শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার
সৌন্দর্য যে একটা প্যারামিটার। সবসময় বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে লোকে বিচার করে অধিকাংশ সময়ে। বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে যে মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিলে তার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি হয়ে যাচ্ছে দাম্ভিক, আবার যারা এই মাপকাঠিতে নিজেদের মান খুঁজে না পান, তারা হয়ে যাচ্ছেন হতাশ। তারা নিজেরা মানসিক হীনমন্যতায় বিপর্যস্ত থাকে। আর না থেকেই বা উপায় কী! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারীকে সৌন্দর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।
বাহ্যিক সৌন্দর্য মানেই শুধু বাহ্যিক চেহারা বা সাজ-সজ্জা নয়, বরং এটি হলো প্রকৃতির একটি অনন্য দান, যা আমাদের মনকে শান্তি দেয় এবং আমাদের অনুভূতি গুলিকে আরও সংবেদনশীল করে তোলে। একটি সুন্দর ফুলের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের জীবনে আনন্দ এবং প্রশান্তি এনে দেয়। যেমন আমরা ফুলের ছবি বা দেখে মুগ্ধ হই, তেমনই জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সৌন্দর্যের গুরুত্ব অনেক বেশি।
সিনেমার প্রয়োজনে ২৫ বছরের মানুষকে দেখানো হয় ৬০। আবার ঠিক তার উল্টোটিও করা হয়। সেটার অনুসরণে বাস্তব জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটছে। সৌন্দর্য বা আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ করে মেয়েদের বেলায়, যখন বরপক্ষ মেয়ে দেখতে আসে তাকে এমনভাবে সাজানো হয় যা প্রকৃত চেহারা থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত এ অবস্থায় বিয়ে হলে সেটা প্রভাব পড়ে বিয়ের পর সাংসারিক জীবন।
কেট এর লাস্যে একসময় ঢেউ উঠেছিল তামাম দুনিয়ায়। বিশেষত মহা সিনেমা ‘টাইটানিক’ এর পর সারা দুনিয়ার পুরুষ হৃদয়ে বুড়বুড়ি কাটতেন এই ব্রিটিশ সুন্দরী। তার ঘরে শোভা পায় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড‚ এমি‚ গ্র্যামি‚ গোল্ডেন গ্লোব‚ BFTA থেকে সাফল্যের প্রায় সব সর্বোচ্চ মূল্যমান। তিনি কেট উইন্সলেট। যখন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা লিখেন সেসময়ে তার বয়স ছিল ৪০। ঐ চল্লিশে পৌঁছেই নতুন করে উপলব্ধি করেছিলেন সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। নিজের মেকাপহীন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেছিলেন‚ ‘হ্যাঁ‚ আমার মুখে আজ বলিরেখা‚ সেই টানটান ত্বক আর নেই কিন্তু আজ সে সব ছপিয়ে তার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে দেখতে চাই‚ আমার ভিতরের আসল আমিটা কে আলিঙ্গন করতে চাই‚ আর চাই তোমরাও নিজের মধ্যেকার সেই আসল আমিটা কে জড়িয়ে ধরো।’ কেট এর ঐ বার্তায় আলোড়ন উঠেছিল বিশ্বজুড়ে। সৌন্দর্য বোধের এই নবতম উপলব্ধিতে তিনি চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। মেকআপ দিয়ে ঢাকা আসল মানুষকে লুকিয়ে না রেখে‚ কেট বলেছিলেন ‘আজ আমি দুনিয়াকে দেখাচ্ছি আমার মেকআপ ছাড়া ছবি। আমি আজ আমার আসল আমিটা কে জড়িয়ে ধরতে চাই। আমি যেমন তেমন মানুষটা কেই ভালোবাসতে চাই। যদি তুমি নিজেকে ভালোবাসো‚ তবে তুমি যেমন‚ ঠিক সেই মানুষটাকেই ভালোবাসো। কোনো কিছু পরিবর্তন করার দরকার নেই। দুনিয়া তোমাকে ভালোবাসলে তোমার আসল আমিটা কেই ভালোবাসবে‚ নকলটা কে নয়। কেট যা করেছিলেন, একজন সফল নায়িকার ক্ষেত্রে সেটা করতে গেলে লাগে অসম সাহস আর চরম আত্মবিশ্বাস। নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা অনেক মানুষের কাছে কেটের এই বার্তা সৌন্দর্যবোধের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য ত্বকের যত্ন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পরিমিত সাজ-সজ্জা করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের জন্য মানসিক প্রশান্তি, ইতিবাচক চিন্তা এবং নৈতিকতার চর্চাও প্রয়োজন। সত্যিকারের সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন আমরা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। আমরা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের প্রতি যত্নশীল হই, এবং জীবনকে আরও সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলি।