মদ খাওয়ার লাইসেন্স নিয়ে বিতর্ক

আইনে এই বয়সের শর্তটি ছিল না।”

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের নতুন বিধিমালার কয়েকটি ধারা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই বিধিমালায় বলা হয়েছে “২১  বছরের নিম্নের কোনো ব্যক্তিকে  মদ্যপানের জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না”।

 

কেউ কেউ এটাকে ব্যাখ্যা করছেন এভাবে যে,”বাংলাদেশে ২১ বছর বয়স হলেই মদ পানের লাইসেন্স পাওয়া যাবে।”

“আবার কোনো এলকায় ১০০ জন পারমিটধারী মদপানকারী থাকলে ওই এলাকায় বিক্রির লাইসেন্স দেয়া হবে” বিধিটিও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে,”বিধিমালার ওই শর্তগুলোর অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারণ মদ পানের পারমিট পাওয়া আইনেই শর্ত সাপেক্ষ। বরং বয়স আরো একটি নতুন শর্ত হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে বিধিমালায়। আর বিক্রির লাইসেন্স পেতে ১০০ জন পারমিটধারীর শর্তটি আগে বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রচলিত ছিলো।

বাংলাদেশে কারা পান মদ খাওয়ার পারমিট

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুয়ায়ী মুসলিম ছাড়া বাংলাদেশে বসরবাসরত বিদেশি, অন্যধর্মের অনুসারী যাদের ধর্মে মদ পান নিষিদ্ধ নয়, বিশেষ পেশা যেমন চা শ্রমিক, পরিচ্ছন্নকর্মী তারা শর্তসাপেক্ষে মদ পান করতে পারেন। ইসলাম ধর্মে মদ পান নিষিদ্ধ বিধায় সাধারণ বিবেচনায় তারা মদ পানের পারমিট পান না। তবে শর্তসাপেক্ষে স্বাস্থ্যগত কারণে মদ পানের পারমিট দেয়া হয় মুসলিমদের। বিধিমালা তৈরির আগে পারমিটের ব্যাপারে বয়সের কথা উল্লেখ ছিলোনা। বিধমালায় শর্ত সাপেক্ষে পারমিট পেতে হলেও কমপক্ষে ২১ বছর বয়সী হতে হবে।

‘যতই শর্ত থাকুক তাতে তরুণদের মধ্যে মদ্যপানে উৎসাহ বাড়তে পারে’

তারা যা বলেন:

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুস সবুর মন্ডল জানান,”মুসলামান ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীরা মদ পান করতে পারবেন কিন্তু পারমিট নিতে হবে। আইনে এটা আগে থেকেই আছে। কিন্তু এখন বিধিমালায় সর্বনিম্ন বয়স ২১ বছর করা হয়েছে। এর কম বয়স হলে পারমিট পাবেন না। মুসলিম হলে তাকে সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র লাগবে স্বাস্থ্যগত কারণে পারমিট নিতে। তাদেরও বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। আইনে এই বয়সের শর্তটি ছিল না।”

বিধিমালায় মদ উৎপাদন, বিক্রি, বিলাতি মত আমদানি, কাঁচামাল আমদানি, দেশি এবং পাহাড়ি এলাকায় মদ তৈরির বিষয়ও স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে কোনো এলাকায় মদ বিক্রির লাইসেন্স পেতে হলে ওই  এলাকায় কমপক্ষে ১০০জন পারমিটধারী মদ্যপায়ী থাকতে হবে।

এই বিধিমালায় মদের বার, মদের দোকান, পরিবহণ, বারের কর্মচারী সব বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। আবদুস সবুর মন্ডল বলেন,”আগে আমরা মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ওই এলকায় কমপক্ষে ১০০ জন পারমিটধারী থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিতাম। কিন্তু সেটা বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে এটা এখন বিধিমালায় অন্তর্ভূক্ত করা হল।”

তিনি বলেন,”এই বিধিমালা নিয়ে এখন পর্যন্ত বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। ২১ বছর হলেই সবাই মদ পানের পারমিট পাবেন এই কথা যারা বলছেন তারা ঠিক বলছেন না। এখানে সব কিছুই শর্তসাপেক্ষ। তবে বিধিমালাটি নতুন। আমরা পাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গেলে বুঝতে পারব কোনো জটিলতা আছে কী না।”

‘অমুসলিমরা মদ পান করতে পারবেন, তবে পারমিট নিতে হবে’

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন,”বিধিমালায় আপাতত কোনো সমস্যা দেখছি না। বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী আগেও মদ খাওয়ার পারমিট দেয়া হতো। এটা দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত এখনো আছে। তবে আমি মনে করি বয়স  নির্দিষ্ট করে দিয়ে সেটা আরো নিয়ন্ত্রণ করা হলো। এটা হয়তো যারা মদ খেতে চান তাদের জন্য কিছুটা সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

তিনি বলেন,”যেখানে সেখানে মদের বার খোলার বিরুদ্ধে আমরা জনস্বার্থে একটা রিট করেছি হাইকোর্টে। বিধিমালায় যে ১০০ পারমিটধারীর শর্ত যুক্ত হয়েছে তাতে বার খোলার বিষয়টি অবারিত হয়নি বরং নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।”

তবে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল মনে করেন,”২১ বছর বয়স নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি। যতই শর্ত থাকুক তাতে তরুণদের মধ্যে মদ্যপানে উৎসাহ বাড়তে পারে। যদি বয়সের বিষয় শর্তে থাকে তাহলে তা ৩০ বছর হতে পারে। তার আগে শর্ত সাপেক্ষেও মদ পানের অনুমতি দেয়া ঠিক বলে আমি মনে করি না। আর ১০০ জন পারমিটধারী এক হলেই মদ বিক্রির লাইসেন্স পাবেন তাও ঠিক মনে করি না। তাহলে তো অনেক মদের বার হয়ে যাবে। বাংলাদেশে অনেক বিদেশি এখন আসছেন। বিনিয়োগ বাড়ছে। জনসংখ্যাও বাড়ছে। তাই বিক্রির লাইসেন্স বাড়তে পারে। কিন্তু ওইভাবে হলে সবাই লাইসেন্স নিতে চাইবে।”

বিধিমালায়  বলা হয়েছে, যারা মদ পানের পারমিট পাবেন তারা একবারে তিন ইউনিট এবং মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিট মদ কিনতে পারবেন। এক ইউনিট হলো ৭৫০ মিলি লিটার সমপরিমাণ মদ।

বাংলাদেশে এখন ১২১টি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ১৬৫টি মদের বার রয়েছে।

Exit mobile version