বায়েজীদ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) :
ছুটিতে থেকেও শোকজপত্রে স্বাক্ষর শিক্ষা কর্মকর্তার, সে খবর চ্যানেল ২৪ এর অনলাইন পেজে প্রকাশিত হলেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকই জানেন না তাকে শোকজ করা হয়েছে।এমনই একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে।
অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম মোছাঃ মাহমুদা বেগম। তিনি উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের কাতলী
১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
একটি প্রভাবশালী মহল সাথে সাথেই গত ২৩ ডিসেম্বর ওই শিক্ষিকার নামে শোকজ করান। যে শোকজ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরজুমান আরা গুলেনুর। যিনি ১২ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রান্তি বিনোদন ছুটিতে ছিলেন।
এদিকে (ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার) ও উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মাহমুদুল হাসান জানেন না শোকজ হয়েছে কিনা?
অথচ সেদিনই শোকজের উদ্ধৃতি দিয়ে ফেসবুক এবং পরদিন ২৪ ডিসেম্বর চ্যানেল ২৪ এর অনলাইন পেজে খবর প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকমহল সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ঘটনার ৩দিন পর ২৬ ডিসেম্বর ৩:৩০ ঘটিকায় ওই শিক্ষিকার বরাবরে শোকজ পত্র
(কারণ দর্শানোর নোটিশ) হস্তান্তর করা হয়। যার স্মারক নম্বর: উশিঅ/পলাশ/গাই/২০২৪/৯২০, তারিখ: ২৩/১২/২০২৪ খ্রি.
ওই শিক্ষিকাকে দেওয়া শোকজে উল্লেখ করা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ.এফ. হাসান আরিফের ইন্তেকালের কারণে অদ্য ২৩/১২/২০২৪ খ্রি. রাষ্ট্রীয় শোক পালনের নিদের্শনা রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে। আপনি এ নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেননি মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ ফিরোজ কবির আকন্দ ৩:১৭ ঘটিকায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় দেখতে পান; কিন্তু উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ বলেন যে, তিনি ৩:১৫ ঘটিকায় এ পতাকা উত্তোলন করেছেন। যথাসময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন না করা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির লংঘন।
এ অবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে না তার সন্তোষজনক জবাব আগামী ০৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট লিখিতভাবে দাখিল করার জন্য বলা হলো। অন্যথায় একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মাহামুদা বেগম জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের পতাকা উত্তোলনের পর বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কিছু কাজ নিয়ে বাইরে যান। ফিরে এসে দেখতে পান, পতাকা অজ্ঞাত কেউ সরিয়ে ফেলেছে। তিনি পুন:রায় আরেকটি পতাকা উত্তোলন করেন।তাৎক্ষণিক সেখানে হানা দেন চ্যানেল-২৪ গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান মামুন ও তার সহযোগী ভিডিও ম্যান রাসেল মিয়া। তারা তাকে অফিস কক্ষে একা পেয়ে তার পথ রোধ করে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। অভিযুক্তরা এই ঘটনার ধারণকৃত ভিডিও এডিডিটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দিয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেন। ফলে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ ঘটনায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা বেগম পলাশবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যা তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রধান শিক্ষিকা আরো জানান, তার স্বামীর সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে প্রতিপক্ষরা সাংবাদিক মামুনকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করেন। সে কারণে পতাকা টাঙানোর অজুহাতে সাংবাদিক মামুন ওই শিক্ষিকাকে হেনস্তা করেন।
তার অভিযোগ প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা বিভাগ তাদের পক্ষ নিয়ে অন্যায় ও অবৈধভাবে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন।
সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সাংবাদিক মামুনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।