শবে বরাতের ইতিহাস

শবে বরাত ফারসি ভাষার শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত। আর ‘বরাত’শব্দের অর্থ, মুক্তি, শান্তি, সৌভাগ্য। আরবিতে একে বলে লাইলাতুল বরাত, সৌভাগ্য রজনী। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, মহান আল্লাহ এ রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।

শবে বরাত পালন কবে থেকে শুরু হয়েছে–এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। ছবি: সংগৃহীত

এ রাত মহিমান্বিত এক রাত। এ রাতে অসংখ্য বান্দা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করেন। প্রতিবছর হিজরি ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করা হয়।

শবে বরাতের ইতিহাস

শবে বরাত পালন কবে থেকে শুরু হয়েছে–এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা রা. বলেছেন, একদিন গভীর রাত্রে রসুলুল্লাহ সা. নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ পড়ার সময় তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘ সেজদা করেন। এভাবে দীর্ঘ সেজদা করতে দেখে, হজরত আয়েশা রা. এর ধারণা হয়, রসুলাল্লাহ সা. হয়তো নামাজ পড়তে গিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।

 

হজরত আয়েশা রা. তখন তার সন্দেহ দূর করার জন্যে রসুলুল্লাহ সা. বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ধরে নাড়া দেন। তাতে রসুলাল্লাহ সা. আঙুল নাড়িয়ে সাড়া দেন। এরপর রসুলাল্লাহ সা. সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে হজরত আয়েশা রা. কে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি ধারণা, আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? হজরত আয়েশা রা. তখন উত্তরে বলেন, না, ইয়া রসুলুল্লাহ। 

 

আপনার দীর্ঘক্ষণ সেজদা করা দেখে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আপনি হয়তো ইন্তেকাল করেছেন? তাই আমি আমার সন্দেহ মেটানোর জন্য আপনার আঙুল নেড়ে, আপনাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম আপনি জীবিত আছেন কি না।

নবীজি তখন আয়েশাকে রা.-কে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জানো, আজকের রাতটি কী রাত? আয়েশা তখন নবীজিকে বলেন, আল্লাহ ও তার রসুলই আমার অপেক্ষা ভালো জানবেন আজেকের রাতটির তাৎপর্য কী?

তখন রসুলাল্লাহ সা. বললেন, আজকের রাতটি হলো অর্ধ শাবানের রাত। মহান আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার সব প্রার্থনা মনোযোগ সহকারে শোনেন। যারা ক্ষমাপ্রার্থী তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর যারা অনুগ্রহপ্রার্থী তাদের অনুগ্রহ করেন, তাদের বরকত প্রদান করেন। আর যারা বিদ্বেষ পোষণকারী, তাদের ক্ষমা না করে তাদের নিজের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।

ইসলাম ধর্মে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত আনন্দ উৎসব করার জন্য আল্লাহ তাআলা দেননি। ইবাদতের জন্য দিয়েছেন। শাবান মাস রমজানের আগের মাস। রমজান মাস ছাড়া এ মাসে নবীজি সবচেয়ে বেশি রোজা রেখেছেন।
সাহাবায়ে কেরাম নবীজিকে বললেন আগেকার যুগের উম্মত দীর্ঘ হায়াত বা জীবন পেতো, আমরা তো অল্প কয়েকদিন বাঁচি, তারা ইবাদতের দিক দিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে যাবেন। তখন নবীজিকে আল্লাহ এমন কিছু রজনি দিয়েছেন, এ রজনীগুলোতে ইবাদত করলে অনেক অনেক সওয়াবের ভাগীদার হওয়া যায়।
এমন কিছু রাতের মধ্যে শবে বরাতের রাত, শবে কদরের রাত, দুই ঈদের রাত ও আশুরার রাত। এ পাঁচ রাতের ইবাদত হাজার রাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এভাবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শেষ নবীর উম্মতদের অন্যান্য উম্মতদের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
Exit mobile version