জিও পলিটিক্স বলে একটা কথা আছে জানেন তো। কাগজে কলমে হিসাব করে কখনো বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বোঝা যায় না। পৃথিবীর বড় দেশগুলো যদি ছোট দেশগুলোকে গিলে খেতো তাহলে পৃথিবীতে সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ,কিউবা নামের দেশগুলোর অস্তিত্ব থাকতো না। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধের প্রথমে বলা হচ্ছিল রাশিয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরো ইউক্রেন দখল করে ফেলবে। তাহলে আড়াই বছরেও রাশিয়া কেন ইউক্রেন দখল করতে পারছে না??
এইবার আসি আসল কথায়। ভারত বাংলাদেশকে আক্রমণ করবে কিনা?? আমার উত্তর হচ্ছে- না। কারণ,
- জেনেভা কনভেনশনের প্রটোকল অনুসারে একটি দেশ কখনো অন্য একটি দেশে হামলা করতে পারে না যতক্ষণনা পর্যন্ত সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরে হামলা করেনি। তাহলে ভারত কোন যুক্তি দিয়ে বাংলাদেশ আক্রমণ করবে??
- ভারত নিজেকে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। শুধু আঞ্চলিক শক্তি বললে ভুল হবে বরং বিশ্ব রাজনীতির একটি পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তারা। এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে ভারতের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। এ মুহূর্তে এশিয়ায় চীন ছাড়া ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার মত অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি অন্য কোন দেশের নেই। ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে মনে করা হলেও পাকিস্তানের অর্থনীতির শক্তি সে পরিমাণ নেই যেটা দিয়ে সে ভারতের মতো বড় একটা দেশকে মোকাবেলা করতে পারে। বাংলাদেশ আক্রমণ করে ভারত সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে চাইবে না। তাছাড়া এই যুদ্ধ যে দীর্ঘস্থায়ী হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে!! যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
- বাংলাদেশ আক্রমণ করা হলে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে। চীন এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে এ অঞ্চলে সক্রিয় হবে। সেক্ষেত্রে এই সাত রাজ্যে স্বাধীনতার বিষয়টি হয়ে দাঁড়াবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই ভারত বাংলাদেশ আক্রমণের ঝুঁকি নেবে না।
- বাংলাদেশ আক্রমণ করে ভারতের লাভ কি?? বাংলাদেশে কি মূল্যবান কোন সম্পদ আছে?? এখানে না আছে তেলের খনি বা স্বর্ণ। গ্যাস যা আছে তার অধিকাংশ বাংলাদেশেরই চাহিদা মেটাতে পারে না। তাহলে ভারত পাবে কোথা থেকে!! তার উপর ১৮ কোটি মানুষের বোঝা কেনো নিতে যাবে ওরা।
- নেহেরু ডক্টরইন অনুসারে ভারতের আশেপাশের দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে হলে দেশগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক এবং পররাষ্ট্রনীতি যাতে ভারতীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটার জন্য সামরিক অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না। বরং এই সব দেশে ভারতপন্থী সরকারকে ক্ষমতায় বসালে এ কাজগুলো করা অনেক সহজ হবে। তাতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। এ কারণে ভারত সরাসরি বাংলাদেশে কখনো হামলা করবে না। আর করলে সেটা ভারতের জন্য হবে একটা পলিটিক্যাল ডিজাস্টার।