বায়েজীদ ,পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) :
গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের ধান চাল ভাঙার একমাত্র অবলম্বন ঢেঁকি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। সময়ের বির্বতনে বিলীন হতে চলেছে ঢেঁকি। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দেখা মিলতো ঢেঁকির। এখন ঢেঁকির কদর কমে যাওয়ায় তেমন আর দেখা মেলে না।
অনেক দরিদ্র পরিবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙিয়ে হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর ঢেঁকিতে ভাঙা চাল খুব সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় ওই চালের খুব কদর ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে ধান, গম, ভাঙার মেশিনের কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলপ্তির পথে। গ্রাম-গঞ্জে গেলে এখনো দু-একটি বাড়িতে ঢেঁকি দেখা গেলেও ভবিষ্যতে ঢেঁকির প্রচলন থাকবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।
ঢেঁকি দিয়ে শুধু ধান থেকে চালই নয়, পিঠে-পুলি তৈরির জন্য চালের গুড়াও (আটা) তৈরি করা হতো। এক সময় গ্রামে গ্রামে অগ্রহায়ন মাসে নতুন ধান ঘরে তোলার পর এবং পৌঁষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি। গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়ি গুলোতে ঢেঁকিঘর হিসেবে আলাদা ঘর থাকত। সেসময় গ্রামের বিত্তবান পরিবারের ঢেঁকি ছাঁটা পুষ্টিকর চালের কদর ছিল। ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত ছিল পুষ্টি গুনে ভরা।
এলাকার প্রবীন কয়েজন লোকের সঙ্গে কথা বললে ঢেঁকি বিষয়ে বলেন- একসময় এই অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভানার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিটি বাড়িতে নতুন জামাই মেয়ে ও অথিতিদের উপস্থিতিতে বাড়ি ছিল কোলাহল পূর্ণ। গভীর রাতে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ শুনা যেত কিন্তু কালের বির্বতনে ও সময়ের চাহিদা অনুয়ায়ী আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় কালের গর্ভে ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। তারপরও সেই ঢেঁকির কদর পলাশবাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুই একটি বাড়িতে এখনো দেখা যায়। তবে ঢেঁকি ছাঁটা চালে আমিষের যে আধিক্য ছিল যা যন্ত্রে ভাঙ্গা চালে তা আর পাওয়া যায় না।
পলাশবাড়ী পৌর এলাকার হরিনমারী গ্রামের সেলিনা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই ঢেঁকি দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যদ্রবাদি মাড়াই করেছি। আগে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করতে আসত। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ আসে না।
হালিম সরকার বলেন,হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো সেসবের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।