পুলিশ যা পারেনি মাত্র ৩ দিনে তা করে দেখালো বরিশালের শিক্ষার্থীরা

বরিশাল: সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। মাত্র ৩ দিনে তারা নগরের প্রতিটি সড়কে যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে তা আগে দেখা যায়নি কখনও।

সম্মিলিত চেষ্টা ও দেশের প্রতি ভালবাসা থাকলে যে আসলেই চিত্র পাল্টে দেয়া সম্ভব তা শিক্ষার্থীরাই প্রমাণ করেছে। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া এত ভাল তদারকিতে অবাক নগরবাসী তাই এসকল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করেছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, দেশপ্রেম ও সদিচ্ছাই পারে সব কিছু পরিবর্তন করতে। তারা শুধু তাদের দায়িত্ব পালন করছে মাত্র।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট)  বিকালে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ, রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড, আমতলা মোড়, জিরো পয়েন্ট, সদর রোড ফজলুল হক এভিনিউ, লঞ্চ ঘাট, জেলখানা মোড়, চৌমাথা সহ বিভিন্ন এলাকার জরুরি ও ব্যস্ত সড়কে দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাজ করতে।

৬ ও ৭ আগষ্ট দুদিন শুধু শিক্ষার্থীরা সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করলেও গতকাল তাদের সাথে যোগ দিয়েছে আনসার সদস্য, বিএনসিসি, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সহ স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

সকাল ৯ টা থেকে শিফট ভাগ করে তাদের রাত ৮ টা পর্যন্ত কাজ করতে দেখা গেছে। এ সময় তারা সব ধরনের যানবাহনগুলোকে সড়কের নির্দিষ্ট লেন অনুসরন করিয়ে চলা, মোটর সাইকেল আরোহিদের হেলমেট পরিধান করানো সহ প্রাইভেটকার চালকদের সেফটি সিট বেল্ট দিয়ে চলার মত নিয়মগুলো নিশ্চিত করান। শান্তিপূর্ণভাবে এ সকল নিয়মের পরিপালনে নগরীর সড়কে চলাচলকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে দেখা গেছে তাদের।

 

বরিশাল বটতলা এলাকায় দায়িত্ব পালন করা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী সাদমান বলেন, আপাতত ট্রাফিক সদস্যরা কর্ম বিরতিতে রয়েছে। তাই তারা কাজ করছেন। কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই এখানে। যাদের ইচ্ছে হচ্ছে তারাই এসে সম্মিলিত হয়ে কাজ করছে। দেশের প্রতি ভালবাসা ও জনগনের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সকলে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। সাধারন জনগন তাদের যথেষ্ট সহায়তা করছে।

বরিশাল মহিলা কলেজের ছাত্রী জান্নাত আরা বলেন, বরিশালের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে সড়কে। সকলেই আগ্রহের সাথে কাজ করছে। প্রথমে শুধু তারা কাজ কররেও বৃহস্পতিবার আনসার সদস্য, বিএনসিসি, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সহ স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাদের সাথে যোগ দিয়েছে।

পথচারীরা তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করেই চলাচল করছে। এছাড়া সাধারণ জনগণ তাদের খাবার, পানি সহ বিভন্নভাবে সহায়তা করছে। অনেকেই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানিয়েছে।

সড়কে থাকা শিক্ষার্থীদের পানি দিতে দেখা যায় ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদ হাসানকে। আলাপে তিনি বলেন, বরিশালের সড়ক গুলোতে এমন শৃঙ্খলাভাবে চলাচল আগে তিনি কখনো দেখেননি। প্রতিটি যানবাহন লেন মানছে, মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরিধান করে চলাচল করছে, সিট বেল্ট লাগিয়ে চলছে প্রাইভেট কার চালকরা।

ট্রাফিক পুলিশ যা করতে পারেনি তা শতভাগ নিশ্চিত করেছে এই শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের সাথে একত্বতা প্রকাশ করতে সামান্য চেষ্টা হিসেবে পানি বিতরণ করছেন তিনি। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া এত সুন্দর তত্ত্বাবধান আসলেই প্রশংসার যোগ্য বলে মন্তব্য করেন।

শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরাই প্রকৃত শক্তি তা তারা বার বার প্রমান করেছে। সারা দেশের ন্যায় বরিশালের প্রতিটি শিক্ষার্থী প্রশংসার দাবিদার।

অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি স্থাপনার দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে আঁকা অশ্লীল বাক্যের গ্রাফিতিগুলো মুছে ফেলতে দেখা গেছে আরেকদল শিক্ষার্থীদের। তারা বলেছে নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে আন্দোলনের সময়ে আঁকা বিতর্কিত শব্দের গ্রাফিতিগুলো তুলে ফেলছেন তারা।

দেশ তাদের, তাই দেশের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বও তাদের। তাই নিজেদের উদ্যোগেই করছেন। তাদের সাথে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে বৃহস্পতিবার। একই সাথে ধ্বংস্তূপ ও আবজর্না পরিচ্ছন্ন করার কাজও করছে তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা।

Exit mobile version