রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস ‘রমজান’ আমাদের মাঝ থেকে চলে গেল। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাত্রই আরবি হিজরি সনের রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
কারণ আরবি হিজরি সনের ৯ম মাস রমজানে রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের পরিমাণ বহুগুণ বেশি।
তাছাড়া রোজার পুরষ্কার মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে প্রদান করবেন। হাদিসে আছে ‘সিয়াম আমারই জন্য এবং এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব’। (সহিহ বুখারি)
দীর্ঘ এক মাসে রোজা রাখার উপহারস্বরূপ আল্লাহ তাআলা আমাদের এত নেয়ামত দেবেন। তাহলে একবার চিন্তা করুন তো রোজা রাখবার কারণে যে ফজিলত ও রহমত আমরা পাই সেটা যদি বাকি ১১ মাসে পাওয়া যেত তাহলে কতই না ভালো হতো।
কিন্তু ৩৬৫ দিন রোজা রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمْ ۚ وَخُلِقَ الْإِنسَانُ ضَعِيفًا ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে (বিধান) সহজ করতে চান, আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বল করে’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ২৮)
তাই মন খারাপ বা হতাশ হবার কিছু নেই। রাসুল (সাঃ) এর সহজ সমাধান আমাদের দিয়ে গেছেন।
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরো ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল’। (মুসলিম: ১১৬৪; আবুদাউদ: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ-আলবানি)
চান্দ্র মাস হিসেবে তিন’শ চুয়ান্ন বা তিন’শ পঞ্চান্ন দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। (সূরা: আনআম, আয়াত: ১৬০)। এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে তিন’শ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট চুয়ান্ন বা পঞ্চান্ন দিনের জন্য আরো ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন’।
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারবো? তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে’, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাব (তিরমিযি)
শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সেহরির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সেহরি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)
রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ। সুতরাং ফরজ রোজা কাজা করার আগে নফল রোজা রাখতে পারবেন। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না’। (বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬)
হাদিসমতে, শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নাত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আকদ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নাত। কারণ মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববীতেই হয়েছিল। (মুসলিম)
শুভ কাজের শুভসূচনার জন্য এ মাস খুবই উপযোগী। এ মাসে বিভিন্ন ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মবর্ষ শুরু করে থাকে। ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি ও নব পাঠদান শুরু করে।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে অনুরূপ আরো আমল করার তাওফিক দান করেন। নেক আমলের প্রতিদানের একটি রূপ হলো আবার আরো নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোজা, তেলাওয়াত ও অনন্য ইবাদত–বন্দেগি বাকি ১১ মাসও বজায় রাখতে হবে।