বেরোবি প্রতিবেদক
রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ঐতিহ্য পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
রবিবার (১০.১১.২৪) রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানায়। এরই অংশ হিসেবে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগদান করে।
প্ল্যাকার্ডগুলোতে “ভর্তি পরীক্ষা চাই”, “লটারি নয়, মেধার মূল্যায়ন চাই” ইত্যাদি স্লোগান লেখা ছিল। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, মেধার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে সচল রাখা প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, দীর্ঘদিনের মেধাভিত্তিক ভর্তির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হোক এবং লটারির মাধ্যমে ভর্তির বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল করা হোক।
বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, বিশেষ করে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে, ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে, মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই পদ্ধতির অধীনে, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। অভিভাবকদের অনলাইনে আবেদন করতে হয়, এবং পরে লটারি কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফী জান্নাত অন্তু বলেন, “লটারি পদ্ধতিতে সুষ্ঠু মূল্যায়নের অভাব রয়েছে। অনেক যোগ্য এবং মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা ছিল, তারাও এই পদ্ধতিতে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। লটারি ভিত্তিক ভর্তির মাধ্যমে প্রাপ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ হারাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে বলে অভিমত তার।”
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা আরও বলেন যে, ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং এই প্রক্রিয়ায় তাদের মানসিক শক্তি ও দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব। লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি করেছে এবং তারা মনে করছেন, ভর্তি পরীক্ষার ঐতিহ্য পুনরায় চালু করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, মহামারির সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে লটারি পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। তবে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের বিষয়ে তারা গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন এবং ভর্তির ক্ষেত্রে একটি সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও কার্যকর সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাভিত্তিক মূল্যায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। আন্দোলন চলমান থাকায় ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।