সিটি করপোরেশনের রাস্তার বাতি জ্বালানো-নেভানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকেন বাতি পরিদর্শক, লাইনম্যান, মিস্ত্রি ও হেলপাররা। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এলইডি বাতি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শিখে এসেছেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররা। যাদের বেশিরভাগেরই এ কাজে সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা এলইডি বাতি লাগানোর প্রকল্পের অর্থে এ সফর করেছেন বলে জানা গেছে।
গত ১ থেকে ৯ জুলাই নেদারল্যান্ডসে ট্রেনিং নিয়েছেন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। সেলিম রেজার সঙ্গে গেছেন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীর খরচ সেলিম রেজা নিজেই বহন করেছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, এ সময়ে তারা ফ্রান্সের প্যারিসও ভ্রমণ করেছেন। গত ৯ জুলাই তারা দেশে ফিরেছেন।
কর্মকর্তাদের মধ্যে বাতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব জহিরুল ইসলাম। কাউন্সিলরদের মধ্যে আছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জামাল মোস্তফা ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকান হোসেন।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশলীদের মধ্যে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম মিয়া ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুর রহমান।
অথচ যারা মাঠ পর্যায়ে রাস্তার এলইডি বাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে জড়িত তারা কেউ এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি।
কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলেন জিজ্ঞেস করা হলে প্রধান নির্বাহী সেলিম রেজা জানান, তারা এলইডি বাতির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঠিকাদার কোম্পানি ভবিষ্যতে কী সার্ভিস দেবে সেটা জেনে এসেছেন। কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপ সফর করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রশিক্ষণের নামে বিদেশে যাওয়ার সুযোগকে ক্রমবর্ধমান হারে ক্ষমতার কাছাকাছি একশ্রেণির কর্মকর্তারা প্রমোদ ভ্রমণসহ নিজেদের সুবিধা অর্জনের লাইসেন্সে রূপান্তর করেছেন। এটি তারই একটি উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, যারা এলইডি বাতির অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স শিখতে নেদারল্যান্ডস গেলেন, তাদের দায়িত্বের সঙ্গে যে এলইডি বাতির পরিচালনার কোনও যোগসূত্র নেই তা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনকারী কর্তাব্যক্তিরা জানেন না, এটি হতে পারে না। এ প্রশিক্ষণের জন্য যারা বাস্তবে অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্সে যুক্ত তারা বঞ্চিত হলো। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপভোগের জন্য জনগণের অর্থের অপচয় করে এলেন, এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা যদি কোনও জ্ঞান আহরণ করেও থাকেন, তা তারা কোনও কাজে লাগাতে পারবেন এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়ক বাতি সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পটির প্রথমবার সংশোধন করা হয়। এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৬৯ কোটি ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এরমধ্যে জিওবি ২৯৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ডিএনসিসির নিজস্ব ৭৩ কোটি ৮২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
এদিকে, গত মে মাসে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে তুরস্কের একটি কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি তার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে যান।