মান্দায় ভূয়া তথ্য দিয়ে আদিবাসীর সম্পত্তি রেজিস্ট্রিঃতোলপাড়

তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দার  ভারশোঁ ইউনিয়নের (ইউপি) এক আদিবাসী পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা মুল্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা অনুযায়ী আদিবাসীর জমি অন্য কেউ কিনতে চাইলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন। কিন্ত্ত রাজশাহী শহরের বিএনপি মতাদর্শী জনৈক আব্দুর রশিদ আদিবাসীকে সনাতন ধর্মাবলম্বী সাজিয়ে আদিবাসীর জমি রেজিষ্ট্রি দলিল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনা জানাজানি হলে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁর  মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মৌজায় ১২৪৪ নম্বর দাগে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে।
বিগত ১৯৯৯ সালে রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানার রানীনগর এলাকার মৃত এরশাদ আলীর পুত্র আব্দুর রশিদ আদিবাসীকে সনাতন ধর্মাবলম্বী সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এসব জমি রেজিষ্ট্রি দলিল করে নিয়েছে। যার দলিল নম্বর ৪৯৩৬/১৯৯৯ ইং তারিখ ৩০/৫/১৯৯৯।
এদিকে আব্দুর রশিদ সেখানে দখল নিতে পারবেন না সেটা উপলব্ধি করে দোকান ঘর তৈরী করেন। পরবর্তীতে উপজেলার ভাঁরশো ইউপির কালীসফা গ্রামের মৃত কিশোরী মোহন সাহার পুত্র জীবন সাহার কাছে ভাড়া দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান,  ঠিকাদার আব্দুর রশীদ দোকান ভাড়ার কথা বলে জীবন কুমার সাহা নামের এক যুবককে দিয়ে আদিবাসীর জমি জোরপুর্বক দখলে রেখেছেন। তারা বলেন, ক্রয়সূত্রে ওই জমির প্রকৃত মালিক কালীসফা গ্রামের আদিবাসী মৃত বিমল ওরাও এর পুত্র যোনা ওরাও। কিন্ত্ত ঠিকাদার আব্দুর রশীদ জমিটি দখলে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বী জীবন কুমার সাহাকে নামমাত্র মুল্য ভাড়া দিয়েছে। তার উদ্দেশ্যে বিএনপি সরকার গঠন করা মাত্র তিনি সেখানে দখল নিবেন। প্রকৃত মালিক যোনা ওরাও জায়গার দখলে নিতে পারছেন না।
এদিকে এই জমি নিয়ে ভারশোঁ ইউপিতে একাধিকবার সালিশ-দরবার হয়েছে।
সেখানে উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে আব্দুর রশিদের কাগজ ক্রটিপুর্ণ হওয়ায় তাকে জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্ত্ত সে জমি না ছেড়ে ভাড়াটে জীবন সাহাকে
দিয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। ফলে জমির মালিক হয়েও যোনা ওরাও তার জমি দখলে নিতে পারছেন না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুর রশীদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ওই জমি ক্রয় করেছেন। কিন্তু আদিবাসীর জমি ডিসির অনুমতি ব্যতিত কি ভাবে ক্রয় করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আদিবাসীর
কাছে থেকে না হিন্দুর কাছে থেকে ওই জমি কিনেছেন।
এবিষয়ে ক্রয়সূত্রে জমির প্রকৃত মালিক
দাবিদার যোনা ওরাও বলেন,ঠিকাদার আব্দুর রশীদ আদিবাসীকে হিন্দু সাজিয়ে জমি ক্রয় করেছেন,আবার দখল নিতে ব্যবহার করছেন হিন্দু সম্প্রদায়কে। তিনি বলেন, সে কিভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি ডিসির পারমিশন ছাড়া রেজিস্ট্রি করলেন। আবার অর্থের বিনিময়ে জমির খারিজ খাজনাও করেছেন। তিনি আরো বলেন,জমিটি তিনি তাদের আদিবাসীর কাছে থেকে ক্রয় করেছেন। আর আব্দুর রশীদ সেই আদিবাসীদের হিন্দু সাজিয়ে জমি কিনেছেন বলে জমি দখল করে আছেন। তিনি বলেন, আমরা আদিবাসী মানুষ তাকে জমি ছাড়ার কথা বলতে গেলে সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি রাজশাহী কোর্টে আমার নামে বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাকে হাত-পা ভেঙে নদীতে ফেলবে বলে হুমকি দেন। যার জন্য আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডিও করেছি। তিনি বলেন,
আমরা আদিবাসী মানুষ জায়গা কিনেও দখলে নিতে পারছি না, আবার থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পাচ্ছি না,তাহলে কি আমরা আদিবাসী বলে ঠিকাদার আব্দুর রশীদের টাকার জোরে কোথাও বিচার পাবো না। স্থানীয় আদিবাসীরা এবিষয়ে সাংসদ, ভুমি মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।#
তানোর প্রতিনিধি
Exit mobile version