রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: প্রত্যেক শিশুর জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যাশায় সরকার সারা দেশে ৫ হাজার ক¤িপউটার ল্যাব ও ৩ শত স্কুল অব ফিউচার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আগে আরও ল্যাব ৮ হাজার করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে। গত বছরের ১৮ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামীণ এ বিদ্যালয়টির ছাত্রছাত্রীরা এখন মানসম্মত শিক্ষায় দক্ষ হয়ে উঠছে। ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন জয় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এক সময় অবহেলিত বিদ্যালয়ে এখন নতুন একাডেমিক ভবন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, স্মার্ট বোর্ড ব্যবহার করে পাঠদান করানো হচ্ছে। ওয়েব ক্যামেরা ও সিসি ক্যামেরা সবকিছু মনিটরিং করার পাশাপাশি হাজিরা মেশিনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল সুবিধা পেয়ে খুশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নে পাইকান গ্রামে ১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ছোঁয়া লেগেছে এ বিদ্যাপীঠে। ৫৩ বছরে পদার্পণ করা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৮ শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। স্বনামধন্য এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। সাবেক ছাত্রদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাত্রবন্ধু ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে সুদক্ষ শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদ। এক সময় পিছিয়ে থাকা গ্রামের অজপাড়াগাঁয়ে ১৯৭০ সালে মরহুম রইচ উদ্দিন মন্ডলসহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর নানা প্রতিবদ্ধকতা পেরিয়ে এখন বিদ্যালয়টি মিঠাপুকুর উপজেলার প্রথম সারির একটি বিদ্যালয়। সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনায় স্কুলটি এখন পাইকান উচ্চ বিদ্যালয় শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার নামে পরিচিত। বিদ্যালয়টির তিনতলা বিশিষ্ট নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনের প্রবেশমুখে বড় একটি নামফলক দেখা যায়, একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেছেন এইচএন আশিকুর রহমান এমপি। ভবনটির প্রতিটি শ্রেণি কক্ষের গেটে রয়েছে স্মার্ট হাজিরা মেশিন। যেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকায় প্রধান শিক্ষক অফিসে বসেই ক্লাসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এ ছাড়াও রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব সেখানে ছাত্রছাত্রীরা ক¤িপউটার শিখতে পারেন। প্রতিটি ক্লাস রুমে লাগানো স্মার্ট বোর্ডে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়াটা গল্প মনে হলেও বাস্তবে সবকিছুই রয়েছে এ বিদ্যালয়ে। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমগুলোর মধ্যে এ্যাসেম্বলি, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজ, বিতর্ক, দেয়াল পত্রিকা এবং ব্যতিক্রমী আয়োজন বিজ্ঞান ও গণিত মেলা সর্বস্তরে প্রশংসা পেয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে অর্জন করেছে একাধিক পুরস্কার যেগুলো বিদ্যালয়ের আলমারিতে স্মৃতি হয়ে আছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওমুন নুহান নদী বলেন, আমাদের ক্লাসে যারা লেখাপড়ায় ভালো পারে তাদের সঙ্গে যারা কম পারে তাদের একসঙ্গে করে গ্রুপ করা হয়। গ্রুপ লিডার সবাইকে কঠিন বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেন। কোনো সমস্যা হলে স্যারেরা বুঝিয়ে দেন, এভাবে সবাই শিখতে পারি। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিনুল ইসলাম বৈশাখ বলেন, স্যারেরা যখন স্মার্ট বোর্ডে ক্লাস নেয় তখন খুব ভালো লাগে। খুব সহজে বুঝতে ও আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারি। আধুনিক ড্রেস, চারপাশে ফুলবাগান করলে আরও ভালো হতো। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেবাশীষ রায় বলেন, স্মার্ট বোর্ডে ক্লাস করতে ভালো লাগে। স্যার যখন ক্লাস শুরু করেন তখন একটা বিষয় ভালোভাবে বোঝার আগেই ক্লাসের টাইম শেষ হয়ে যায়। তখন সমস্যা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান বলেন, সারা দেশে ৩শ সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি করে বিদ্যালয়কে পাইলটিং প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলায় আমাদের স্কুলকে এইচ এন আশিকুর রহমান, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শিক্ষা অফিসারের সহযোগিতায় আমাদের শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার অর্থাৎ প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য মনোনীত করা হয়। আমরা যা পেয়েছি সেটা যথাযথ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে প্রত্যেক ক্লাসে পত্রিকা দেওয়া হয়। তারা টিফিনের সময় পত্রিকা পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে এবং তা উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। তারা নিজেরাই যেন বলতে এবং লিখতে পারে এবং ভয় দূর হয়। এভাবেই বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মিঠাপুকুর উপজেলায় একমাত্র পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচারের কার্যক্রম চলছে। উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল ল্যাব হতে পারে। শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার হওয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়টিতে শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচারের কার্যক্রমের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি’র দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৭
নাটোর প্রতিনিধি: এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাটোরের বড়াইগ্রামের রাজ্জাক মোড়ে বিএনপি’র দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে...