Site icon দৈনিক দেশের সংবাদ deshersangbad.com

পে’টে বা’চ্চা না আসলে কি করবো কিভাবে গ’র্ভধারণ করে মা হওয়া যায় ?

লাদের জন্য গর্ভধারণ একটি শিহরণ জাগানো ঘটনা। যদিও কারো কারো সাথে কথা বললে মনে হবে এটি একটি সাধারন ব্যাপার। আবার কারো মতে গর্ভধারণ ধৈর্য ও ভাগ্যের ব্যাপারও বটে।পরিপূর্ণ বয়োঃপ্রাপ্তি হলেই গর্ভধারণ সহজ হয় তবে কিছু কিছু বিষয় অবশ্য মাথায় রাখা দরকার যেমন স্বাভাবিক ওজন, স্বাস্থ্যসম্মত বা সূষম খাবার আর মাসিকের পর উপযুক্ত সময়টুকুতে নিয়মিত যৌনমিলন।

এর সাথে কারো যদি ধুমপান বা মদপানের অভ্যাস থাকে তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে অতি অবশ্যই সুস্থ, সবল এবং যথেষ্ট পরিমান শুক্রানু থাকতে হবে।

বেশিরভাগ সুস্থ ও সক্ষম দম্পতি বিয়ের এক বছরের মধ্যেই সন্তান নিতে পারেন। যদি ইচ্ছা থাকা সত্বেও কোন দম্পতির সমস্যা দেখা দেয় তবে একা নয় উভয়কেই একসাথে কোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অক্ষমতা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।

আজকাল চিকিৎসা অবশ্য সহজ ও হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।সুস্থ ও স্বাভাবিক গর্ভধারণের জন্য দম্পতির স্বাস্থ্যও সুস্থ হওয়া আবশ্যক। কারন সুস্থ দম্পতি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন।

গর্ভধারণের শুরু থেকেই সুস্থ থাকার নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। যেমন যথাসময়ে টীকা নেয়া, ভাল খাবার অর্থাৎ সূষম খাবার খাওয়া, প্রয়োজনীয় ভিটামিন গ্রহন আর নিয়মিত ও যথাযথ ব্যায়াম তো আছেই।যদি গুরুতর কিংবা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেটা গর্ভধারণের পূর্বে ও গর্ভধারণকালিন উভয় সময়েই।

এখানে বয়সও একটা বিষয়। সাধারনতঃ ৩৫ বছরের বেশি হলে কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার যত্ন নেয়া মানেই আপনার বাচ্চার যত্ন নেয়া।

জেনে নিন গর্ভধারণ লক্ষণসমূহঃ যারা প্রথমবারের মত গর্ভধারণ করেছেন তাদের জন্য একটু চমক লাগবে বৈ কি। তবে মাসের পর মাস যারা অপেক্ষায় ছিলেন তাদের জন্য এটা হতে পারে একটা বিস্ময়।গর্ভাবস্থার প্রথমে ক্লান্তি বা অবসাদ, স্তন ব্যথা, অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

হঠাৎ অসুস্থ বোধ করা আর মাসিক বন্ধ হওয়া তো আছেই। তবে সব চেয়ে সহজ উপায় হল ঘরে বসেই Pregnancy Test করিয়ে নেয়া।Pregnancy Test যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে অতিসত্বর আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান। যথাযথ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে স্বাস্থ্যসেবা চার্ট অনুসরন করুন আর জেনে নিন প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ।

পর্যায়ক্রমিক করনীয়: যখন আপনি নিশ্চিত হলেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন, তখন থেকেই পুরো গর্ভধারণকালিন সময়টাকে সপ্তাহ ভিত্তিতে ভাগ করে পরিকল্পনা করতে হবে।

প্রতিদিনই আপনার কাছে নতুন মনে হবে। কি করতে হবে না করতে হবে, কি করা উচিত-এ প্রশ্নগুলো আসবে। যেমন কি খাওয়া উচিত, ব্যায়াম করা যাবে কি না, কি কি ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাতে হবে ইত্যাদি। আরো আছে যেমন শরীরের ওজন কতটুকু বাড়বে, প্রসবপূর্ব বেদনা কিভাবে লাঘব করা যায়, সম্পূর্ন বিশ্রাম করতে হবে কি না আরো কত কি।

যত প্রশ্নই মনে আসুক না কেন আপনি যদি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে পরিকল্পনা করে এগোতে থাকেন তাহলে আপনার গর্ভধারণকালিন সময়টা সহজে আর আরামে পার করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কি করতে হবে না করতে হবে, অন্যান্য গর্ভধারণকালিন জটিলতা ও ছোট-খাট দৈনন্দিন করনীয়সমূহ।

যেমন ব্যায়াম থেকে শুরু করে ব্যাক পেইন, যৌনমিলন ইত্যাদি।গর্ভধারণ কালিন সময়টাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে পরিকল্পনা করতে হবে। গর্ভধারণের প্রথম পর্যায়ে যেমন খুব দ্রুত ভ্রুন বাড়তে থাকে তেমনি গর্ভবতী মায়ের শরীরেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। শরীরের পরিবর্তনগুলোর মধ্যে আছে স্তনের আকার পরিবর্তন ও অস্বস্তি, দূর্বলতা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি।

দবেগ-উৎকন্ঠা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই সময়ে বাচ্চার মস্তিষ্ক, মেরুদন্ড এবং অন্যান্য অংগ-প্রত্যাংগের গঠন শুরু হয়, হৃদপিন্ডের কার্যক্রম শুরু হয় আর বাচ্চার হাত-পায়ের আংগুলেরও আকার নিতে থাকে।

গর্ভের চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ মাস – দ্বিতীয় পর্যায়। এই সময়টাতে আপনি প্রথম পর্যায়ের চাইতে অনেক ইজি বোধ করবেন। এ পর্যায়ে বাচ্চা মোটামুটি একটা পরিপূর্ন বাচ্চার মত মনে হবে। আর গর্ভবতি মায়ের শরীরের পরিবর্তনের মধ্যে আছে ত্বকের পরিবর্তন, পেট অনেক বড় হয়ে ওঠা, স্তনের আকার আরো বড় হওয়া ইত্যাদি। আর বাচ্চার ক্ষেত্রে নড়াচড়া করা, বাইরের শব্দ শুনতে পাওয়া ইত্যাদি সক্ষমতা তৈরী হয়। এই সময় আপনাকে নিয়মিত আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার মনের যে কোন প্রশ্নের উত্তর তার কাছ থেকে জেনে নিন।শেষের তিন মাস তৃতীয় পর্যায় যা শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যান্ত চ্যালেঞ্জিং। পৃষ্ঠদেশ, এঙ্কেল এর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। আর বাচ্চা তার চোখ খুলতে পারে, নড়াচড়া অনেক বেড়ে যায়। ৩৭ সপ্তাহ শেষে মানব শিশু পরিপূর্ন রুপ নেয়। এই সময়ে ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যাওয়া, বাচ্চার অবস্থান জেনে নেয়া বেশ জরুরী।

গর্ভধারণ কালিন জটিলতাসমূহ ঃ গর্ভধারণ কালিন সময়ে বাচ্চার স্বাস্থ্য প্রাধান্য পায় তুলনামূলক একটু বেশি। সেক্ষেত্রে মায়ের যদি কোন জটিল রোগ বা ইন্যান্য জটিলতা থাকে যেমন ডায়াবেটিস, এপিলেপসি বা কোন মানসিক রোগ বা হতাশা, গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, তাহলে জেনে নিন এসব ক্ষেত্রে কি করণীয়। কারন সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শমত কাজ না করলে বা মেনে না চললে গর্ভপাত হতে পারে বা বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখবেন সুস্থ শিশুর জন্ম সুস্থ মায়ের উপর নির্ভরশীল।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি – পর্ব ২জরায়ুতে ভ্রুন স্থাপনকালীন রক্তপাত সাধারনত গর্ভধারনের ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সচারচর রক্তপাত হতে দেখা যায়। এটি সম্পূর্ন স্বাভাবিক। নিষিক্ত ডিম্বানুটি জরায়ুতে প্রতিস্থাপনকালীন এই রক্তপাত ঘটে। স্বল্পেস্থায়ী এই রক্তপাত মাসিককালীন রক্তপাতের চাইতে হালকা ১/২ দিনব্যাপি মাসিক রক্তপাতের মতই হয়ে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই রক্তপাত নাও হতে পারে আবার কেউ কেউ খেয়ালও করেন না। অনেক সময় মাসিক ভেবে অনেকে ভুল করেন। এমনটি হলে বাচ্চা প্রসবের সঠিক সময় নির্ধারনে ভুল হতে পারে। জরায়ুতে ভ্রুন স্থাপনকালীন রক্তপাত আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এবং এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে রক্তপাত যদি দীর্ঘসময়ব্যাপি হয় এবং যদি মনে হয় এটি জরায়ু কিংবা যোনী সংক্রান্ত কোন রক্তপাত, তাহলে কালবিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্লাসেন্টা বা অমরা বা গর্ভফুল ঃ পুরো গর্ভকালীন সময় জুড়ে গর্ভফুল গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। ভ্রুনের সাথে মাতৃদেহের সংযোগ স্থাপনকারি জরায়ুর এই গর্ভফুল মায়ের দেহ থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি শিশুর দেহে সরবরাহ করে এবং শিশুর রক্তের অপ্রয়োজনীয় অংশ সরিয়ে নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভফুল জরায়ুর উপরের অংশে কিংবা পার্শ্বে স্থাপিত থাকে।বিভিন্ন কারনে এই গর্ভফুলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোনটি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয় না।যার মধ্যে মায়ের বয়স। সাধারনত ৪০ বছরের অধিক বয়সে গর্ভধারনের ক্ষেত্রে এধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।কোন কারনে বাচ্চার থলি বা amniotic sac এর গাত্রে ছিদ্র হলে বা প্রসবের পূর্বে ভেংগে গেলে গর্ভফুলের ক্ষতি হতে পারে।উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারনেও ক্ষতি হতে পারে।

আবার জমজ বা একাধিক বাচ্চা ধারনেও গর্ভফুল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেসব মায়ের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবনতা থাকে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভফুলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো ছাড়া আরো যেসব কারনে গর্ভফুলে সমস্যা বা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে তার মধ্যে আছে পূর্বে যদি জরায়ুর অপারেশন হয়ে থাকে, আগের গর্ভধারনের ক্ষেত্রে যদি গর্ভফুলের সমস্যা হয়ে থাকে, গর্ভবতি মা যদি গর্ভকালীন সময়ে ধুমপান, নেশাদ্রব্য সেবন করে থাকে, পেটের কোন আঘাত ইত্যাদি কারনে গর্ভফুলে ছিদ্র, ভেংগে যাওয়া, ইনফেকশন হতে পারে।

গর্ভফুলের সমস্যাগুলোকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ placenta previa এবং placenta accreta. আর এই দুই ক্ষেত্রেই প্রচুর রক্তপাত হতে পারে এবং আগেভাগেই ডেলিভারী বা সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।যদি যোনীপথে রক্তপাত, পেটে ব্যাথা, অসহ্য পিঠে ব্যাথা, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষন দেখা দেয়, তবে দেরী না করে অতি সত্ত্বর ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

গর্ভধারণ হলে বমি বা বমিভাব ঃ বমি বা বমিভাব সাধারনত গর্ভধারনের প্রথম তিনমাসে দেখা দিতে পারে। এগুলোকে অবশ্য morning sickness বলে যা স্বাস্থ্যকর গর্ভধারনের লক্ষন হিসাবে বিবেচিত। নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ুতে স্থাপিত হওয়ার পর পরই মাতৃদেহে Human Chorionic Gonadotropin (HCG) নামক হরমোন নিঃসরন হতে থাকে। যা কিনা গর্ভধারনের জন্য অপরিহার্য এবং এর প্রভাবেই বমি বা বমিভাব দেখা দেয়।এছাড়া বমি বা বমিভাবের অন্যান্য মতগুলো হচ্ছে ভ্রুন বা শিশুর দেহ কর্তৃক খাবার ক্ষতিকর বস্তু/অংশ ফিরিয়ে দেয়ার প্রভাব, বিশেষ বিশেষ খাবার বা এর উপাদান গ্রহনে উদবুদ্ধ করা যা শিশুর দেহের জন্য অপরিহার্য, শিশুর ও গর্ভবতি মায়ের দেহের নতুন নতুন কোষ-কলা তৈরীর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সাথে দেহকে খাপ খাইয়ে নেয়া ইত্যাদি।এসব সবার ক্ষেত্রে নাও ঘটতে পারে। আর এসব লক্ষন দেখা না দিলে উদবিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। তবে অতিরিক্ত বমি বা বমিভাব অনেক সময় কোন জটিল সমস্যার লক্ষন বলে বিবেচিত হতে পারে। অতএব দেরী না করে ডাক্তারের কাছে যান।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি – পর্ব ৩: গর্ভাবস্থায় খাবারদাবারঃ অপরিহার্য পুষ্টিসমূহ গর্ভধারণ অবস্থায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহন আপনার শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কোন কোন খাবার-পুষ্টি আপনাকে বেশি বেশি গ্রহন করতে হবে এবং কোথায় সেগুলো পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে এমন কোন ম্যাজিক ফরমুলা নেই যাতে করে আপনার পুষ্টির সকল চাহিদা একসংগে মিটবে। আসলে গর্ভাবস্থার খাবার বলে আলাদা কিছু নাই। খেতে হবে পরিমানে একটু বেশি করে আর খাবারের প্রতি অতি অবশ্যই মনযোগী হতে হবে।
জেনে নিন কোন কোন খাবারের প্রতি বেশি বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।Folate and Folic Acid – জন্মগত ত্রুটি বা খুঁত রোধ করে।
Folate হল ভিটামিন ‘বি’ যা কি না স্নায়ুনালীর ত্রুটি, মস্তিষ্কের কিংবা স্পাইনাল কর্ডের কোন মারাত্মক ত্রুটি রোধে সহায়ক। গর্ভাবস্থার খাবারে যথাযথ পরিমানে Folate এর অভাবে বাচ্চা কম ওজনের হতে পারে, নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নিতে পারে। খাদ্য এবং সম্পুরক খাদ্যে Folate এর সংশ্লেষিত রুপই Folic Acid.

কতটুকু খাবেন – গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে এবং গর্ভধারণ অবস্থায় প্রতিদিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম করে Folate বা Folic Acid সম্মৃদ্ধ খাবার খাবেন।কোথায় পাবেন – দানাদার শস্যজাতীয় তৈরী খাবার, সবুজ শাক-সবজী, লেবু ও লেবু জাতীয় ফল, শীম, মটরশুঁটি এগুলো Folate সম্মৃদ্ধ খাবারের প্রাকৃতিক উৎস।বলা হয়ে থাকে সুস্থ গর্ভধারনের প্রয়োজনে এবং বাচ্চার কোন জন্মত্রুটি রোধে গর্ভধারনের প্রায় তিন মাস আগে থেকেই এসব খাবার গ্রহন করা উচিত।ক্যালসিয়াম – হাড়কে করে শক্তিশালী আপনার এবং আপনার অনাগত বাচ্চার হাড় ও দাঁতের শক্ত গড়নের জন্য ক্যালসিয়াম দরকার। এছাড়া রক্ত চলাচল, পেশিগঠন ও স্নায়ুবিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্যও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। কতটুকু খাবেন – প্রতিদিন ১,০০০ মিলিগ্রাম আর গর্ভবতী মা যদি কিশোরী হন তবে ১,৩০০ মিলিগ্রাম/প্রতিদিন।কোথায় পাবেন – দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। আরো আছে কিছু কিছু ফল ও ফলের রস এবং সকালের নাস্তার শস্যজাতীয় খাবার।

ভিটামিন ডি
অনাগত বাচ্চার দাঁত, হাড়ের শক্তি ও পরিপূর্নতার জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন প্রায় ৬০০IU করে প্রয়োজন। চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন ডি’র অন্যতম উৎস। এছাড়া দুগ্ধজাত খাবার ও কমলার রসে প্রচুর ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আমিষ বাচ্চার বেড়ে ওঠার সহায়ক অতি প্রয়োজনীয় এ উপাদানটি গর্ভধারণ অবস্থায় বিশেষ করে গর্ভের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে বাচ্চার সঠিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অত্যাবশকীয়। প্রতিদিন প্রায় ৭১ গ্রাম প্রয়োজন। আর পাবেন লাল মাংস, পোল্ট্রি, মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি প্রানিজ খাবারে এবং শিম, মটরশুঁটি, উদ্ভিজ মাখন ইত্যাদিতে।
আয়রন বা লৌহ – রক্তশুন্যতা রোধ করেরক্তের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ লোহিত রক্ত কনিকার হিমোগ্লোবি্ন। এটি একধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেন বহন করে কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এটি তৈরীর অপরিহার্য উপাদান আয়রন। গর্ভধারণ অবস্থায় ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারনে রক্তের পরিমান বাড়ে। বাচ্চার পুষ্টির সরবরাহের সম্পূর্ন চাহিদা পূরন হয় মায়ের রক্তের মাধ্যমে। কাজেই ওই সময়ে আয়রনের চাহিদা প্রায় দ্বিগুন বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয় আয়রন না পেলে ক্লান্তি-অবসাদ বেড়ে যায়, ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অকাল প্রসব, বাচ্চার কম ওজন, এমনকি আরো কোন জটিলতা দেখা দিতে পারে। কতটুকু খাবেন – প্রতিদিন প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম।

কোথায় পাবেন – চর্বিবিহিন লাল মাংস, পোল্ট্রি, মাছ ইত্যাদি আয়রনের ভালো উৎস। অন্যান্যের মধ্যে আছে দানাদার খাদ্য, বাদাম এবং শুকনো ফল। আর জরুরী প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করা যেতে পারে। পানিমায়ের দেহ থেকে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি বহন করে বাচ্চার দেহে পৌঁছে দেয় পানি। পানি কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তপড়া, অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া, মুত্রনালী বা মুত্রথলির সংক্রমন ইত্যাদি রোধে পানি অনন্য ও অপরিহার্য। কতটুকু পান করবেন – বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞগন গর্ভবতি মায়ের জন্য প্রতিদিন ১০ কাপ বা প্রায় ২.৩ লিটার তরল পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে আছে পানি, ফলের রস, কফি, চা, কোমল পানীয় ইত্যাদি। তবে মনে রাখতে হবে কিছু পানীয়তে বেশি পরিমানে চিনি থাকতে পারে যা মুটিয়ে যাবার প্রবনতাকে বাড়িয়ে দেয়। আবার অতিরিক্ত ক্যাফেইন বাচ্চার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই কফি-চা ইত্যাদি ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ২০০ গ্রামের বেশি পান করা উচিত নয়।তেল, চর্বি, মিষ্টি – তেল, চর্বি, মিষ্টির কোন নির্দিষ্ট পরিমান নেই তবে চাহিদামত খেতে হবে যদি ওজন বাড়ানোর লক্ষ্য না থাকে। স্বাভাবিকভাবে এমন খাবার খেতে হবে যাতে তেল, চর্বি, মিষ্টি কম পরিমানে থাকে।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি – পর্ব ৪: গর্ভধারণ অবস্থায় ওজন বৃদ্ধিঃ কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত আপনি চান কিংবা না চান গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। আপনার বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি-উন্নতি নির্ভর করে এই ওজন বৃদ্ধির উপর। দুইজনের জন্য খাওয়া মানে এই নয় যে আপনাকে যা খুশি, যত খুশি, যতবার ইচ্ছা খেতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন আর খাবারের মাধ্যমে ওজন বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে যাতে বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল থাকে আর আপনিও প্রসব পরবর্তি অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন ছেঁটে ফেলতে পারেন।

ওজন বৃদ্ধির গাইডলাইন: গর্ভধারণ অবস্থায় ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একই সাইজ, একই পরিমান সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আপনার জন্য কতটুকু ওজন বাড়া দরকার তা’ নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর যেমন গর্ভপূর্ব ওজন, Body Mass Index (BMI) এর উপর। সেই সাথে আপনার ও আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্যও আপনার ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এগুলো বিবেচনা করে আপনার জন্য কতটুকু ওজন বৃদ্ধি প্রয়োজন তা বলে দিবে আপনার ডাক্তার। তবে এখানে একটি সাধারন গাইডলাইন দেয়া হলঃ গর্ভপূর্ব ওজন অনুমোদিত ওজন বৃদ্ধি কম ওজন (বিএমআই ১৮.৫ এর নীচে) ২৮-৪০ পাউন্ড (প্রায় ১৩-১৮ কেজি) স্বাভাবিক (বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯) ২৫-৩৫ পাউন্ড (প্রায় ১১-১৬ কেজি) বেশি ওজন(বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯) ১৫-২৫ পাউন্ড (প্রায় ৭-১১ কেজি) স্থুলকায় (বিএমআই ৩০ এর উপর) ১১-২০ পাউন্ড (প্রায় ৫-৯ কেজি) যদি আপনি জমজ বা একাধিক বাচ্চা গর্ভধারন করেন সেক্ষেত্রেঃ গর্ভপূর্ব ওজন অনুমোদিত ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক (বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯) ৩৭-৫৪ পাউন্ড (প্রায় ১৭-২৫ কেজি) বেশি ওজন(বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯) ৩১-৫০ পাউন্ড (প্রায় ১৪-২৩ কেজি) স্থুলকায় (বিএমআই ৩০ এর উপর) ২৫-৪২ পাউন্ড (প্রায় ১১-১৯ কেজি) যখন আপনি স্থুলকায় গর্ভপূর্ব অবস্থায় যদি আপনি স্থুলকায় কিংবা বেশি ওজনের হয়ে থাকেন তবে গর্ভাবস্থায় নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে যার মধ্যে আছে গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ। যদিও গবেষকরা গর্ভধারণ অবস্থায় কিছু ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় বলে মত দেন তা হোন আপনি বেশি ওজনের কিংবা স্থুলকায়। তবে নিরাপদ ওজন বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রনে আপনাকে অবশ্যই গাইডলাইন মেনে চলতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শই চূড়ান্ত।

কারন আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ঘটে আর সেটা যদি প্রসব পরবর্তি সময়ে কমে না যায়, তাহলে সেটা আপনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি হয়ে দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ন হতে পারে, ডেলিভারি হতে সমস্যা হতে পারে। যারা কম ওজন সম্পন্ন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতি অবশ্যই গ্রহনযোগ্য মাত্রা পর্যন্ত ওজন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধি না হলে আপনার বাচ্চাও কম ওজনের হতে পারে, নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নিতে পারে। গর্ভধারণ অবস্থায় ওজন বৃদ্ধি কোথায় যায় গাইডলাইন অনুযায়ী যে ওজন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে বাচ্চার ওজন ৭ থেকে ৮ পাউন্ড বা ৩ থেকে ৩.৫ কেজি বাদ দিলে বাকিটা কোথায় যায়। বিশ্লেষকরা বলছেনঃ বাচ্চাঃ ৭-৮ পাউন্ড বা প্রায় ৩-৩.৫ কেজি স্তন বৃদ্ধিঃ ২ পাউন্ড বা প্রায় ১ কেজি জরায়ুর বৃদ্ধিঃ ২ পাউন্ড বা প্রায় ১ কেজি প্লাসেন্টাঃ ১.৫ পাউন্ড বা প্রায় ০.৭ কেজি এমনিওটিক ফ্লুইডঃ ২ পাউন্ড বা প্রায় ১ কেজি রক্ত বৃদ্ধিঃ ৩-৪ পাউন্ড বা প্রায় ১.৪-১.৮ কেজি অন্যান্য ফ্লুইড বৃদ্ধিঃ ৩-৪ পাউন্ড বা প্রায় ১.৪-১.৮ কেজি চর্বি জমেঃ ৬-৮ পাউন্ড বা প্রায় ২.৭-৩.৬ কেজি কোন পর্যায়ে কতটুকুগর্ভের প্রথম তিনমাস বেশিরভাগ মহিলাদের বেশি ওজন বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। আপনি যদি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী হন তবে প্রথম কয়েক মাস কয়েক পাউন্ড বা ২ কেজি’র কম ওজন বাড়লেই যথেষ্ট। আপনাকে স্বাভাবিক খাবার থেকে ১৫০-২০০ ক্যালরী সম্পন্ন খাবার বেশি খেতে হবে।তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে হবে। তার মানে এই পর্যায়ে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩-৪ পাউন্ড বা প্রায় ১.৪-১.৮ কেজি করে বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত প্রায় ৩০০ ক্যালরী সম্পন্ন খাবার প্রয়োজন কাংখিত ওজন বৃদ্ধির জন্য।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি পর্ব-৫
গর্ভকালীন ব্যায়াম গর্ভবতি হলেই অনেকে মনে করেন বা আত্মীয়স্বজনরা বলেন সম্পূর্ন বিশ্রামে থাকতে হবে। কোন কাজ করা যাবে না ইত্যাদি। আসলে গর্ভাবস্থায়ও কর্মক্ষম থাকা যায়। গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম শরীরকে যেমন ফিট রাখতে সহায়তা করে তেমনি প্রসবকালীন ব্যাথাসহ অন্যান্য জটিলতা দূর করতেও ভূমিকা রাখে। গর্ভকালীন শারীরিক ব্যায়ামেঃ – পিঠের ব্যথা দূর করে ও অন্যান্য ব্যথা-জটিলতায় আরাম দেয়
– শারীরিক সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় – অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে – গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, গর্ভধারণ অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কমায়, প্রসব পরবর্তি অবসাদ দূর করে – প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশি শক্তিশালী করে যা নিরাপদ প্রসবে সহায়তা করেকখন করবেন না
ব্যায়াম শুরুর পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদিও গর্ভধারণ অবস্থায় ব্যায়াম মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী তথাপি আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তীব্র ব্যাথা কিংবা কোন নির্দিষ্ট সমস্যা থেকে থাকে। যার মধ্যে আছেঃ ডায়াবেটিস যা ভালভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় না বা যাচ্ছে না, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, Placenta Previa বা গর্ভফুলের সমস্যা যাতে প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তি অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয় ইত্যাদি।

কতক্ষন করবেন বিশেষজ্ঞরা বেশিরভাগ গর্ভবতি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন অথবা সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর্যন্ত মধ্যমমানের ব্যায়ামের কথা বলে থাকেন। তবে এর চেয়ে কম হলেও অসুবিধা নেই। এটা আপনার শরীরকে যেমন ফিট রাখতে সাহায্য করে তেমনি প্রসবকেও সহজ করে তোলে।যারা প্রথমবারের মত ব্যায়াম শুরু করছেন তারা ‘হাটা’ দিয়ে শুরু করতে পারেন। এটি আপনার রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করবে, রক্ত প্রচুর অক্সিজেন পাবে। এতে গীঁটের ব্যাথা কমে। এছাড়া সাঁতার, সাইক্লিংও উপকারী। ভারোত্তলন করতে পারেন তবে খেয়াল রাখতে হবে বেশি ওজন তোলা যাবে না।ব্যায়ামের শুরুতেই বা শুরুর দিনেই একাধারে অনেক্ষন না করে প্রথম প্রথম ৫ মিনিট এরপর ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট করে বাড়ানো উচিত যতক্ষন না আপনি ৩০ মিনিটে পৌঁছান। আপনি যদি গর্ভবতি হওয়ার আগে থেকেই ব্যায়ামে অভ্যস্থ হন তবে গর্ভবতি হওয়ার পরও তা চালিয়ে যেতে পারেন যেমনটি আগে করতেন। চালিয়ে যেতে পারেন ততক্ষন যতক্ষন আপনার ভাল লাগছে বা আপনার ডাক্তার এটাকে সমর্থন করছেন।

ব্যায়ামের পূর্বে বা পরে লম্বা হয়ে শুয়ে দম নিয়ে নিন। পর্যাপ্ত তরল পান করুন যাতে পানিশুন্যতা দেখা না দেয় এবং সতর্ক থাকুক ব্যায়ামে যাতে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে না যায়। এমন ব্যায়াম করবেন না যাতে আপনি চরমভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। কোন কোন ব্যায়াম করবেন আপনি যদি না জানেন কোন ব্যায়ামটি আপনার জন্য উপযুক্ত তাহলে আপনার ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে জিজ্ঞ্যেস করুন। এমন কোন ব্যায়াম করবেন না যাতে পিঠে ভর দিয়ে দীর্ঘক্ষন শুয়ে থাকতে হয় বিশেষ করে যখন আপনি গর্ভের মাঝামাঝি। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোনধরনের ভারী ব্যায়াম করা যাবে না যেমন স্কিইং, ডাইভিং, স্কেটিং ইত্যাদি। ফুরফুরে থাকুন যদি ভাল লাগে তবে লেগে থাকুন আর প্রাত্যহিক কাজের সূচিতে ব্যায়ামকে রাখুন। এক্ষেত্রে নীচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেনঃ অল্প থেকে শুরু করুন – আপনার জিমে যাওয়ার দরকার নাই বা দামি ব্যায়ামের পোষাকের দরকার নাই। বাসাতেই কিংবা কোন খোলা জায়গায় শুরু করুন। একজন সংগী নিন – ব্যায়ামটা আরো উপভোগ্য করার জন্য সম্ভব হলে একজন সংগী নিতে পারেন। ভাল হয় আপনার পরিবারের কাউকে কিংবা পরিবারের সবাইকে নিতে পারলে।
ব্যায়ামের সময় গান শোনা – যদি আপনার অভ্যেস থাকে তবে হেডসেট ব্যবহার করতে পারেন এবং এমন সব গান শুনুন যাতে আনন্দ পাওয়া যায়, উজ্জীবিত থাকা যায়।

উপযুক্ত অফারটি বেছে নিন – আজকাল অনেক জিম বা ফিটনেস কেন্দ্রে গর্ভবতি মায়েদের ব্যায়ামে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে যদিও আমাদের দেশে হাতে গোনা কিছু ফিটনেস কেন্দ্র আছে। যেখান থেকে আপনি আপনার জন্য উপযুক্তটি বেছে নিতে পারেন।সৃজনশীল কিছু করা – নিজেকে কোন একটিতে বৃত্তবন্দী করে রাখবেন না। একঘেয়ে ব্যায়াম ভাল না লাগলে গানের সাথে সাথে নাচতেও পারেন।নিজেকে বিশ্রাম দিন – গর্ভধারণ অবস্থায় যতই দিন যাবে আপনার শরীর আরো বেশি করে বিশ্রাম চাইবে। কাজেই চাহিদামত ব্যায়ামের পরিমানও কমিয়ে দিতে হবে। কখন বন্ধ করবেন শরীরের ভাষা বুঝুন। বিপদ সংকেত গুলো চিনে নিন যে কখন আপনাকে ব্যায়াম বন্ধ করতে হবেঃ মাথাঘোরা, মাথাব্যাথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুকে ব্যাথা, পেটে ব্যাথা, যোনীপথে রক্তপাত ইত্যাদি। ব্যায়াম বন্ধ করার পরও লক্ষন গেলে ডাক্তারের দ্বারস্থ হোন।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি পর্ব – ৬: গর্ভধারণ অবস্থায় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য – কোমলকারকের ব্যবহার মহিলাদের গর্ভকালীন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য একটি অত্যন্ত কঠিন ও বিরক্তিকর সমস্যা। এই সময়ে অনেকের ক্ষেত্রে পায়খানা কোমলকারক বা Stool Softener ব্যবহার করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এটি সাধারনত নিরাপদ। এটি পায়খানা নরম করে এবং বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। এর সক্রিয় উপাদানসমূহ শরীরে শোষিত হয় না। ফলে মায়ের পেটে বাড়ন্ত বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় না। তারপরেও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সমস্যায় পায়খানা কোমলকারক কিংবা অন্যান্য ল্যাক্সাটিভ জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে অনেক সময় লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

যেমনঃ প্রচুর তরল পান – কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করার ভাল উপায় পানি। এছাড়া ফলের রস বিশেষ করে আলুবোখারার রস এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
দৈনন্দিন কাজে সূচীতে শারীরিক পরিশ্রম – শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম হয় এমন কাজ করুন। যেমন হাঁটা, উন্মুক্ত ব্যায়াম ইত্যাদি। এগুলো কোষ্ঠ্যকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবার তালিকায় রাখুন – আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফল, শীম, দানাদার শস্য ইত্যাদি আপনার খাবার তালিকায় রাখুন। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে Fiber Supplement গ্রহন করতে পারেন। আপনি যদি আয়রন বড়ি খান তবে আপনার কোষ্ঠ্যকাঠিন্য বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অবশ্য আয়রন গর্ভধারণ অবস্থায় অত্যন্ত জরুরী একটি উপাদান। যদি ৩ দিন পর্যন্ত আপনার পায়খানা না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী পায়খানা কোমলকারক বা Stool Softener ব্যবহার করতে পারেন।

গর্ভধারণ অবস্থায় মাথাব্যথা: গর্ভধারণ অবস্থায় মাথাব্যথা একটি সাধারন উপসর্গ। নানাধরনের ঔষধ আছে যা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। তবে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমনঃ মাথাব্যথা হয় এমন কিছু এড়িয়ে চলুন – আপনার খাবার, দৈনন্দিন কাজ এবং মাথাব্যথা এগুলোর উপর নজর রাখুন। দেখুন কোন জিনিসটি আপনার মাথাব্যথার কারন। সেটি এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিনের কার্যাবলীতে ব্যায়াম রাখুন। চাপকে নিয়ন্ত্রনে রাখুন – দৈনন্দিন কাজে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। অযথা বা অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিন। শিথীলায়ন (Relaxation Techniques) চর্চা করুন। যেমন দীর্ঘ শ্বাস (Deep Breathing), যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি। পর্যাপ্ত তরল গ্রহন করুন। প্রচুর পানি পান, ফলের রস, বা অন্যান্য তরল খাবার গ্রহন করুন। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কারন অবসাদ আর অপর্যাপ্ত ঘুম মাথাব্যথার অন্যতম কারন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।

শরীর-মন থেরাপি – শরীর-মন বোঝার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন ও ব্যবহার করতে শিখুন। এর মাধ্যমে মাংসপেশির খিঁচুনি, হৃদকম্পন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্তরন সহজ হয় আর আপনার মাথাব্যথা প্রতিরোধ করাও সম্ভব। ইচ্ছে করলে আপনি আপনার ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে ও Biofeedback Therapist এর স্মরনাপন্ন হতে পারেন। মাথাব্যথা হলে কী করবেন বিশ্রাম – আলোহীন বা কম আলোযুক্ত নিরিবিলি ঘরে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন শুয়ে থাকুন। সেঁক দেওয়া – গালে, চোখের উপর, কপালে, ঘাড়ে তোয়ালে কিংবা নরম কাপড় দিয়ে গরম সেঁক দিতে পারেন। মালিশ করা – কাউকে দিয়ে কাঁধ, ঘাড়, হাতের তালু ইত্যাদি মালিশ করিয়ে নিতে পারেন। এগুলোর কোনটিতে যদি উপশম না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, ঔষধ সেবন করুন। আপনি চাইলে হারবাল মেডিসিনও ব্যবহার করতে পারেন। গর্ভধারণ অবস্থায় স্তন্যদান সাধারনত গর্ভধারণ অবস্থায় স্তন্যদানে কোন সমস্যা নাই – যতক্ষন পর্যন্ত আপনি পর্যাপ্ত খাবার ও তরল গ্রহন করছেন। স্তন্যদানকালীন সামান্য প্রসাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে যা স্বাভাবিক গর্ভধারনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নয়। তবে আপনার যদি প্রসব পূর্ব তীব্র ব্যাথার ইতিহাস থাকে, বা জরায়ু ব্যাথা বা রক্তক্ষরনের অভিজ্ঞতা থাকে তবে আপনার ডাক্তার আপনাকে স্তন্যদানে নিরুৎসাহিত করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় স্তন্যদান বিষয়টি আপনার স্বস্তি বা আরামের উপরও নির্ভর করে। কারন গর্ভাবস্থায় স্তন ও স্তনের বোঁটায় অস্বস্তি ও ব্যাথা অনুভূত হতে পারে। এটি স্তন্যদানে বেড়ে যেতে পারে। আবার গর্ভকালীন অবসাদও এক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারে। আর যদি স্তন্যদান চালিয়ে যেতেই হয় সেক্ষেত্রে খুব কাছের কারো সাহায্য আপনার একান্ত দরকার সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ তো নিতেই হবে।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি পর্ব – ৭: গর্ভধারণ অবস্থায় যৌনমিলন গর্ভধারন করতে হলে আপনাকে যৌনমিলন করতেই হবে এটা শাশ্বত কথা। কিন্তু গর্ভাবস্থায় যৌনমিলন নিয়ে আমাদের সমাজে অনেকেই দোদুল্যমান থাকেন। আসুন, জানা যাক গর্ভধারণ অবস্থায় যৌনমিলন নিয়ে কিছু কথা।
গর্ভাবস্থা স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে গেলে গর্ভাবস্থায় যৌনমিলনে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু গর্ভের প্রথম দিকে অনেকেরই হরমোনের ওঠানামা, অবসাদ, বমি বা বমিভাব আপনার যৌন আকাংখাকে দমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ওজন বৃদ্ধি, পিঠে ব্যাথা বা অন্যান্য সমস্যা এমনকি গর্ভধারণ অবস্থায় অন্যরকম অনুভূতিও আপনার যৌন ইচ্ছা কমাতে পারে। গর্ভ ও অনাগত বাচ্চা নিয়ে যে নতুন একটা সম্পর্ক তৈরী হতে যাচ্ছে কিংবা পরিবারে অন্যদের মাঝে একজন মা হিসাবে তার সম্পর্কে যে ভাবনা ইত্যাদি বিষয়গুলো স্বাভাবিক যৌনমিলনে সাময়িক বাধা হতে পারে। আবার অনেক সময় অনেকের মাঝে একটা ভয় কাজ করে যে যৌনমিলনে বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় কি না। মা হিসাবে তার ভূমিকা কি হবে এই ভাবনাও অনেক সময়ে কাম শীতলতার কারন হতে পারে। গর্ভপাতের ভয় বহু দম্পতি এটা মনে করে থাকেন যে গর্ভধারণ অবস্থায় যৌনমিলন করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, অকাল গর্ভপাত হতে পারে। আসলে যৌনমিলনের দ্বারা এটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অকাল গর্ভপাত সাধারনত ক্রোমজোমের অস্বাভাবিকতা থাকলে কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা গর্ভের বাচ্চার অবস্থানগত সমস্যার কারনে হতে পারে। যৌনমিলনে এর প্রভাব নেই বললেই চলে।

বাচ্চার ক্ষতি হয় কি না গর্ভে বাচ্চা জরায়ুর এমনিওটিক ফ্লুইড দ্বারা সুরক্ষিত থাকে আর জরায়ুর শক্তিশালী পেশি তো সুরক্ষা দেয়ই। কাজেই যৌনমিলন বাচ্চার কোন ক্ষতি করে না। কোন পজিশনে যৌনমিলন নিরাপদ অনেকেই এটা নিয়ে ভাবনায় থাকেন কোন পজিশনটি নিরাপদ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন যে পজিশনে আপনি/আপনারা সবচেয়ে আরামদায়ক মনে করেন, সেটাই করতে পারেন। সবরকম পজিশনই প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে আপনার/আপনাদের ক্রিয়েটিভিটিও কাজে লাগাতে পারেন।কনডম জরুরী কি নাযদি যৌনবাহিত রোগের সম্ভাবনা থাকে যা কিনা আপনার ও আপনার গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে, কিংবা যদি আপনার সংগী/সংগীনির যৌনপ্রদাহ থাকে, আপনি যদি বহুগামী হন বা নতুন সংগী/সংগীনির ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার করতে পারেন।

গর্ভধারণ অবস্থায় কখন থেকে যৌনমিলন করা যাবে না বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই পুরো গর্ভধারণ অবস্থায় জুড়ে যৌনমিলন করতে তেমন বাধা নেই, তবে কিছু কিছু জটিলতার ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার আপনাকে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে বলতে পারেন। যেমনঃ – যদি আপনার প্রসবপূর্ব তীব্র ব্যাথা বা অকাল প্রসবের ইতিহাস থাকে – যদি যোনীপথে রক্তক্ষরন হতে থাকে – যদি গর্ভথলী ছিদ্র হয়ে এমনিওটিক ফ্লুইড বের হতে থাকে
– পরিপূর্ন হবার আগেই যদি যোনীপথ খুলে যায় – প্লাসেন্টা যদি যোনীপথকে আংশিক বা পুরো ঢেকে ফেলে ইত্যাদি। বাচ্চার জন্মের কতদিন পর যৌনমিলন করা যাবে যোনীপথে স্বাভাবিক প্রসব হোক কিংবা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমেই হোক আপনার দেহকে পূর্ন স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে সময় দিতে হবে। তবে ডাক্তাররা বলেন চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। এই সময়ের মধ্যে আপনার দেহ বিশেষ করে যোনী এবং অন্যান্য অংগ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পায়। যখন আপনার দেহ যৌনমিলনে জন্য রেডি, শুরু করুন ধীরে এবং সাথে সাথে আরেকটি গর্ভধারণ অবস্থায় না চাইলে আপনার জন্য প্রযোজ্য জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

জেনে নিন গর্ভধারনের খুঁটিনাটি পর্ব – ৮: গর্ভধারন এবং ধুমপান: ধুমপান সবসময়ের জন্য একটি বদ অভ্যাস। গর্ভধারণ অবস্থায় আর ধুমপান কখনো খাপ খায় না। তবে ধুমপান ছাড়ার জন্য গর্ভধারনকালীন সময়টাকে একটু সচেতনভাবে আপনি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত। ধুমপান সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে: ধুমপানের ঝুঁকিসমূহ সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত – দূর্গন্ধযুক্ত পোষাক আর ত্বকের ভাঁজ থেকে শুরু করে হৃদরোগ আর ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত। আপনি যদি ধুমপায়ী হন আর গর্ভবতী হয়ে থাকেন অথবা গর্ভধারন করতে চান, তবে অবশ্যই আপনাকে ধুমপান ছাড়ার ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে। কারন ধুমপান গর্ভধারনকে জটিল করে তুলতে পারে। ধুমপান অনেক সময় জরায়ুর বাইরে গর্ভধারনের মত জটিল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। সাধারনত ফ্যালোপিয়ান টিউবে এটি হয়ে থাকে। আর এটাকে Ectopic Pregnancy বলে।

গর্ভধারণ অবস্থায় ধুমপান গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে গর্ভাবস্থায় ধুমপানে গর্ভস্থ বাচ্চা বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যা বাচ্চার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহে বাধার সৃষ্টি করে। তামাকের নিকোটিন বাচ্চার হৃদকম্প বা হার্টবিট বাড়িয়ে দিতে পারে এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ধুমপান আরো যেসব ক্ষতি করতে পারে তার মধ্যে আছেঃ যোনীপথে রক্তপাত: যোনীপথ প্লাসেন্টা দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ন ঢেকে যাওয়া, প্রসবের পূর্বেই জরায়ু থেকে প্লাসেন্টার আলাদা হয়ে যাওয়া কম ওজনসম্পন্ন বাচ্চার জন্ম বাচ্চার থলি বা ‘এমনিওটিক স্যাক’ এর প্রসবপূর্ব অকাল ছিদ্র যা দিয়ে এমনিওটিক ফ্লুইড বেরিয়ে যেতে পারে। এটি প্রসবের পূর্বে এমনকি গর্ভধারনের ৩৭ সপ্তাহের মাথায় ঘটতে পারে।
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই প্রসব বেদনা শুরু অকাল প্রসব জন্মকালীন সমস্যা নিয়ে বাচ্চার জন্ম যেমন হৃদযন্ত্রের সমস্যা, হাত-পা, মাথার খুলি, পেশি ও অন্যান্য অংগের সমস্যা ইত্যাদি। গর্ভধারন সমস্যা ও বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা গর্ভকালীন ধুমপান গর্ভস্থ বাচ্চার আরো যেসব ক্ষতি করে যেগুলো জন্মের পর লক্ষন দেখা দেয় তার মধ্যে আছেঃ – বাচ্চার হঠাৎ মৃত্যু – পেটের শুলবেদনা – এজমা – শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ – শৈশবকালীন স্থুলতা ইত্যাদি।

কোন কোন বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেন যে গর্ভধারণ অবস্থায় ধুমপান বাচ্চার পরবর্তি জীবনে আবেগ-আচরন উন্নয়ন, ও শেখার আগ্রহকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি বাচ্চার পরবর্তি জীবনে তার সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।গর্ভাবস্থায় পরোক্ষ ধুমপানের ক্ষতি
গর্ভধারণ অবস্থায় পরোক্ষ ধুমপানেও গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। ঐসব মহিলা যারা নিজেরা ধুমপান করেন না কিন্তু প্রতিনিয়ত ধুমপান দ্বারা আক্রান্ত হন যা পরোক্ষ ধুমপান হিসাবে বিবেচিত, তাতে তাদের গর্ভধারনে সমস্যা হতে পারে, বাচ্চা নষ্ট হতে পারে। আবার গর্ভবতী হলেও বাচ্চা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে বা কম ওজনের হতে পারে।গর্ভাবস্থায় ধুমপান ত্যাগে বাচ্চার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমেআপনি যদি ধুমপায়ী হন অন্যদিকে সুস্থ-সবল বাচ্চার জন্ম দিতে চান, তা’হলে গর্ভধারণ অবস্থায় ধুমপান ছেড়ে দেয়া হবে উত্তম কাজ। আপনি যদি গর্ভের প্রথম চার মাসের মধ্যে ধুমপান ছেড়ে দেন তবে তা কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দেয়ার আশংকাকে কমিয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় ধুমপান ছেড়ে দিলে তা অকাল প্রসবের ঝুঁকি কমায়, বাচ্চা নষ্ট হবার ঝুঁকি কমায়, শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় এবং অন্যান্য জটিলতা কমাতে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় ধুমপান ছাড়ার নিরাপদ কৌশল: কোন ঔষধ গ্রহন ছাড়াই গর্ভধারণ অবস্থায় ধুমপান ছাড়া সম্ভব। এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনাকে ভাল পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন। তবে সাধারনভাবে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা যেতে পারেঃ – আপনি কেন ধুমপান ছাড়বেন তার একটা তালিকা প্রস্তুত করুন। যেমন ধরুন আপনার গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট হতে পারে। – ধুমপানের উপকরনসমূহ হাতের নাগালের বাইরে রাখুন-কি ঘরে, কি কর্মস্থলে বা ব্যাগে কিংবা গাড়ীতে। – এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন যা আপনাকে ধুমপানে উদ্দিপ্ত করতে পারে। – এমন লোকের সংগ নিন যিনি বা যারা ধুমপান করেন না বা এমন স্থানে ভ্রমন করুন যেখানে ধুমপান নিষিদ্ধ। – কোন কিছু পাওয়ার জন্য বা খাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়া থেকে বিরত থাকুন। – ধুমপান ছাড়ার পর উইথড্রাল সিম্পটম্প দূর করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শমত ব্যায়াম করতে পারেন।
– এমন কাউকে বেছে নিন যার কাছ থেকে প্রয়োজনে সহায়তা নিতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ধুমপান নিরোধক দ্রব্য ব্যবহার কি নিরাপদ: আপনি যদি গর্ভধারণ অবস্থায় ধুমপান ছাড়তে খুব সমস্যায় পড়েন তাহলে ধুমপান নিরোধক দ্রব্য সম্পর্কে আপনার ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে জানতে পারেন। যেমন নিকোটিন প্যাচ, নিকোটিন ইনহ্যালার, নিকোয়িন গাম, লজেন্স কিংবা নাকের স্প্রে ইত্যাদি। এগুলোর যেকোনটির ব্যবহার আপনার শিশুকে সিগারেটের ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারে। তবে এগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনার ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সংগে আলোচনা করুন কিভাবে এর থেকে উপকৃত হওয়া যায় এবং ঝুঁকি কমানো যায়।ধুমপান ছেড়ে দেয়া বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সহজসাধ্য নয়। একবারের চেষ্টায় তো নয়ই, অনেকবারের চেষ্টায় ভাল ফল আশা করা যায়। মনে রাখবেন, একবার যদি আপনি এটা করতে পারেন তবে তার সুফল ভোগ করবে আপনার পুরো পরিবার।

Exit mobile version