রেজওয়ান আলী বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ-ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার রতনপুরের জমিদার বাড়ি। প্রায় যুগ যুগ ধরে কালের বিবর্তনে দাঁড়িয়ে আছে উক্ত জমিদার বাড়ির চিত্র। দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে পরিদর্শনে ভিড় জমান অনেক পর্যটক। পর্যটক গণ অনেকে ভবনের ভেতর ও পরিদর্শন সহ সেলফি তোলার ধুম পড়ে যায়। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন,এই জমিদার বাড়িটি অনেক দিনের পুরনো। অকেজো অবস্হায় পড়ে আছে। এরই চিত্র প্রদর্শনে আসেন অনেক পর্যটক গণ। এটি যদি সংস্কার করা হয় তবে পূর্ণ ভাবে গড়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র। অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিরামপুরসহ আশপাশের অঞ্চল গুলোতে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য ব্রিটিশরা ফুলবাড়ী জমিদারের পক্ষে রাজকুমার সরকারকে রতনপুর কাচারিতে পাঠানো হয়। কিন্তু রাজকুমারের মেধা আর কৌশল তাঁর ভাগ্যের চাকা বদলে দেয়। রাজকুমারের খাজনা আদায়ে পারদর্শিতা ও নৈপুণ্যে জমিদার সাড়ে ছয় শ বিঘা জমি উপহারসহ তাঁর নিজের বোনের সঙ্গে রাজকুমারের বিয়ে দেন। সৌভাগ্যক্রমে সাধারণ খাজনা আদায়কারী থেকে তিনি জমিদারের আসন পান।রতনপুর জমিদারবাড়ির পরবর্তী অধ্যায়ে উত্তরাধিকারী হিসেবে পিতার মৃত্যুর পর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে একমাত্র পুত্র রখুনী কান্ত বাবুই পৈতৃকসূত্রে জমিদারি লাভ করেন। রখুনী কান্ত বাবু জমিদার থাকাকালীন সময়ে তাঁর বাড়িতে ১০০টি বিড়াল পুষেছিলেন,যে বিড়াল গুলোর দুধের বাটি দিলেও দুধ পান করত না যতক্ষণ পর্যন্ত মনিবের হুকুম না পেত। জমিদার রখুনী কান্তর দরবারে প্রতিবেশী কেউ গেলে প্রস্থানের পর উক্ত স্থান ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হতো। জমিদারের কোনো সন্তান ছিল না। ১৯৭১ সালে এ দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে জমিদার রখুনী কান্ত বাবু স্ত্রীকে নিয়ে একটি মহিষের গাড়িতে করে রাতের আঁধারে কলকাতায় তাঁর বংশধরদের কাছে চলে যান। বর্তমানে জমিদারবাড়িটিতে ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। যেটি ৩ নম্বর খানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন,মাদ্রাসা,মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর। এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন,প্রাচীন জমিদারবাড়িটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি সংস্কার করা হলে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে জেলা পরিষদকে জানানো হয়েছে। আশা করছি,এটি সংস্কারের পর জেলা পরিষদ ডাকবাংলো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়িটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ফলে বিরামপুরের এই অংশে পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।।