কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউপি নির্বাচন নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করায় স্বতস্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের উপর হামলা আহত- ৫

ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা উলিপুর-রাজারহাট সড়ক অবরোধ করে

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করায় স্বতস্ত্র প্রার্থীর ৫ সমর্থকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা উলিপুর-রাজারহাট সড়ক অবরোধ করে প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। ঘটনাটি ঘটেছে, সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে উত্তর দলদলিয়া ক্ষত্রিয়পাড়া এলাকায়। হামলায় আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্সে ভর্তি হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী গোলাম মোস্তফা (২৭),রাশেদুল ইসলাম (৩৫), বিটু কুমার (৩৫)সহ অনেকেই জানান, দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে লিয়াকত আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মুন্সি রানা মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। সোমবার সকালে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাঈদুল ইসলাম ও নৌকার প্রার্থী লিয়াকত আলীর ভাতিজা হাসানুর ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক উত্তর দলদলিয়া ক্ষত্রিয়পাড়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানে এসে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করার অভিযোগে তুলে মোটর সাইকেল প্রতীকের কর্মী নিখিল চন্দ্র রায়ের উপর হামলা চালায়। এ সময় নিখিলকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় পাঁচজন আহত হন। আহতরা হলেন, ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে নিখিল চন্দ্র রায় (৪৫), হরিশ চন্দ্রের স্ত্রী কল্পনা রানী (৬০), ছেলে বাসুদেব (২৭), গিরিশ চন্দ্রের স্ত্রী সৌধা রানী (৭০), ছেলে রতিন্দ্র নাথ (৩৫)। তারা সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হামলা খবর ছড়িয়ে পড়লে মোটর সাইকেল প্রতীকের সমর্থকেরা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে উলিপুর-রাজারহাট সড়কে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী যানবাহন আটকে রেখে সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে শান্ত করলে তারা অবরোধ তুলে নেন। দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। চতুর্থধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান মুন্সি রানা বলেন, স্লিপ বিতরনের অভিযোগ সত্য নয়। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে আসছেন। নির্বাচনের দিন নৌকার বিপক্ষের কাউকে কেন্দ্রে ঢুকতে দিবেন না বলে প্রচার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার তারা আমার কর্মী সমর্থকের উপর কোন কারণ ছাড়াই হামলা চালিয়েছে। সেখানে পাঁচজনের বেশি কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনা প্রশাসনকে জানালে রিটানিং কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূলত নৌকার পক্ষে কাজ না করায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
দলদলিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী লিয়াকত আলী জানান, মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীরা নির্বাচনী আচরন বিধি লংঘন করে ওই এলাকার ভোটারদের মাঝে স্লিপ (সকালের নাস্তার চিরকুট) বিতরন করছিলেন। এ সময় আমার ভাতিজাসহ কয়েকজন তাদেরকে আটক করেন। এ ঘটনায় সেখানে সামান্য হাতাহাতি হয়। বিষয়টি আমরা রিটানিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, দলদলিয়া ইউনিয়নের আহত চারজন হাসপাতালে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অপর দুইজন কল্পনা রানী ও রথিন্দ্রনাথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, মোটর সাইকেল প্রতীকের কর্মীদের স্লিপ বিতরনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা সেখানে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ কারনে কিছু সময়ের জন্য সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। বর্তমানে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটানিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিফুর রহমান সরকার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। #
Exit mobile version