মাতৃভাষা মধুর হোক সর্ব আঙিনায় এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে বাংলাদেশ ভারত নেপাল ইতিহাস মঞ্চের উদ্যোগে ত্রিদেশীয় “বঙ্গ ইতিহাস ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক সম্মিলন ১৪২৯ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার সকাল ১০ টায শিশু কল্যাণ পরিষদ হলে বিজ্ঞ আলোচকগণ বলেছেন, প্রাচীন বঙ্গদেশের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি ও আদিজাতি, নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস পৃথিবীবাসীর কাছে নতুন করে তুলে ধরে আমরা যে প্রাচীন সময়থেকে সমৃদ্ধ জাতিগোষ্ঠী ও আমাদের ঐতিহ্যগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। এই জন্য লেখক গবেষক, কবি সাহিত্যিক, ইতিহাসবেত্তা ও ঐতিহ্য সংরক্ষক সংগ্রাহকদের ভুমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ভারত নেপাল ইতিহাস মঞ্চের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক লায়ন দুলাল কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ভারত নেপাল ইতিহাস মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীনের পরিচালনায় সম্মিলনের উদ্ভোধন করেন বিশিষ্ট কবি, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ জনাব জহুরুল ইসলাম দুলাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, কথাসাহিত্যিক কবি মাজেদা রফিকুন নেসা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, পশ্চিবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক কবি বরুণ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও প্রাক্তন মৎস্য অধিদপ্তরের অধ্যক্ষ সিরাজুল করিম, ভারতের বিশিষ্ট কবি আশুতোষ চক্রবর্তী, নেপালের বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক যর্নাদো বাড়ই, প্রখ্যাত আইনবিদ, মানবাধিকার সংগঠক এডভোকেট মুকুল কান্তি দেব, বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আজাদ পাটোয়ারী,
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি রুখসানা জামান সানু, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক, বিশিষ্ট পুঁথি পাঠক হাসিনা মমতাজ, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বিশিষ্ট কবি আশুতোষ চক্রবর্ত্তী, কবি ও সমাজকর্মী গৌতম সেনগুপ্ত, কবি সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী সুপর্না চন্দ সরকার, সঙ্গীত শিল্পী মিতা চক্রবর্ত্তী, সঙ্গীত শিল্পী সুমন বড়াল, সঙ্গীত শিল্পী নমিতা সেন, আবৃত্তিশিল্পী রঞ্জনা কর্মকার, কবি দীপশিখা চৌধুরী, অধ্যাপক চিন্ময় রায় চৌধুরী, কবি ও গীতিকার অরুপ কুমার বড়ুয়া, কবি স্মরনীকা চৌধুরী, কবি নাজমুল হক শামীম, কবি দেলোয়ার হোসেন মানিক, সঙ্গীত শিল্পী উদয়ন বড়ুয়া ঝুন্টু, কবি দীনেশ মন্ডল, কবি ইমাদ উদ্দিন, কবি মাসুম আহমেদ রানা, মানবাধিকার সংগঠক ও কবি সৈয়দ খায়রুল আলম, ভাষা গবেষক ডা. ম আ আ মোক্তাদীর, মিতালী বড়ুয়া প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেছেন, বাংলা বা বেঙ্গল শব্দগুলির আদি উৎস আজো অজ্ঞাত রয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করা হয় যে শব্দটি বং অথবা বাং নামক একটি দ্রাবিড়ীয়-ভাষী উপজাতি বা গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বং জাতিগোষ্ঠী ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে বঙ্গ বা বাংলায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। সম্মিলনে আরো বলেন, যে শব্দটির উৎপত্তি ভাঙ্গা (বঙ্গ) শব্দ থেকে হয়েছে, যেটি অস্ট্রীয় শব্দ “বঙ্গা” থেকে এসেছিল, অর্থাৎ অংশুমালী। শব্দটি ভাঙ্গা এবং অন্য শব্দ যে বঙ্গ কথাটি অভিহিত করতে জল্পিত (যেমন অঙ্গ) প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে বেদ, জৈন, মহাভারত এবং পুরাণে উল্লেখিত হয়েছে। “ভাঙ্গালা” (বঙ্গাল/বঙ্গল)-এর সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ রাষ্ট্রকূট গোবিন্দ ৩-এর নেসারি প্লেট্সে উদ্দিষ্ট (৮০৫ খ্রিস্ট-আগে) যেখানে ভাঙ্গালার রাজা ধর্মপালের বৃত্তান্ত লেখা আছে। সম্মিলনের গবেষণা প্রবন্ধে আরো উল্লেখ্য যে, আদ্য-অস্ট্রালয়ডেরা একটি বঙ্গের সবচেয়ে প্রথম অধিবাসী। দ্রাবিড়ীয় জাতি দক্ষিণ ভারত থেকে বঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন, যখন তিব্বতী-বার্মিজ জাতি হিমালয় থেকে প্রবেশ করেছিলেন ও ইন্দো-আর্য জাতি প্রবেশ করেছিলেন উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে। যেহেতু জনগোষ্ঠীর গোড়াপত্তনের আপেক্ষিক ক্রম এখন জিন-তত্ত্ববিদগনের গবেষণাধীন, তাই এই বিষয় এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুমান ও গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ কাজ করে সফলতা এনে দিতে পারেন। যদিও বাংলা ভাষা-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে গবেষকগন মনে করেন। অন্যদিকে প্রাচীন চর্যাপদ ও বাঙালী জাতির সাহিত্য সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অন্যতম রূপরেখার গ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্মিলনে বক্তারা পাশতুনেরা, এবং তুর্কীরাদেরও সংমিশ্রণ, যাঁরা এইখানে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতক, তৎপরবর্তীকালে প্রবেশ করেন। ইরানীরা ও আরবিরা মূলতঃ নৌপথে ব্যবসায়িক ও ধর্মপ্রচারের কারণে সমুদ্র উপকূল-সংলগ্ন অঞ্চল কিরাত রাজ্যে (বঙ্গপন্ডু- যেটি আজকের চট্টগ্রাম ) বঙ্গীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশ্রিত হন মধ্যযুগের বিভিন্ন সময়ে। সেই কারণে বাংলা ভাষাভাষীর সাথে ইরানী ও আরবীয় ভাষা মিশ্রন এখনো লক্ষনীয়। তবে চট্টগ্রামের ভাষার সাথে আরবী ও ফার্সিভাষার মিল খুজে পাওয়া যায়। সম্মিলনে বক্তারা ওপার বাংলা ও বাংলাদেশ এর বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক ভাষাগুলো টিকেয়ে রাখার জন্য দুদেশে আঞ্চলিক ভাষা ইনিষ্টিউট ও গবেষণাগার স্থাপনের দাবী করেন। সম্মিলনের শুরুতে মহান মাতৃভাষা বাংলার জন্য শহীদদের আত্মদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।