রংপুর বিভাগের আলু চাষিরা চরম বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টার
কম দামে আলু বিক্রি করায় চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। বেশি দামে আলু বীজ ক্রয় করে আলু চাষ করে কম দামে আলু বিক্রি করায় উৎপাদনের খরচ তুলতে পাচ্ছে না কৃষক। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার এক আলু চাষি বলেন, ৫২ টাকা কেজি দরে বীজ ক্রয় করে আলু চাষ করে সেই আলু বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি। মরণ ছাড়া হামার কৃষকের কোনো পথ নাই। বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আলু চাষে খরচ অনেক বেড়েছে। ভরা মৌসুমে আলুর দাম কমে যাওয়ার ভয়সহ চলতি শৈত্যপ্রবাহের কারণে রয়েছে ক্ষতির শঙ্কাও। এ কারণে আগাম রোপণ করা আলু বিক্রি না করে উপায় নেই। দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না, বরং বিঘাপ্রতি প্রায় ২২ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি বছর ১ লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলসহ রংপুর জেলাতেই চাষ হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে আগাম আলুর চাষ হয়েছে অন্তত ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। সব মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ লক্ষ টন আলু। রংপুরের পূর্ব ইছলীর নাদের আলী বলেন, তিন বিঘা জমিতে গ্রানুলা জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। ১৫ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারের কাছে বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ৫২ টাকা কেজি দরে ২০০ কেজি বীজ রোপণ করতে ১০ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে। সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, সেচসহ আলু তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। তিন মাসের জন্য জমি লিজ বাবদ দিতে হয়েছে আরও ৬ হাজার টাকা। সব মিলে খরচ হয়েছে ৫১ হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি শতকে এক বস্তা (৬০ কেজি) আলু হিসেবে প্রতি বিঘা জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৯৮০ কেজি। ১৫ টাকা কেজি হিসাবে যার মূল্য দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৭০০ টাকা। সেই হিসাব মোতাবেক ২১ হাজার ৭০০ টাকা লোকসান হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা কাক্সিক্ষত আলুর দাম পাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে আলুর দাম। কেজিপ্রতি ২৫ টাকা খরচ করে ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বিঘাপ্রতি তাঁদের বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক ও দিনমজুরের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আলুর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী আলু বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনছেন তাঁরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর আলুতে ভাল লাভ হওয়ায় এবার আলু চাষ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। ঠাকুরগাঁও সদরের বেগুনবাড়ি এলাকার কৃষক মনসুর আলী বলেন, চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি (৫০শতক) খরচ হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আগাম জাতের এক বিঘা (৫০শতক) জমিতে আলু উৎপাদিত হয়েছে ৩ হাজার কেজি। প্রতি কেজি আলু ক্ষেতে ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। সেই হিসাবে ৩ হাজার কেজি আলু বিক্রি হয় ৫৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার পাঁচ বিঘা জমিতে লোকসান হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। একই এলাকার কৃষক নুর হোসেন বলেন, চলতি বছর আলু বীজ ও সার বেশি দামে ক্রয় করতে হয়েছে। ফলে বাজারে ১৮ বা ২০ টাকা দরে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। চলতি বছরে আলু চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ৮ হাজার ৩৩২ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলুর দাম ভাল পেয়েছে কৃষক। গত বারে ভাল দাম পেয়ে চলতি মৌসুমে বেশি আলু চাষ করে বিপদে পড়েছে চাষিরা।

Exit mobile version