নিপীড়নের অন্ধকার থেকে মুক্তির আলো জনতারমতামত

 

 

একবার কল্পনা করুন—একদল মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গুহায় বন্দী। সূর্যের আলো কেমন, তা তারা ভুলে গেছে। রাত-দিনের হিসাব নেই, পরিবারের কেউ জানে না তারা বেঁচে আছে কি না। একে একে অনেকে হারিয়ে গেছে—কেউ মৃত্যু বরণ করেছে, কেউ হয়তো মুক্তি পেয়েছে। গুহার দেয়ালে লেখা হয়েছে যন্ত্রণার ইতিহাস, যা হয়তো একদিন প্রাচীন সাহিত্যের মর্যাদা পাবে।

 

এবার বাস্তব দুনিয়ায় আসুন। ক্ষমতার লোভ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে। ভিন্নমত দমনের জন্য মানুষকে বছরের পর বছর অন্ধকার কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছে। পরিবারের কাছেও কোনো খবর পৌঁছায়নি—সন্তান জানে না বাবা বেঁচে আছে কি না, স্ত্রী জানে না স্বামী কোথায়। দিনের পর দিন অনিশ্চয়তার ভারে জীবন পিষ্ট হয়েছে। নিজেকে একবার এই পরিস্থিতিতে কল্পনা করুন—কেমন লাগবে?

 

গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে নিপীড়ন, গুম, খুন ছিল ক্ষমতাসীনদের নীতি। সহস্রাধিক গোপন টর্চারসেলে মানুষকে বন্দী রাখা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করা হয়েছে। কেউ হারিয়ে গেছে চিরতরে, কেউ ফিরে এসে পেয়েছে দুঃসহ স্মৃতির বোঝা। ফ্যাসিবাদ এভাবেই একটি দেশকে কারাগারে পরিণত করে।

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দীর্ঘ দুঃশাসনের পর পতন হয়েছে। কিন্তু যারা এই বর্বরতার শিকার, তাদের কি সুবিচার মিলবে? গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে, নির্যাতনের দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যারা অন্যায়ের পথে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে হবে।

 

আমরা কি নিশ্চিত করতে পারব, যেন আর কোনো সরকার এমন ফ্যাসিবাদী পথ না বেছে নেয়? ইতিহাস বলে, যে জাতি তার অতীত ভুলে যায়, সে আবারও একই ভুল করে।

 

তুমি জানো কি? ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কারাবাসের একটি ছিল নেলসন ম্যান্ডেলার, যিনি ২৭ বছর জেলে কাটিয়েছিলেন কেবলমাত্র সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার কারণে।

Exit mobile version