সাজানো মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করে মুক্তি ও
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবি
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, গত ২৪শে মার্চ ভোররাতে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার একটি ভাড়া মেস থেকে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় কোতোয়ালি থানা
পুলিশের একটি টিম। আমরা গ্রেফতার হওয়া সেই শিক্ষার্থীদের পরিবার।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আটকের পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। পরে চারিদিকে জানাজানি হলে পুলিশ বিশেষ
ক্ষমতা আইনে দেওয়া একটি মামলায় ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখায়। এরপর আদালতের নির্দেশে তিনদিনের
রিমান্ড শেষে এই শিক্ষার্থীদের জেলে পাঠানো হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এইসব শিক্ষার্থী
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে আয়োজিত এক মিছিলে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে এবং এ
সংক্রান্ত প্লাকার্ড প্রদর্শন করে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতি
ঘটানোর কাজে লিপ্ত ছিল। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে এ সকল শিক্ষার্থীদের কেউই উক্ত মিছিলে অংশগ্রহণ
করেছে বলে পুলিশের কাছে কোন তথ্য-প্রমান নেই, শুধুমাত্র সন্দেহের উপর ভিত্তি করে ঘুমন্ত অবস্থায় গভীর
রাতে একটি মেস থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে এই ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে এই অজুহাতে গত ৪ঠা এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১
শিক্ষার্থীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
শুধু তাই নয়, এরপর তাদের আসামি হিসেবে আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে যা গত বছর অর্থাৎ
২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনের মামলা। অথচ এই সময়ে করোনার কারনে
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের সন্তানেরা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিল। গ্রেফতার হওয়া ১২
শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন চলতি বছরের মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। গত ৮ মার্চ ওরিয়েন্টেশন
ক্লাসে যুক্ত হতে এইসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ জীবনে প্রথম ঢাকায় এসেছে। তাহলে এইসব শিক্ষার্থীরা
ঢাকায় না এসেও কিভাবে ঢাকায় ঘটা একটা মামলার আসামি হল?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনারা দেখেছেন যে, গ্রেফতার হওয়া একাউন্টিং বিভাগের রওশনুল ফেরদৌস রিফাতের
পিতা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ওই সময় তার ছেলে ঢাকায় ছিল না। নীলফামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে
প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর চলতি বছরের ৩রা মার্চ ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে যুক্ত
হতে ঢাকায় আসে। অথচ ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘঠিত একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার
দেখানো হয়েছে, যেসময় সে ঢাকায়ই ছিল না।
শুধু রিফাতের পরিবারই নয়, একই দাবি করেছেন গ্রেফতার হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া
শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান অলির পরিবার। অলির পিতা মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অলির বড় ভাই আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার
বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির
সাথে সম্পৃক্ত। অথচ তার ভাইকে এইরকম সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
২০২১ সালে আমাদের অনেকের সন্তান ঢাকায় ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকে ঢাকায় এসেছে মাত্র ২০ দিন হয়েছে।
তাহলে কেন এক বছর আগের মামলায় তাদের যুক্ত করা হলো?
আপনারা সবাই জানেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোন আবাসিক হল নেই। যার কারণে
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া মেসে থেকে পড়াশুনা করে। সেখান থেকে তাদের ঘুমন্ত
অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সন্তানদের জন্য হলের ব্যবস্থা
করতে পারতো তাহলে আমাদেরকে আজকের এই দিন দেখতে হতো না।
অথচ দেখেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এইসকল শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ানোর কথা সেখানে তারা
বিমাতাসুলভ আচরণ করে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচরণে
খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমরা জানতে চাই কোন আইনে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে?
পুলিশের মিথ্যা মামলা আমলে নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে তাহলে
শিক্ষার্থীরা কার কাছে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই আচরণের কারণে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির
সঞ্চার হয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস পরীক্ষা রেখে মেস ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছে।
সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,
ইতিমধ্যেই আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক আলী রীয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু
মুহাম্মদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এই বহিষ্কার আদেশের নিন্দা জানিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের
মুক্তির দাবী করেছেন। আমরা আশা করবো সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের দ্রুত মুক্তি
দিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবৈধ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করবেন। আমরা আমদের সন্তানদের
ভবিষ্যৎ এবং জামিন পরবর্তী তাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই চিন্তিত।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় আমরা বিচলিত। তারমধ্যে অন্যতম
হচ্ছে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা। তাকেও শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তার দোষ ছিলো সে দেশের
পক্ষে কথা বলেছিল।
শিবির সন্দেহে এই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যা করা হয়েছিল বিশ্বজিৎকে। সে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের
মানুষ ছিলো। কিন্তু বারবার নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পরেও শিবির বলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোর কথা চিন্তা করে আমরাও আমাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমাদের এই
শঙ্কা দূর করতে অবিলম্বে আমাদের সন্তানদের মুক্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার আদেশ তুলে
নিয়ে নিরাপত্তার সাথে তাদের ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আবারও পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই আমাদের সন্তানদের কেউই শিবির বা নিষিদ্ধ কোন সংগঠনের সাথে জড়িত
নয়। অন্যের দায় আমাদের সন্তানদের উপর চাপিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।দয়া করে আমাদের মনের
অবস্থাটা একটু বুঝুন। পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের কাছে
ফিরিয়ে দিন। দয়া করে আমাদের উপর অবিচার করবেন না।
ভুক্তভোগী সকল পরিবারের পক্ষ থেকে এই দাবী জানিয়ে এবং আগত সকল সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে
আমার কথা এখানেই শেষ করছি।