গুরু রবিদাসজী’র ৬৪৮তম জন্মজয়ন্তীতে বিআরএফ এর উদ্যোগে “রবিদাসজী’র স্বপ্নের বেগমপুরা : আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জাতপাতের বিরুদ্ধে আজন্ম সংগ্রামী, পরম সমাজ সংস্কারক, ভক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, সন্ত শিরোমণি গুরু রবিদাসজী’র ৬৪৮ তম জন্মজয়ন্তী পালন করেছে বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম (বিআরএফ) কেন্দ্রীয় কমিটি। এ উপলক্ষ্যে “রবিদাসজী’র স্বপ্নের বেগমপুরা : আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভা ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং (বুধবার) সন্ধ্যা ৬.০০ টায় রাজধানীর ওয়ারীস্থ রাম-সীতা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও। বিআরএফ-কেন্দ্রীয় কমিটি’র সভাপতি চাঁনমোহন রবিদাস এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণ এর সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ট্রাস্টি সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু, মাইনরিটি রাইটস্ ফোরাম বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট এর সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুজন কুমার ভৌমিক, শ্রী শ্রী রাম-সীতা মন্দির এর সভাপতি গণেশ ঘোষ, দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা’র সিনিয়র সাংবাদিক পবিত্র কুমার বর্মণ, বাংলাদেশ রবিদাসীয়া মহাসংঘ এর অন্যতম সংগঠক রাসেল রবিদাস। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআরএফ-কেন্দ্রীয় কমিটি’র সিনিয়র সহসভাপতি রাজেশ রবিদাস, বিআরএফ-ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি তপন রবিদাস, নারীনেত্রী শান্তি রানী রবিদাস।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’র সূত্রাপুর থানা কমিটি’র সহসভাপতি ডা. মনোরঞ্জন মজুমদার, বিআরএফ-কেন্দ্রীয় কমিটি’র সহসভাপতি কৃষ্ণা রবিদাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ রবিদাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রবিদাস, কোষাধ্যক্ষ রিপন রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক সুজন রবিদাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন রবিদাস, সাংগঠনিক সম্পাদক চয়ন রবিদাস, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি সঞ্জয় রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস ছাত্র ফোরাম (বিআরএসএফ) কেন্দ্রীয় কমিটি’র সহসভাপতি নিরঞ্জন রবিদাস প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, “জন্মসূত্রে নয় বরং কর্মগুণেই মানুষকে বিবেচনা উচিত। বিশ্বব্যপী এটিই সর্বজনস্বীকৃত। ১৯৮৩ সাল থেকে আজ অবধি একজন উড়াও ব্যক্তির নাম হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টে পাইনি, আমাদের প্রান্তিকতা বুঝবার জন্য এ উদাহরণই যথেষ্ট। অভিন্ন সত্ত্বা গড়তে কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে সবাইকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার বিকল্প নেই। ইতিহাস স্বাক্ষী, রাস্তা হাঁটতে হয়, তবেই পরিবর্তন আসে। বিভিন্নভাবে পৈতৃক পেশার পরিবর্তন হচ্ছে, মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সবাইকেই উঠে আসতে হবে। যোগাযোগ না রাখলে ভুলে যায়, এটি অব্যহত রাখতে হবে, নিজ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে হবে। সংঘশক্তি বজায় রাখতে হবে, আমরা অমৃতের সন্তান। সবাই সমান, কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। গুরু রবিদাসজী সেই আন্দোলনই করে গেছেন। তিনি আমাদের পাথেয়।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ট্রাস্টি সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, “নিজেদের ছোট বা নিচু ভাববেন না। সন্তানদের শিক্ষিত করুন, তাতে করে অগ্রগতি হতে বাধ্য। রবিদাস জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্তকরণ, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভাতা প্রদান এবং প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের ব্যবস্থা করতে ট্রাস্ট সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাইনরিটি রাইটস্ ফোরাম বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস বলেন, “জাত-পাত বা বর্ণবৈষম্যের শিকার কেবলমাত্র রবিদাস জনগোষ্ঠী নয় বরং দলিত, আদিবাসী, হরিজন, চা-শ্রমিকসহ অন্যান্য বঞ্চিত গোষ্ঠীর অগণিত মানুষ। সুতরাং এ সমস্যা ও সংকট থেকে মুক্তি পেতে দরকার সম্মিলিত আন্দোলন। আগামীতে আমরা জাতপাত বিলোপ কনভেনশনের আয়োজন করতে যাচ্ছি। সবার অংশগ্রহন থাকলে আমরা এগুতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।”

সভায় বিভিন্ন রবিদাস অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রতিনিধিগণ স্ব-স্ব এলাকার জীবনমান উন্নয়ন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। সভায় রবিদাসজী’কে নিয়ে লালন সাঁঈজীর গান ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কাঁচা সোনা’ কবিতা আবৃতি করেন বিআরএফ সাধারণ সম্পাদক। সভাশেষে রবিদাসজী’র প্রতিকৃতিতে সন্ধ্যা-আরতী ও অংশগ্রহনকারীদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।

Exit mobile version