সন্তান প্রসবের পর তিন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে—
১. পোস্ট পার্টাম ব্লু: শিশুর জন্মদানের শারীরিক ও মানসিক ধকল এবং হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সন্তান জন্মদানের ২-৩ দিন পরই প্রায় ৮৫ শতাংশ মা পোস্ট পার্টাম ব্লুতে আক্রান্ত হন। এই সময় অকারণে কান্নাকাটি, আবেগের ওঠানামা, খিটখিটে মেজাজ, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ক্লান্তির লক্ষণগুলো দেখা দেয়। সাধারণত লক্ষণগুলো কয়েক দিন থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে পরিবার এবং আপনজনদের সহায়তাই যথেষ্ট। তবে যদি লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, সে ক্ষেত্রে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
২. পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন: সন্তান জন্মদানের এক মাসের ভেতরেই বিষণ্নতার লক্ষণগুলো এদের মধ্যে দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো পোস্ট পার্টাম ব্লুয়ের মতো মনে হলেও এই রোগের লক্ষণগুলো অনেক বেশি দীর্ঘমেয়াদি এবং যন্ত্রণাদায়ক। এর ফলে আক্রান্তের দৈনন্দিন কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হতে থাকে।
দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ লাগা, কোনো কাজে আগ্রহ বা আনন্দ না পাওয়া, সদ্যোজাত সন্তানের প্রতি মায়া বা আকর্ষণ কমে যাওয়া, ঘুম ও ক্ষুধাহীনতা অথবা উল্টো অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অকারণ অপরাধবোধ এবং প্রায়ই কান্নাকাটি করা এই রোগের লক্ষণ।
রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নিজেকে আঘাত করার চিন্তা এমনকি মৃত্যুচিন্তা পর্যন্ত আসতে পারে। তীব্র অবসাদে আক্রান্ত মা তাঁর শিশুসন্তানটিকেও আঘাত করতে পারেন এমনকি মেরেও ফেলতে পারেন। তাই পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে অতি দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ওষুধ এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
৩. পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস: এই সমস্যাটি আরও বেশি গুরুতর। এতে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো—অস্বাভাবিক আচরণ ও কথাবার্তা, ভ্রান্ত বিশ্বাস (যেমন অকারণে সন্দেহ), হ্যালুসিনেশন (অদৃশ্য ব্যক্তিদের কথা শোনা), অকারণে হাসা এবং বিড়বিড় করে কথা বলা, ঘুম না হওয়া, সদ্যোজাত শিশুর যত্ন নিতে না পারা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
পরিবারের সদস্যদের করণীয়
প্রসবপ্রক্রিয়া (স্বাভাবিক অথবা সিজার) এবং সদ্যোজাত শিশুসন্তানের লালনপালন করতে গিয়ে একজন মায়ের ওপর সীমাহীন শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের সহায়ক ভূমিকা পালন করা দরকার। এতে প্রসব-পরবর্তী মানসিক জটিলতা কমে।
১. সন্তান পালনে নতুন মাকে সাহায্য করা। দিনের বেলা তাকে কিছুক্ষণ ঘুমানোর সুযোগ করে দেওয়া।
২. মায়ের শরীর ও মন কেমন আছে, তার কোনো সাহায্য দরকার কি না, আন্তরিকভাবে জিজ্ঞাসা করা ও খোঁজ নেওয়া।
৩. গৃহস্থালি কাজের (যেমন রান্না, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়া) ভার কমিয়ে নতুন মাকে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
৪. সমস্যা বেশি মনে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
পরিবারের সদস্যরা যা করবেন না
১. সারাক্ষণ শিশু পালনের ব্যাপারে মায়ের ভুল ধরবেন না, সমালোচনা করবেন না।
২. অন্য মায়েদের সঙ্গে তুলনা করবেন না ।
৩. নতুন মা তাঁর মানসিক সমস্যার কথা জানালে সেটা তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেবেন না।