তিনি ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। কারণ জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি জেলহাজতে কাটিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন জেলে কেটেছে। ফলে বঙ্গবন্ধুর অনেক ঈদ কেটেছে জেলের ভেতর কয়েদি হিসেবে।পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করার সুযোগ তিনি কমই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হলেও তাঁর ঈদ উদযাপন নিয়ে আমি তথ্যসমৃদ্ধ কোনো লেখা পাইনি। অনেকের লেখার মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঈদ উদ্যাপনের প্রসঙ্গ আছে। বঙ্গবন্ধু নিজেও স্মৃতিকথায় লিখেছেন তাঁর দু-একটি ঈদ পালনের কথা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে জেলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালন করেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘১১ তারিখে রেণু এসেছে ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখা করতে। আগামী ১৩ই জানুয়ারি ঈদের নামাজ। ছেলেমেয়েরা জামা-কাপড় নেবে না। ঈদ করবে না, কারণ বঙ্গবন্ধু জেলে ।
ঈদ হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বাইিক ও প্রকাশ্য একটি নিদর্শন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সভ্য উপাস্য মহান আল্লাহতালা প্রত্যেকে জাতীর বা সম্প্রদায় জন্য নিদৃষ্ট ঈদ পালনের বিধান প্রদান করেছেন ঈদের প্রার্থনায় যেন রাখি দেশটাকে
দুর্নীতিমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নটা যেন পূরণ হয় খুব তাড়াতাড়ি এক পৃথিবী কল্যাণ যেন নেমে আসে দেশের মাটিতে দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাহিরে না যায়
চারদিকে আনন্দে জোয়ার তুলে এমন শতরঙা ঈদ বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোথাও আসে কি না জানা নেই। বাড়ি, নাড়ি কিংবা শিকড়ে ফেরার এমন তোলপাড় করা আবেগ নিয়ে ঈদ উৎসবের উন্মাদনা বোধহয় বাঙালি ছাড়া আর কাউকে ছুঁয়ে যায় না। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলেমিটারজুড়ে ছড়িয়ে যায় যে উৎসবের ঢেউ, মিলনোন্মুখ মানুষের সে অবাধ, অগাধ খুশির জোয়ারে কিছু সময়ের জন্য গোটা দেশই হয়ে ওঠে ‘আনন্দ ময়দান’
ঈদকে কেন্দ্র করে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত চলে নানা আয়োজন। ‘ঈদে বাড়ি ফেরা’ নিয়ে কত ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে যায়, কত মিলন-বিরহ স্মৃতি জমা হয় উৎসবকে ঘিরে। ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ-উত্তেজনা হার মানায় অন্যসব কিছুকে। নতুন পোশাক, পিঠাপুলির সঙ্গে সময়ের বিবর্তনে যুক্ত হয়েছে আরও কত কী
গত দুটি বছর করোনার জন্য কিছুটা ম্লান ছিল ঈদ উৎসব। এবার তাই নতুন ব্যঞ্জনায় সমস্ত ভয়, আতংক আর দুঃসময় মানুষের দুঃখ দুর্দশার মধ্যে ঈদ উদযাপনের তাগিদ সামাজিক দূরত্ব শুনে শুনে কান ঝালাপালা হওয়া দিনগুলো ভুলে এবার তাই মিলনের ডাক মায়া পরবশ সময়ে। এবারের ঈদ তাই অনেকটা রোমাঞ্চকাতর নিরুদ্বেগ আনন্দের পুনরাবর্তনে দুঃখদীর্ণ সময়কে জয় করার মতো ঈদ দিন দিন বিলুপ্তের পথে।
এতদাঞ্চলে ঈদ উদযাপন শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেই থেমে থাকে না। উৎসবের আনন্দ নানা ভঙ্গিমায় ছড়িয়ে যায় ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সবার মাঝে। মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্ববোধ এখানে বড় হয়ে দাঁড়ায় তখন। জাতি হিসেবে আমাদের অনেক এগিয়ে যাওয়ার গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে সংকটের দীর্ঘ তালিকাও। ঈদের মতোন সর্বত্র আনন্দের ঢেউ তোলা এমন উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ মূলত মিলনপ্রত্যাশী
এবারের ঈদকে ঘিরে কিছু প্রত্যাশার কথা বলি। প্রথমেই আশা রাখি, প্রযুক্তি-আসক্ত এই সময়ে ঈদে যেন আমরা বুকে বুক মেলাই বাস্তবে, কোলাকুলি করে ভুলে যাই ভেতরের সব খেদ। এরপর আশা রাখি, ঈদে বাড়িযাত্রা এবং ফেরা যেন নির্বিঘ্ন হয়।
সড়কে যেন কোনো প্রাণ না ঝরে, নৌপরিবহনগুলো যেন কারণ না হয়ে দাঁড়ায় কোনো কান্নার। যেতে যেতে পথে পথে মানুষের ভোগান্তির চিত্র যেন দেখা না যায়। আত্মীয়-পরিজন মিলে কাঙ্ক্ষিত আনন্দ যেন ভাগ করে নেয়া যায়। মা-বাবা কিংবা প্রিয়জনের বুকে যেন নেমে আসে এক ফালি প্রশান্তি।
তৃতীয়ত আশা করি, ঈদকে ঘিরে বোনা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা যেন পূর্ণ হয়। তা যেমন- রাজনীতিক-উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিল্পী, সাহিত্য সম্পাদকের তেমনি দিনমজুর, রিকশাওয়ালাসহ খেটে খাওয়া সব মানুষের। এদেখা গেছে যে, উৎসব এলেই বাঙালির হৃদয়টা কেমন যেন বড় হয়ে যায়।
সবাই ভাগাভাগি করে নিতে চায় উৎসবের আনন্দকে। বৈশাখের দাবদাহে পোড়া দুপুরে সড়কের আশেপাশে বাক্স-পেটরা নিয়ে বসে আছেন যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা সবাই গেছে ‘শপিং মলে’ বলে দীর্ঘশ্বাস তোলা সবজিওয়ালা, লেইস-ফিতাওয়ালা তাদেরও স্বপ্ন পূরণ হোক। স্বপ্ন পূরণ হোক বঞ্চিত, দুখী মানুষেরও।
আমি চাই, সৃষ্টির লক্ষ্যগামিতা একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়। একটি উপলক্ষকে ঘিরে সৃজনশীল মন বহু ধারায় বিচরণ করতে পারে। জীবনের প্রাত্যহিকতার বিপরীতে তখন নতুন অরূপভিসারী হয়ে ওঠে মন। ঈদ তেমনি এক চিত্তশুদ্ধির প্রসন্ন উৎসব। তাই প্রত্যাশা রাখি ঈদকে কেন্দ্র করে সব সৃষ্টিশীলতার জয় হোক।
ঈদকে ঘিরে প্রত্যাশা থাকুক, কোথাও যেন কোনো অপরাধ না ঘটে, দুর্ঘটনা না ঘটে, জানমালের কোনো ক্ষতি যেন না হয় কোনোভাবে।
ঈদে স্বজন-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটি চিরচেনা রীতি। এ আনন্দও ছুঁয়ে যাক সবাইকে। শিশু আর বয়োবৃদ্ধদের প্রতি যেন থাকে বিশেষ নজর। ভ্রমণে বইও থাকতে পারে হাতে। অন্যদিকে, পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্রগুলো ব্যবহারে যেন আমরা সতর্ক হই, পরিবেশবান্ধব হই। কেননা চারপাশটা তো আমাদেরই। গাছ-পাখি, জল সবই আমাদের বন্ধু।
ঈদের প্রার্থনায় যেন রাখি দেশটাকে। দুর্নীতিমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নটা যেন পূরণ হয় খুব তাড়াতাড়ি। এক পৃথিবী কল্যাণ যেন নেমে আসে দেশের মাটিতে। ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে যাক সবাইকে।সামাজিকতায়, সাংস্কৃতিক কুশল বিনিময়ের ‘দৈহিক ভাষা’ যা মূলত মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকার ভঙ্গি, ‘ধর্মীয় আচার প্রতিপালন’, ঈদ বা খুশির ধারণা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, প্রিয়জনদের দূরে রেখে ঈদ করার কষ্ট, চিরায়ত সাংস্কৃতিক অভ্যাস ও মূল্যবোধ, মৃত্যুভয়কেও তোয়াক্কা করে না। বর্তমান করোনা সংকটকালে গণপরিবহন যখন লকডাউনে, তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী পিকাপভ্যানে, ট্রাকের ভেতর তেরপলের তলে আলু, চালের বস্তারমতো গাদাগাদি করে মানুষ শহর থেকে গ্রামমুখী হয়েছে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে।
আবার কেউ অধিক অর্থ ব্যয় করে ভেঙে ভেঙে ইজিবাইক, ইঞ্জিন রিকশা, পেডেল রিকশা, ভটভটি, ভাড়ায় মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, পায়ে হেঁটে ফিরেছে গ্রামে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে। একদল মানুষ নিজেদের মটর সাইকেলে করে ফিরেছে, কেউ ভাড়ায় চালিত ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ফিরেছেন। কেউ হয়তো ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামমুখী হয়েছেন, আর যারা ভিআইপি, তারা হয়তো যথাযথ প্রটোকল নিয়েই নিজ একাকায় আনন্দ ভাগাভাগি কাম রাজনৈতিক দ্বায়িত্ব পালন করতে গেছেন।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায়, নাগরিক মানুষের গ্রামে যাওয়ার সময় ব্যবহৃত যানবাহন ও তাদের ‘ঈদ যাত্রায় ব্যক্তি আচরণকে’ (বিহেভিওর্যাল আস্পেক্ট) বিবেচনা করলে একটা সামাজিক স্তরায়ন খুব সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। সে বিষয়ে আলোচনা করলে ‘চাকরি থাকবে না’ (*১)। প্রসঙ্গ না বাড়িয়ে শুধু একটা কথা বলি, ঈদে বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়নে যে দ্বিধা ও দ্বৈততা তা খুবই নগ্ন হয়ে সামনে এসেছে।গোলাম মোস্তফা একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী। ঈদের দিনও তাঁকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই তাঁর বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, ঈদের আগের দিন রাত ১০টা থেকে ঈদের দিন বেলা দুইটা পর্যন্ত এটিএম বুথে থাকবেন। তারপর মেসে ফিরে ঘুম। এভাবেই কেটে যাবে ঈদ।
ঈদে রুটিরুজির দিকে তাকিয়ে বাড়ির টান উপেক্ষা করা এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে এই রাজধানীতে। ঈদের ছুটিতে যখন ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ রাজধানী ফাঁকা করে বাড়িতে গিয়ে ঈদ কাটাবেন, তখন এসব মানুষের সময় কাটবে নীরব কষ্ট নিয়ে।
ঈদের ছুটিতে ঢাকার সড়ক ফাঁকা। যাত্রী নেই তেমন। তাই অলস সময় কাটাচ্ছেন কয়েকজন চালক
ঈদের ছুটিতে ঢাকার সড়ক ফাঁকা। যাত্রী নেই তেমন। তাই অলস সময় কাটাচ্ছেন কয়েকজন চালক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করা অনেকেই সুবিধামতো কাজ না পেয়ে এখন তারা নিরাপত্তাকর্মী গ্রামে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে স্বজনবিহীন ঈদ কাটানোর অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন এমনিতে কিছু বুঝি না কিন্তু মেয়েটা ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করে, তখন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা ১১ ’গ্রন্থের রেণুর কথা মনে পরে যায় তখন একটু খারাপ লাগে মেয়েটার কথা মনে পড়ে ।
রাজধানীতে রিকশা চালান মো. শাহীন ইসলাম। বয়স ২৫-২৬ বছর। বাড়ি রংপুর। গত সাত বছরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেছেন মাত্র একবার। ঈদে বাড়ি যাওয়ারে চেয়ে রিকশা চালানোটাই তাঁর কাছে ভালো। এ সময় রোজগার বেশি হয়। এ কারণে এবারও বাড়ি যাননি। তাঁর ঈদের দিনটি কাটবে রিকশার প্যাডেলে পা রেখেই।
রিকশা চালক মুহিদ বলেন, ঢাকা শহরে তাঁর কেউ নেই। ঈদে একা থাকতে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাড়তি রোজগারের টাকাটাও মা-বাবার কাছে পাঠাবেন তিনি। আগে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তখন অবশ্য ছুটি পাওয়া যেত। তবে রিকশা চালানোয় ‘স্বাধীনতা বেশি’ বলে মনে করেন তিনি। শুধু ঈদের দিনটিতেই ‘একটু খারাপ’ লাগে তাঁর।ষাটোর্ধ্ব রুবিনা বেগমের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ঢাকায় থাকেন ইপিজেড ঈদের দিন নাতির জন্য নতুন কাপড় জোগাড় করা নিয়ে চিন্তায় আছেন। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে তাঁর। এর মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমার একটা কালা (কালো) পোলা, আর একটা ধলা (ফরসা) পোলা মরে গ্যাছে।মাঝেমধ্যে পল্টনে আসেন, মানুষের কাছে সাহায্য চান। তিনি ঠিক করেছেন, ঈদুল ফিতরের অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে জাকাতের শাড়ি কাপড় জোগাড় করবেন। তারপর আদরের নাতিকে তা পড়াবেন । গ্রামের বাড়িতে গেলে কাপড় খুব একটা পাওয়া যায় না বলে জানান আমিনা। তাই একরকম বাধ্য হয়েই এই মহানগরে উৎসব কাটানো শত কষ্ট শত সপ্নকে বুকে লালত করে দেশের টানে ফিরতে আমিনা বেগমের সপ্ন ও হারওয়ে যায় ঈদের আনন্দে নাতি অপেকয় দিন গোনে যানবাহন চলাচল ও যানজট নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করা মাহবুবুর রহমানের কাজ ঘরের চাহিদা জামা কাপড় তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে একজন আনসার সদস্য। ঝিনাইদহে স্ত্রী-সন্তানের কাছে এবারও যাওয়া হবে না তাঁর। ঈদের দিন তাঁকে কারওয়ান বাজার মোড়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঈদ উপলক্ষে স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। ঈদে নিজে আনন্দ করতে না পারলেও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখতে চান কিন্তু নিজের হাসি বিসজনে হতাশামাখা কণ্ঠে মামুন বলেন, ‘ঈদের দিন সবাই নামাজ আদায়ে যায়। আর আমি থাকি রাস্তায়। খারাপ লাগে, ভাই। কিন্তু কিছু করার নাই। কাজ তো করতেই হবে। নাইলে বউ-পোলাপান খাবে কী?’বাংলাদেশের মত দেশে বেশির ভাগ মুসলিম দের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে ক্ষীণ আনন্দ আর অধিক বেদনা। সন্তান দের চাহিদা মত ঈদ উপলক্ষে পোশাক, বাসা সুন্দর করে গুছিয়ে তোলার সামগ্রী,ভাল মানের খাবার ব্যবসতা করে উঠতে পারেন না । এত বললাম মধ্যবিত্য আর নিম্ন মধ্যবিত্তের কথা। বস্তি বাসী আর হত দরিদ্রদের কথা তো বললাম ইনা । তা ছাড়া গিরামিন জীবনের বিরাট অংশ ঈদ আনন্দ ঠিকমত উপভোগ করতে পারেন না । বঙ্গবাজারে আগুনে পুরে নিঃশ্ব হয়ে যাওয়া মানুষের আহাযারি। দুই ঈদ করে কি লাভ যদি কষ্টই বয়ে আনে অসেনা আশীর্বাদ….?