মিরসরাই প্রতিনিধি
মিরসরাইয়ে গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক চুরির ঘটনায় দিশেহারা হয়ে উঠে মানুষ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, গরু, ঘর বাড়ি কিছুই রেহাই পায়নি সংঘবদ্ধ চোর দলের কবল থেকে। অবশেষে পুলিশ চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান চালিয়ে নেপথ্যে থাকা মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টায় মিরসরাই থানায় মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইফতেখার হাসান আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন। এসময় পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা অনেক শক্তিশালী চোর-ডাকাত সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা চট্টগ্রামকে ৪ ভাগে ভাগ করে সিন্ডিকেট তৈরি করে গণহারে চুরি সংঘটিত করতো। তারা দিনের বেলায় নির্দিষ্ট এলাকা গিয়ে ছক কষতো। রাতে সুযোগ বুঝে চুরি সংঘটিত করতো। তাদের মূল টার্গেট ছিলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর এবং ইউনিয়ন পরিষদ দপ্তর।
জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাতে সচিবের কক্ষ ও ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের তালা ভেঙ্গে আলমারীতে থাকা ২ টি সরকারী ল্যাপটপ, ১ টি রাউটার চুরি করে নিয়ে যায়। পরদিন ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিপ্লব ভট্টাচার্য বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় মামলা (নং-২৩) দায়ের করেন। এরপর ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়নের মলিয়াইশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ ও শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে তালা ভেঙ্গে সরকারী ১ টি ল্যাপটপ, ১ টি স্মার্ট ফোন, নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। একইদিন একই ইউনিয়নের সুফিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষের আলমারীর তালা ভেঙ্গে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষ থেকে সরকারী ১ টি ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে যায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৯ নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মাদারবাড়ীয়া গ্রামের জনৈক কুনা মিয়ার বসতঘরের সামনে উঠান থেকে ফাহাদুল হকের মোটরসাইকেল (নং-ফেনী ২-১২-৫৩০৬) চুরি হয়ে যায় এবং একইদিন একই ইউনিয়নের মজহারুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিসের তালা ভেঙ্গে ২ টি সরকারী ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে রাতের আঁধারে চুরির ঘটনায় মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ইফতেখার হাসান ও মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেনের নেতৃত্বে আসামীদের গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধারে দফায় দফায় অভিযান চালায়। অবশেষে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের সামনে থেকে চোরাই মোটরসাইকেলসহ সন্দ্বীপ উপজেলার ২ নং গাছুয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মৃত রুহুল আমিনের পুত্র হুমায়ুন কবির প্রকাশ কবির হোসেন (৪০) একটি ব্যাগসহ গ্রেফতার করা হয়। হুমায়ুনের সাথে থাকা অপর মোটরসাইকেল আরোহী রুবেল পালিয়ে যায়। এসময় হুমায়ুনের দেহ তল্লাশী করে ১ টি দেশীয় বন্দুক, ২ রাউন্ড সীসা কার্তুজ, ১ টি লোহার তৈরী ছোট শাবল, ১ টি হ্যাকস রেডসহ ফ্রেম, ১ টি মোবাইল ফোন, ১ টি ১০০ সিসি ডিসকভার মোটর সাইকেল, নগদ ৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর হুমায়ুনকে মিরসরাই থানা এলাকার বিভিন্ন স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদে চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আসামীদের নাম প্রকাশ করে। পরবর্তীতে হুমায়ুনের দেওয়া তথ্যমতে সিএমপি বায়োজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার ৫ নং অম্বলনগর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের অম্বলনগর গ্রামের সিরাজুল হকের পুত্র দেলোয়ার হোসেন এবং চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকার মৃত অজুদ ভূঁইয়ার পুত্র আক্তারুজ্জামান রাজুকে (৩২) গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ দেলোয়ারের বাসা থেকে মিরসরাই থানা ও জোরারগঞ্জ থানা এলাকা হতে বিভিন্ন সময় চুরি ও ডাকাতি করে নেওয়া ১০ টি চোরাই ল্যাপটপ, ১ টি মোবাইল উদ্ধার করে। এদের বিরুদ্ধে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানা ও মিরসরাই থানায় চুরি, ডাকাতি ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জনকে রবিবার আদালতে নেওয়া হয়। আমরা তাদের থেকে আরো তথ্য পেতে বিজ্ঞ আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন করবো।’
৩৬ লাখ টাকাসহ এলজিইডি প্রকৌশলী আটক
নাটোর: নাটোরের সিংড়ায় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলামের কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার...