লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় স্বামীকে শিকলে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে এই অভিযোগ করেন ওই নারী। একই দিন বিকেলে তিনি সদর মডেল থানায় গিয়ে ওসি মোসলেহ উদ্দিনকে ঘটনাটি জানান। এর পর পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল সদর উপজেলার চররমণী মোহন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চররমণী গ্রামের বনফুল ব্রিকস কোম্পানিতে (বিবিসি) অভিযানে যায়। সেখান থেকে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ওই নারীর স্বামীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
নির্যাতিত শ্রমিক মো. শাকিল জানান, তার বাড়ি ভোলার ও তার স্ত্রীর বাবার বাড়ি বাগেরহাট। তাদের সংসারে আড়াই বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। তারা চট্টগ্রাম আজিমপাড়ায় থাকেন। প্রায় ৩ মাস আগে ইটভাটাতে শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য উত্তর চররমনী গ্রামের বিবিসি ইটভাটাতে আসে। ইটভাটার পাশে তারা একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে তার ভায়রা ইটভাটা থেকে পালিয়ে যান। এর জেরে গত ৭ মার্চ কাজে এলে ইটভাটার শ্রমিক সর্দার জামাল মাঝি, নিজাম মাঝি ও মিনাজ মাঝি তার কাছে ভায়রার সন্ধান চান। ইটভাটার মালিকরা দাবি করেন, ওই লোকের কাছে তারা টাকা পান। কিন্তু ভায়রার খোঁজ না দিতে পারায় তাকে শিকলে ইটভাটায় বেঁধে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, দীর্ঘসময় ধরে ঘরে না ফেরায় স্বামীকে খুঁজতে ইটভাটায় যান তিনি। এরপর তার স্বামীর কাছে টাকা পাবে বলে জানায় ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। টাকা পেলেই তাকে ছাড়বে। টাকা না দিতে পারলে ভাটার তিন শ্রমিক সর্দারের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পর তিনি ঘরে ফিরে আসেন। ওই দিনই রাতে জামাল মাঝি, নিজাম মাঝি, মিনাজসহ তাদের সহযোগীরা ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণকারীরা তার হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা অগ্রিম কোনো টাকা নেইনি। তবুও তারা আমার স্বামীকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করেছে। আমি ছাড়াতে গেলে তারা আমার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক (ধর্ষণ) করেছে। নিরুপায় হয়ে ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
তবে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিবিসি ইটভাটার তিন শ্রমিক সর্দার জামাল মাঝি, নিজাম মাঝি ও মিনাজ মাঝি। তাদের দাবি, ওই নারী মিথ্যা ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়েছে। এ রকম কিছুই হয়নি।
জামাল মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। আমি কিছুই জানি না।
বিবিসি ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী বাহার উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। আমি ঢাকায় আছি। বিস্তারিত বলতে পারছি না।
লক্ষ্মীপুর মডেল থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, এক নারী এ ধরনের একটি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।