চার বছর পর অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবারও শুরুটা হলো অসহায় আত্মসর্মপণে। ক্যারিবীয় বোলিং তোপে প্রথম দিন মাত্র ৩২.৫ ওভার স্থায়ী হয়েছে সফরকারীদের প্রথম ইনিংস। গুটিয়ে গেছে মাত্র ১০৩ রানে।
গতবারের চেয়ে স্বস্তির বিষয়টা হলো এবার আর সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় পড়তে হয়নি। সেবার রোচের তোপেই বাংলাদেশ সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবেছিল। তবে ডাক মেরে লজ্জায় ফেলেছেন ৬ ব্যাটার।
২০১৮ সালের সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব আল হাসান। এবার অবশ্য অধিনায়কত্বের ভার নিয়ে ধ্বংসস্তূপে একাই লড়াইটা চালিয়ে গেছেন।
শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে পেসারদের সহায়তা পাবে, তা অনুমিতই ছিল। এবারও পেসার কেমার রোচই কাঁপিয়ে দেন বাংলাদেশকে। যার ফিটনেসের কারণে খেলারই কথা ছিল না।
প্রথম ওভারে রোচের বাড়তি বাউন্সারে ধোঁকা খান জয়। বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে বনারের হাতে। তাতে রানের খাতা না খুলেই ফিরেছেন এই তরুণ। তৃতীয় ওভারে রোচের গতিময় প্রথম বলটিতো স্টাম্প উপড়ে দিয়েছে শান্তর। তার বিদায়ে ৩ রানে পতন হয় দ্বিতীয় উইকেটের।
নতুন নামা মুমিনুল হক নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েও ভাগ্য বদলাতে পারেননি। জেইডেন সিলসের লাফিয়ে ওঠা বল বুঝতেই পারেননি তিনি। বল ব্যাটের কানায় লেগে দ্বিতীয় স্লিপে তালবুন্দি হয়েছেন। ৬ বল খেলা মুমিনুল ফিরেছেন কোনও রান না করেই।
৩ উইকেট পড়ে গেলেও তামিম-লিটনকে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। দুজনে মিলে যোগ করেন ২৫ রান। কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে কপাল পুড়ে তামিমের। আলজারি জোসেফের লেগ স্টাম্পের বাইরের নির্বিষ বলটি অযথাই খেলতে গিয়েছিলেন। ফলাফল জশুয়া ডা সিলভার হাতে জমা পড়েন ২৯ রানে। দারুণ ফর্মে থাকা লিটনও ফিরেছেন শট খেলার তাড়নায়। কাইল মেয়ার্সের মিডিয়াম পেসের টাইট লেংথের বলে এগিয়ে এসে ব্যাট চালাতে গিয়ে গ্লাভসবন্দি হন ১২ রানে।
ওই ওভারে মায়ার্সেরই শিকার হন নতুন নামা নুরুল হাসান সোহান। কোনাকুনি ভেতরে ঢুকে পড়া বল আঘাত করে সোহানের প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে লেগ বিফোরের আবেদন উঠতেই আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। রিভিউ নিলে আম্পায়ার্স কলেই সোহানকে সাজঘরে ফিরতে হয় শূন্য রানে। তার বিদায়ে এটাও নিশ্চিত হয়, প্রথম ইনিংসে লাঞ্চের আগেই ধ্বংস্তূপে পরিণত বাংলাদেশ।
তবে লাঞ্চ বিরতির আগে ৩২ রান যোগ করে লড়াইয়ের আভাস দেন সাকিব-মিরাজ। কিন্তু কে জানতো, বিরতির পর এই প্রতিরোধও ক্যারিবীয় দল গুড়িয়ে দেবে। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারে মিরাজকে সাজঘরে পাঠান জেইডেন সিলস। তামিমের মতো একই রকম ভঙ্গিতে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল অযথা খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ। তাতে ২২ বল খেলা অফস্পিনিং অলরাউন্ডারের লড়াই থামে ২ রানে। পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানও ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সিলসের বলেই।
প্রতিষ্ঠিত শেষ ব্যাটারের ফেরায় সাকিবকে একক দায়িত্বটা কাঁধে নিতে হয় তখন। কিন্তু অপরপ্রান্ত নড়বড়ে হয়ে পড়ায় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তার ইনিংস। যোগ্য সঙ্গী না থাকায় তখনও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা ধরে রাখেন। ধ্বংসস্তূপে তুলে নেন ২৮তম ফিফটিও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নবম। তার ব্যাটিংয়েই স্কোরটা শত রান পার হয়েছে। কিন্তু আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মাশুলও তাকে দিতে হয় ৫১ রানে ক্যাচ উঠিয়ে।
৬৭ বল খেলা সাকিবের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও একটি ছয়। তার বিদায়ে আনুষ্ঠানিক লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটলে একই ওভারে খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে লেজ ছেঁটে দেন আলজারি জোসেফ। সাকিব অবশ্য আরও আগেই ফিরতে পারতেন। ক্যারিবীয় ফিল্ডার তার ক্যাচ নিতে পারেননি।
৮ ওভার বল করে ২১ রনে দুটি উইকেট নিয়েছেন রোচ। মেয়ার্স ৫ ওভার বল করেছেন। দুই মেডেনে ১০ রানে দুটি উইকেট নেন তিনিও। জেইডেন সিলস ৩৩ রানে নিয়েছেন তিনটি। সমান রান খরচ করে আলজারি জোসেফেরও শিকার তিনটি।